Hot

বেপরোয়া সিন্ডিকেট, অস্থির বাজার

বেপরোয়া সিন্ডিকেট, অস্থির বাজার – ছবি : সংগৃহীত

ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামরিচের ট্রাক বাংলাদেশের সীমান্তে ঢোকার সাথে সাথে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যটির ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। দু’দিন আগেও যেখানে ১ হাজার টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। সেটি এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।

রোববার (২ জুলাই) বিকেল থেকে আমদানির ট্রাক পৌঁছতেই দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় নামতে থাকে। সামনে দাম আরো কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি নাজির হোসেন বলেন, বাজারের এই অস্থিরতা একটাই বার্তা দিচ্ছে, সেটা হল ব্যবসায়ীরা চাইলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে পারে বা পণ্যের সরবরাহ কমাতে পারে।

এভাবে তারা শক্তি প্রদর্শন করে দাম কমাতে পারে, আবার বাড়াতেও পারে। এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

একই চিত্র দেখা গিয়েছিল গত রমজান মাসে পেঁয়াজের বাজারে। মার্চ মাসে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৩০-৪০ টাকায়। কিন্তু মার্চের শেষ থেকেই দাম ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে জুন মাসের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

মূলত স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষা দিতে ১৬ মার্চ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার পরই দামের ওপর এমন প্রভাব পড়তে দেখা যায়।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাজার পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে এসে নিজেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দেশে চাহিদার চাইতে বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে, যথেষ্ট মজুদ আছে। কোনো সঙ্কট নেই।

অথচ আমদানি বন্ধের দোহাই দিয়ে, সরবরাহ সঙ্কট দেখিয়ে পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল। আবার আমদানির ঘোষণা আসতেই পেঁয়াজের দাম আবার হু হু করে পড়ে যায়।

ব্রয়লার মুরগি, ডিম, চিনি, ভোজ্য তেল, আটা- ময়দা, আদা-জিরাসহ বিভিন্ন ধরণের মসলার বাজারেও বিভিন্ন সময়ে এমন অস্থিরতা দেখা গিয়েছে।

যেসব ভোগ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় সেগুলোর দাম বাড়ার পেছনে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ’, ‘বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি’ ও ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন’ ইত্যাদি নানা দোহাই দেয়া হয়।

আবার দেশি পণ্যের ক্ষেত্রে ‘উৎপাদনে ঘাটতি’র ধুয়া তুলে দাম লাগামহীন বাড়ানো হয়।

যেকোনো উৎসবের আগে এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে বাড়িয়ে দেয়া এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে উৎপাদনে ঘাটতি নয়, বরং অভিযোগের তীর উঠেছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চক্র তাদের ইচ্ছেমত সময় বুঝে সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে, পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে লাগামহীন দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আসলেও সেই জায়গাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

‘সরকার এই কারসাজির সাথে জড়িত কিছু সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পারলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করলে কাউকে আইনের আওতায় আনতে দেখা যায়নি।’

হোসেন বলেন,‘বরং সরকার মনে করছে যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে পরিস্থিতি আরো অস্থির হয়ে উঠবে। এভাবে ওই সিন্ডিকেটকে দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে যে। যার ফলেই বাজারে এই অস্থিরতা। কারণ কারসাজি করলেই তো পার পাওয়া যায়।’

এমন অবস্থায় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো সেইসাথে অসাধূ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

অভিযোগ আছে এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মূলত উৎসবকে টার্গেট করে থাকে, কারণ সে সময় আমদানি সাময়িক বন্ধ থাকে, সরকারি কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকেন।

আবার বছরের যেকোনো সময় সরকারের আমদানি বন্ধের ঘোষণারও সুযোগ নিয়ে থাকেন তারা।

অন্যদিকে ক্রেতা অধিকার সংগঠনগুলো পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা বা বাজার ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছে।

তারা বলছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাবে পণ্যের বাজার পর্যালোচনা করে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি দেখাশোনা করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন-টিসিবি।

বাজারে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টি তদারকি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

এছাড়া কৃষি অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদফরও বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি করে থাকে।

এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার মনিটরিংয়ের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন হোসেন।

এক্ষেত্রে তিনি লোকবলের অভাবের বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, ‘একটি জেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাত্র একজন কর্মকর্তা ও তার এক সহকারী দায়িত্বে থাকেন। তার পক্ষে এতগুলো উপজেলায় ঘুরে ঘুরে বাজার মনিটর করা অসম্ভব। ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাজ করছেন হাতে গোনা কয়েকজন।’

‘তাদেরও কাজের সময়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বিভিন্ন দফতরের সাথে সমন্বয়ের কাজে। তারা বাজার মনিটরিংয়ের মতো সময় পান না। এজন্য আমরা কর্মী নিয়োগ ও লজিস্টিকস সুবিধা জন্য আবেদন করেছিলাম ,কিন্তু সবই থমকে আছে।’

