Hot

বাড়ছে জটিলতা : কোথায় যাবেন হাসিনা? ভারত-যুক্তরাজ্যের ‘না’

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন দু’দিন হলো। এখনো নিশ্চিত নয়, তার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় হবে? আপাতত ভারতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। শোনা যাচ্ছে, আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন যুক্তরাজ্যে। কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এর ফলে তার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা রয়েছেন। তাই এসব দেশে আশ্রয় খুঁজতে পারেন তিনি। পাশাপাশি, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

তবে একটি সূত্র দ্য হিন্দুকে নিশ্চিত করেছে, আমিরাতে শেখ হাসিনার আশ্রয়ের অনুরোধ গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

কর্মকর্তারা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে ভারতের একটি ‘সেফ হাউজে’ রয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ রেহানার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তিনি যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি এবং ‘সিটি মিনিস্টার’।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে পৌঁছানোর পরপরই যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যে প্লেনে ভারতে পৌঁছেছিলেন, সেটিতে করেই লন্ডনে যেতে পারবেন।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়, যখন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বাংলাদেশ নিয়ে একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বা তার অনুরোধের কোনো উল্লেখ ছিল না।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী নিয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি রাখে।

অর্থাৎ, কিয়ার স্টার্মারের সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য চাপ দিতে পারে, তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ডেভিড ল্যামির কথায়।

তাছাড়া, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা এনডিটিভি’কে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে ভ্রমণকারী কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক বা সাধারণ আশ্রয় দেওয়ার নিয়ম নেই।

তার কথায়, যাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রয়োজন, তারা দেশ ছাড়ার পর প্রথম যে নিকটবর্তী নিরাপদ দেশে পা রাখছেন, সেখানেই আশ্রয় চাওয়ার কথা। সেটিই তার নিরাপত্তা পাওয়ার দ্রুততম রাস্তা।

যদিও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, বেনজির ভুট্টোসহ বেশ কয়েকজন নির্বাসিত পাকিস্তানি নেতাকে আশ্রয় দিয়েছিল যুক্তরাজ্য।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হতে পারে। এটি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাজ্যের। তাছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দিলে বিএনপিপন্থি প্রভাবশালীদের কাছ থেকেও চাপের মুখে পড়তে পারে ব্রিটিশ সরকার।

ইউরোপে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় গন্তব্য হতে পারে ফিনল্যান্ড। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বসবাস করেন। তার স্ত্রী ফিনল্যান্ডের নাগরিক।

২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় নিউইয়র্ক সফরে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা হেলসিঙ্কিতে বিরতি নিয়েছিলেন এবং রাদওয়ান ও তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন।

ফলে, শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য ফিনল্যান্ড হতে পারে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য অনুরোধ সম্পর্কে ফিনিশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। সেখানে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাস করেন। তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং পেশায় আইনজীবী।

মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য হিন্দু বলেছে, শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কি না তা তাদের জানা নেই। তবে ওই কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, শেখ হাসিনার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিসা রয়েছে, সেটি তার অফিশিয়াল পাসপোর্টে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। যেহেতু তিনি পদত্যাগ করেছেন, তাই ওই ভিসা আর ‘কার্যকর নেই’।

তবে কি ভারতেই স্থায়ী হবেন শেখ হাসিনা? দ্য হিন্দুর মতে, এটিও এতটা সহজ হবে না।

পত্রিকাটি বলছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিকভাবেই সুসম্পর্ক। তাছাড়া, গত এক দশকে মোদী সরকারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে ভারতে থাকছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সেখানে দায়িত্বরত।

এরপরও, নয়াদিল্লি চাইবে, বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৌশলগত, বাণিজ্য ও সংযোগ–সম্পর্কিত অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখতে। সেক্ষেত্রে, পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বিষয়টিকে কঠিন করে তুলতে পারে।

তাছাড়া, বিচার করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে বলে, তাহলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। এই একই কারণে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আশ্রয় আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ভারত।

আবার, শেখ হাসিনা ভারতে থাকলে তার দল আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরাও দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন। তখন, ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে, এমন অভিযোগ উঠতে পারে।

এ অবস্থায় চতুর্থ কোনো দেশে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা হত্যার শিকার হলে একইভাবে ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto