Hot

ব্যাংক খাত থেকে এক দিনে সরকার ঋণ নিলো ৩ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংক খাত থেকে এক দিনে সরকার ঋণ নিয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে আটশ’ ৬০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই হাজার ১৪০ কোটি টাকা। দুই বছরে মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে এ অর্থ গতকাল বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রতি এক শ’ টাকার জন্য সুদ গুনতে হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজার থেকে আরো বেশি পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়া হবে। এজন্য ব্যাংকগুলো আকৃষ্ট করতে সুদহার আরো বাড়ানো হবে। এদিকে, সরকার ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরো বাধাগ্রস্ত হবে। কাক্সিক্ষত হারে বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টাকার প্রবাহ কমাতে এবার সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ জন্য ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ তুলে নেয়ার জন্য নিলামের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সরকারের ঋণ জোগান দেয়ার নিলামে হাতে বাড়তি অর্থ রয়েছে এমন ব্যাংকগুলো অংশগ্রহণ করে।

সরকারের নিলামে অংশ নেয়া এমন একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ২ বছর মেয়াদি নিলামে অংশগ্রহণ করেছিল তার ব্যাংক। ৫০০ কোটি টাকার ঋণের জোগান দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ সুদে ৫০ কোটি টাকা এবং ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ সুদে আরো ৫০ কোটি টাকা মোট ১০০ কোটি টাকার সরকারের ঋণের জোগান দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকিং খাত থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেয়া হবে তার আগাম কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। আর এ কর্মসুচি অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকারের ঋণ তুলে দেয়ার কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানেয়েছে, বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর জন্য ও টাকাকে শক্তিশালী করতে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। গত ডিসেম্বরে যেখানে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ শতাংশ, সেখানে আগামী ডিসেম্বরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ শতাংশ। বিপরীত দিকে, বেসরকারি খাতের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ, সেখানে আগামী ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ বছর সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে বেশি হারে ঋণ নিতে হবে। একদিকে টাকার প্রবাহ কমাতে হবে, অপরদিকে সরকারের বাড়তি ঋণের জোগান দেয়ার জন্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। গতকাল দুই বছর মেয়াদি সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের নিলামে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে ঋণ নেয়া হয়েছে। সামনে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার আরো বেড়ে যাবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অনেক ব্যাংকের টাকার সঙ্কট রয়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। অনেক ব্যাংক প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহ করছে। সামনে আমানত সংগ্রহের সুদহার আরো বেড়ে যাবে। কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে বেড়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু ওই হারে আয় বাড়েনি, বরং অনেকেরই আয় কমে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে আমানত সংগ্রহের হার আরো কমে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে বাড়তি অর্থ তুলে নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ আরো কমে যাবে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেলে বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কাক্সিক্ষত হারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না। ব্যাংকাররা মনে করেন, সরকারের বাজেটঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button