Bangladesh

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা স্থগিত: ভিসার অপব্যবহারের কারণে ওমানের এমন সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে ওমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে গত দুই বছরে অন্তত তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। তবে দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি তেমন সুখকর নয়। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে যাওয়া বাংলাদেশিরা ঠিকমতো কাজ পাচ্ছেন না। বিপুল টাকা খরচ করে যাওয়া কর্মীরা নিরুপায় হয়ে আইনসম্মত নয় এমন কাজ করছেন। তাই সামগ্রিকভাবে ভিসার অপব্যবহার ঠেকাতে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা দেওয়া স্থগিত করেছে ওমান।

কূটনৈতিক সূত্রে ওমান থেকে গতকাল বুধবার এসব কথা জানা গেছে। রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) গত মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তের কারণ জানায়নি। আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলামের আলোচনার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বলেন, ‘ওমানে লোকজন নেওয়ার ব্যাপারে যে সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল, মানব পাচারকারীরা তার অপব্যবহার করছেন। এর ফলে হয়তো ওমান ভিসা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে কাজ করছেন, এটি বিবেচনায় নিয়ে ওমানকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

রয়্যাল ওমান পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, পর্যটক ও ভ্রমণ ভিসায় যে বিদেশিরা ইতিমধ্যে ওমানে এসেছেন, তাঁদের জন্য ‘ভিসা পরিবর্তন’ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে পর্যটন ও ভ্রমণ ভিসায় ওমানে গিয়ে প্রবাসীরা কর্মী হিসেবে ভিসা নিতে পারতেন। ‘ভিসা পরিবর্তন’ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় যাঁরা কর্মী হিসেবে ভিসা নিতে চান, তাঁদের নিজ দেশে ফিরে কাজের ভিসা নিয়ে ওমানে যেতে হবে। তবে এ সুযোগ বাংলাদেশিদের জন্য থাকছে না। কারণ, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত রয়েছে।

ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ মাসে অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি ওমানে গেছেন। এই মুহূর্তে ওমানে বিভিন্ন দেশের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। যার মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীই সর্বোচ্চ, প্রায় আট লাখ।

ওমানে লোকজন নেওয়ার ব্যাপারে যে সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল, মানব পাচারকারীরা তার অপব্যবহার করছেন। এর ফলে হয়তো ওমান ভিসা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। …ওমানকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভিসার অপব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওমান থেকে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, ওমান কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রত্যেক তরুণের জন্য পাঁচজন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এই সুযোগের অপব্যবহার করছে একশ্রেণির মানব পাচারকারী। চাকরি আছে কি নেই, সেটি যাচাই না করেই বাংলাদেশের লোকজনকে ওমানে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ওইসব লোকজন সেখানে প্রতিশ্রুত কাজ তো নয়ই, কোথাও কোথাও কোনো কাজই পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা পথঘাটে এমন সব কাজ করছেন, যা দেশটির প্রচলিত আইনে বিধিসম্মত নয়। কেউ কেউ আবার বাধ্য হয়ে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশিদের এমন কর্মকাণ্ড ওমান কর্তৃপক্ষকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছে।

মানব পাচারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আরেকটি সূত্র জানায়, কিছুদিন ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়া বাংলাদেশিদের ওমানের উপকূলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছিল। কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের কাছে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলতে শুরু করেছে ওমান।

আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ ব্যাখ্যা না করলেও ভিসার অপব্যবহারের জন্য যে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে, ওমানের সাম্প্রতিক উদ্যোগে সেটি স্পষ্ট।

জানা গেছে, ইরান থেকে ছোট ছোট ট্রলারে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তেল পরিবহন করা হয়। ইরানে ফিরে যাওয়ার পথে সেই ট্রলারগুলো নানা পণ্য পরিবহন করে। লোকজনকে ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে মানব পাচারকারীরা ওই সব ট্রলারে তুলে নেয়। গত কয়েক মাসে ওমানের উপকূল রক্ষা বাহিনী (কোস্ট গার্ড) ওইসব ট্রলারের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে নিয়মিত বিরতিতে ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলাচলকারী ট্রলারে অভিযান চালিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করছে। উদ্ধার করা এসব লোকের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

ওমানের একটি সূত্র জোর দিয়ে বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ ব্যাখ্যা না করলেও ভিসার অপব্যবহারের জন্য যে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে, ওমানের সাম্প্রতিক উদ্যোগে সেটি স্পষ্ট।

তবে ওমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে প্রবাসী আয়ে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন কর্মী যেতে না পারলে পুরোনো যাঁরা আছেন, তাঁরাই প্রবাসী আয় পাঠাবেন। নতুন কর্মী গেলে বাড়তি প্রবাসী আয় পাঠানোর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেটি বন্ধ হয়ে যাবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto