Hot

দ্বৈত নাগরিকত্বে ঝোঁক বাড়ছে

বাংলাদেশের নাগরিকদের ১০১টি দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইনেই এ সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রী-এমপিরা এ সুযোগ না পেলেও তাঁদের অনেকেই আইন ভেঙে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বড় কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।

আবার যাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার বৈধতা রয়েছে, তাঁদের অনেকেই এ সুযোগ নিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের বৈধ-অবৈধতার মধ্যেও বাংলাদেশি নাগরিকদের ঝোঁক বাড়ছে দ্বৈত নাগরিকত্বে। এরই মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্বের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর সরকারের কাছ থেকে সনদ নেওয়া দ্বৈত নাগরিকের সংখ্যাও ৩৪ হাজারের বেশি।

সনদ নেওয়া দ্বৈত নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দ্বৈত নাগরিকত্বে ঝোঁক বাড়ছে

তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ার পাশাপাশি উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে অনেকেই আইনের সুযোগের মধ্যেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ আবার উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে, কেউ ব্যবসার প্রয়োজনেও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে জানা যায়।

বাংলাদেশের নাগরিকদের কতজন দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন এর সঠিক হিসাব সরকারের কাছে না থাকলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, এটি প্রায় আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে সরকারের কাছ থেকে সনদ নেওয়া এ রকম দ্বৈত নাগরিকের সংখ্যা ৩৪ হাজার ১৫৭ জন।

সূত্র বলছে, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈধভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে থাকেন। এতে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সরকারি চাকরি করে কেউ এ সুযোগ নিতে পারেন না।

এমনকি যাঁরা এমপি বা মন্ত্রী হন তাঁরাও এ সুযোগ নিতে পারেন না। অথচ বাংলাদেশের সাবেক অন্তত ১৪ জন এমপি-মন্ত্রীর তথ্য জানা যায়, যাঁরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব রেখেও অন্য দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এই অবৈধ নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বড় কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানা যায়নি। অন্যদিকে বৈধভাবে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ এমন অনেক দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়া লোক রয়েছেন, যাঁদের ব্যাপারে আইনগতভাবে কোনো বাধা না হওয়ার পরও তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে নানান বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। অনেকের বিদেশ গমনে আপত্তি দিয়ে রাখা হয়েছে। এমন বৈপরিত্যের মধ্যেও দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রবণতা কমছে না।

জানা যায়, সরকারের সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের যাঁরা অবৈধভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাঁদের ধরতে অনুসন্ধান শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য দুদক সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি মিশনে এসব তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে ২৪ জন মন্ত্রী-এমপির বিদেশি নাগরিকত্ব থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের নাগরিকরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব রেখে অন্য ৫৭টি দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারতেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিসর সম্প্রসারিত করে আরো ৪৪টি রাষ্ট্র যুক্ত হয়। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ১০১টি দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ মিলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন শাখার উপসচিব আলীমুন রাজীব কালের কণ্ঠকে জানান, ‘দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য অনলাইন-অফলাইন দুভাবেই আবেদন গ্রহণ করা হয়। পরে সেটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থার পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়াসাপেক্ষে দ্বৈত নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত যাঁরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিতে চান এবং নিজ দেশের নাগরিকত্ব রাখতে চান তাঁরাই দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ নেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ না নিলে তাঁদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এ কারণেও অনেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ নিয়ে থাকেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। কিন্তু এই আইন ভঙ্গ করে এ দেশের সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা অন্য দেশের নাগরিক হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্বের প্রমাণ পেয়েছে দুদুক। সাবেক তথ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী    মোহাম্মদ আলী আরাফাত, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, আব্দুস শহীদ, মানিকগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাজুল ইসলাম, আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। কানাডার নাগরিক হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি আবদুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও হাবিব হাসান। সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব নিয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপানের,  সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির ও ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ ওয়াহেদের পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব রয়েছে। 

জানা গেছে, সালমান এফ রহমান টাকার জোরে গোপনে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নেন। একইভাবে বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব নেন হাছান মাহমুদ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জুনাইদ আহমেদ পলকের যুক্তরাষ্ট্রে ‘গ্রিন কার্ড’ রয়েছে। জানা গেছে, নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল কানাডায় ১৭ লাখের বেশি কানাডিয়ান ডলার খরচ করে বাড়ি কিনেছেন।

১০১ দেশের নাগরিকত্ব নেওয়া যায় : ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশিদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিসর আরো সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আগে নিজ দেশের পাশাপাশি ৫৭ দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ মিলত। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ৪৪টি দেশ। সব মিলিয়ে এখন এ সুবিধার আওতায় এসেছে ১০১টি দেশ।

দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুভাবেই দেখেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ইতিবাচক দিকই বেশি। অনেকে নিরাপদ ও উন্নত জীবন ধারণের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেন। দ্বৈত নাগরিক হওয়া ব্যক্তিদের মাঝে অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন। তাতে অন্য দেশে টাকা কামিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ফলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন। তবে কেউ কেউ এ সুযোগ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, কোনো বাংলাদেশি যদি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলমান রাখতে পারবেন। তিনি বলেন, আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৫৭টি দেশের নাগরিকত্ব নেওয়া যেত। ২০২৩ সালে আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি, আমেরিকা মহাদেশের ১২টি, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি এবং ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দেশকে যুক্ত করা হয়েছে।

দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধায় যুক্ত হওয়া আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ হলো মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস। আমেরিকা মহাদেশের  আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, পেরু, একুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি দেশ হলো—কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোজ, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস। এ ছাড়া ওশেনিয়া মহাদেশের একমাত্র দেশ ফিজি।

প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তানে অবশ্য দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশ তাদের নাগরিকদের অন্য দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports