বিশ্বস্ত মিত্রতেই গড়ে উঠছে ‘ট্রাম্পনিবাস’
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব এখনো হাতে না পেলেও জোরেশোরে শুরু করেছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। প্রকাশ পাচ্ছে তার সরকারের গুরত্বপূর্ণ পদে স্থান পাবে-এমন সব ব্যক্তিদের নাম।
বাছাইকৃত ব্যক্তিদের মধ্যেও প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে চমক। তবে বিশ্বস্ত মিত্র ও কাছের মানুষদের নিয়েই গড়ে উঠছে ‘ট্রাম্পনিবাস’। বুধবার নতুন করে এ দলে যুক্ত হলেন ট্রাম্পের প্রচারে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখা মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও। বিবিসি।
ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট ইফিশিয়েন্সি’ নামে নতুন এক পদে যোগ দিচ্ছেন ইলন মাস্ক। তার সঙ্গে থাকবেন প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীও।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘একসঙ্গে এই দুই চমৎকার আমেরিকান আমার প্রশাসনের জন্য সরকারি আমলাতন্ত্রকে খোলস থেকে বের করে আনবেন। অতিরিক্ত বিধিবিধান কমিয়ে আনা, অযথা ব্যয় কমানো ও কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরগুলোর পুনর্গঠনের পথকে প্রশস্ত করবেন।’
অন্যদিকে বিবেকস্বামী যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। পরে প্রাথমিক বাছাইয়ে হেরে যান তিনি। ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নিজ অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান বিবেক। এর পরপরই তিনি ট্রাম্পের পছন্দের তালিকায় চলে আসেন।
তবে নতুন ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট ইফিশিয়েন্সি’-এর কাজ আসলে কী হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কিংবা এ কাজে ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামীর স্বার্থের সংঘাত দেখা দেবে কি না, সেসব নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, সরকারের বাইরে থেকে ‘উপদেশ ও দিকনির্দেশনা’ দেবেন তারা।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক পিট হেগসেথকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানান ট্রাম্প।
পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘পিট একজন বলিষ্ঠ ও স্মার্ট মানুষ। তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (আমেরিকা প্রথম) নীতির একজন সত্যিকারের বিশ্বাসী। শত্রুদের তিনি জানাতে চান, পিটের নেতৃত্বে মার্কিন সামরিক বাহিনী আবার দুর্দান্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে পড়বে না।’
এই ঘোষণার বিষয়ে হেগসেথের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ৪৪ বছর বয়সি পিট হেগসেথ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ চ্যানেল ফক্স নিউজের একজন হোস্ট বা সঞ্চালক এবং তিনি দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। হেগসেথ মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে এবার সিনেট নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হতে পারেননি। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। ২০২২ সালের নির্বাচনে বড় জয় নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সাউথ ডাকোটার গভর্নর নির্বাচিত হন ক্রিস্টি।
করোনা মহামারির সময় নিজের অঙ্গরাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির দায়িত্বে নোয়েমকে বেছে নেওয়া সম্পর্কে জানতে ট্রাম্পের প্রচারশিবির ও নোয়েমের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু দুপক্ষের কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।
দেশটির জননিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষা থেকে শুরু করে অভিবাসন ও দুর্যোগ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো দেখভাল করে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। এছাড়া সিক্রেট সার্ভিসও এই বিভাগের অধীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে সিক্রেট সার্ভিস।
এছাড়া ইসরাইলে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন কট্টর ইহুদিপন্থি হাকাবি। আরাকানসাসের সাবেক গভর্নর এবং রক্ষণশীল রাজনীতিক মাইক হাকাবিকে ইসরাইলের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসাবে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। হাকাবি পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে কট্টর সমর্থক।
বিশ্বের অনেক দেশ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন মনে করে, যদিও ইসরাইল এতে বিরোধিতা করে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তিনি (মাইক হাকাবি) ইসরাইলের মানুষ এবং ইসরাইলকে ভালোবাসেন এবং একইভাবে ইসরাইলের লোকরাও তাকে ভালোবাসেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মাইক অক্লান্ত পরিশ্রম করবে।’ হাকাবি তার ইসরাইলপন্থি দৃঢ় অবস্থানের জন্য পরিচিত।
এই নিয়োগ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ওপর বৃহত্তর রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিফলন ঘটাবে, যেখানে রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর প্রায়ই ইসরাইলের বসতি স্থাপনের অধিকারকে সমর্থন করে।
উল্লেখ্য, আগামী বছর ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।