বেশ কয়েকটি এলাকায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু সেটির স্থায়ী ও যথাযথ রূপ এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, কারণ এই নজরদারি শুধুমাত্র খুচরা বাজার কেন্দ্রিক হয়ে থাকে।

কিন্তু পণ্যের লেনদেন শুধু খুচরা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং এটি উৎপাদন, পাইকার, আড়ত পর্যায় থেকেও নিয়ন্ত্রিত হয়।

বর্তমান বাস্তবতায় নিয়মিত বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে সরকারের নজরদারি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও ‌এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় জাতীয় সংসদে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, বড় বড় গ্রুপগুলো একসাথে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বাজারে হঠাৎ যে সঙ্কট তৈরি হবে, সেটা সইতে কষ্ট হবে। এজন্য আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করার কথা জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। তারপরও আমি দায় নিয়ে বলছি আমরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করছি কী করা যায়।’

সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে নানা রকম আশ্বাস দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার দুষ্টচক্রের কব্জায় চলে যায়।

এর ফলে সরকার বিভিন্ন নিত্য-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও ডিউটি প্রত্যাহার, বেসরকারি উদ্যোগে আমদানির সুযোগ বা ভর্তুকি সুবিধা দিলেও সেই সুফল সাধারণ মানুষ পায় না।

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার নিয়ে এত অভিযোগ বিশেষ করে অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কথা বারবার উঠে এলেও সরকারি কোনো হস্তক্ষেপই যেন কাজে আসে না বলে বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা।

এই অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বেপরোয়া নীতির কারণে ভোগ্য পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজার দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দামের এই অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের পেছনে বাজারের সাপ্লাই চেইনটি ইনফরমাল হওয়াকে দায়ী করছেন।

তার মতে, পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে অর্থাৎ কৃষক থেকে হাত বদল হয়ে শহরের আড়তদার, ফড়িয়া, পাইকার, খুচরা পর্যায় হয়ে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরো নেটওয়ার্কটি কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নেই।

এরকম একটি বাজার কাঠামোতে যেকোনো পর্যায়ে, যেকারো পক্ষে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেয়া, হস্তক্ষেপ করা এবং বাজারকে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে বলে তিনি মনে করেন। সেটা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি থেকে শুরু করে, হঠাৎ সব পণ্য ছেড়ে দিয়ে দাম কমিয়ে ফেলাও হতে পারে।

তিনি বলেন, কিন্তু এই বাজার কাঠামো যদি ফরমাল হত তাহলে পুরো সাপ্লাই চেইনে যারা জড়িত তাহলে তারা সবাই নিবন্ধিত হতেন, তাদের লেনদেন, মজুদ, বিক্রির সব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকতো।

মোয়াজ্জেম বলছেন, তাহলে জানা যেত কে কোথায় মজুদ রাখছেন, কী পরিমাণ মজুদ রাখছেন, কী পরিমাণ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বাজারকে অস্থির করে তোলার প্রবণতা কমে আসতো ।

মোয়াজ্জেম বলেন,‘বাজার ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাব, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি, নামে বেনামে পণ্য মজুদ এবং সরকারি নজরদারির অভাবের কারণে বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও দেখা যায় যে, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সুযোগ নেয়া হচ্ছে এবং পণ্য আমদানির ফলে বাজারে দাম পড়ে যাচ্ছে। এই আমদানির কারণে অনেক সময় লোকসানের মুখেও পড়েন উৎপাদক বা সংগ্রহকারীরা।’

এ কারণে কৃষি পণ্যের বাজার কাঠামোকে একটি আইনসম্মত এবং প্রাতিষ্ঠানিক বা ফরমাল কাঠামোয় আনা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তার কথায়, যেখানে পুরো সাপ্লাই চেইনে থাকা প্রত্যেকে নিবন্ধিত থাকবেন, তাদের লেনদেন ডিজিটাল পেমেন্ট বা ফরমাল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে হবে, সেইসাথে পণ্য উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রির সব তথ্য জানার থাকবে।

আবার বড় বড় কোম্পানির মজুদদারি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক দুর্বলতা আছে বলেও জানান খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি জানান, সম্প্রতি চিনি ও তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় কোম্পানির সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেখান থেকেই বোঝা যায় যে আসলে দুর্বলতা কোথায়।

তিনি আরো বলেন,‘আবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটা বাজারে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। এটি আসলে প্রকারান্তরে বাজার ব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকাকে খাটো করছে।’

তার মতে, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যদি কিছুদিন নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে বাজার প্রক্রিয়ায় একটি বার্তা যাবে যে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করলে শাস্তি পেতে হয়। ফলে বাজারকে নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা কমে আসবে।

কিন্তু ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং সরকারি মদদে এই ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন ভোক্তা, উৎপাদনকারী এবং অনেক সময় সংগ্রহকারীরা এমনটিই জানান গোলাম মোয়াজ্জেম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d