International

মালদ্বীপ-চীন গোপন সমীকরণে চিন্তায় ভারত!

মালদ্বীপ ও চীনের মধ্যকার ‘গোপন সমীকরণ’ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে ভারত। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মোহম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সে দেশে ভারতবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রের ‘আনুগত্য’ এখন কোথায়, তা-ও স্পষ্ট নয়াদিল্লির কাছে।

মঙ্গলবার একটি জনসভায় বক্তৃতা করার সময় মুইজ্জু বলেন, ‘১০ মে-র পর দেশে কোনও ভারতীয় বাহিনী থাকবে না। উর্দিতেও না, উর্দি ছাড়া অসামরিক পোশাকেও নয়। ভারতীয় বাহিনী এ দেশে কোনোভাবেই থাকবে না। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি।’

এর কয়েক দিন আগে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছোট দেশগুলোর উপর ভারত ‘গুন্ডামি’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুইজ্জু। এর পর দু’দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল। মুইজ্জুর মন্তব্যের পাল্টা হিসাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘বড় গুন্ডারা ৪৫০ কোটি ডলারের সহায়তা প্রদান করে না।’

স্পষ্টতই মালদ্বীপ ভারতের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য পায়, তা নিয়েই মুইজ্জু সরকারের সমালোচনা করেছেন জয়শঙ্কর।

ভারত এবং মালদ্বীপের মধ্যে যখন ‘বৈরিতা’র ছাপ স্পষ্ট, তখন এই সপ্তাহে চীনের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার কথা ঘোষণা করেছে মুইজ্জু সরকার। মালদ্বীপের সরকার জানিয়েছে, ‘বিনামূল্যে এবং নিঃশর্তে’ সামরিক সহায়তা পেতে চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা।

চীনের শি জিনপিং সরকার মালদ্বীপকে ১২টি অ্যাম্বুল্যান্সও দিয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীনের সাথে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চুক্তি করেছে মালদ্বীপ। এবার সরকারিভাবে এই প্রথম দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে।

রোববার চীনের আন্তর্জাতিক সামরিক বোঝাপড়া-সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তথা মেজর জেনারেল জিয়াং বাওকুনের সাথে বৈঠক করেন মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহম্মদ ঘাসান মামুন।

বৈঠকের পর সামরিক বোঝাপড়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী স্থির হয়, নিঃশর্তে মালদ্বীপকে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে চীন। পরে এই চুক্তির বিষয়ে নিজেদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

যদিও এই বিষয়ে দুই তরফেই সবিস্তারে কিছু জানানো হয়নি। অন্য দিকে, সোমবার মালদ্বীপের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মালদ্বীপকে ১২টি ‘পরিবেশবান্ধব’ অ্যাম্বুল্যান্স উপহার দিয়েছে চীন। সব মিলিয়ে চীন-মালদ্বীপ ঘনিষ্ঠতা যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকেই।

কিন্তু মালদ্বীপে চীনের ‘নিঃশর্ত’ সামরিক সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারত-সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তারা নেপথ্যে খুঁজে পাচ্ছেন ‘গোপন অভিসন্ধি’ও।

সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালদ্বীপ সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এবং ‘ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আজিম জহির এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুইজ্জু খুব তাড়াতাড়ি চীনের সাথে সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এগিয়েছে। এটা আশ্চর্যজনক। স্পষ্ট যে, বিষয়টি নয়াদিল্লি ভালো চোখে দেখবে না।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘এটি একটি নতুন দিক যা অবশ্যই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।’

জহিরের দাবি, ভারতের সাথে মালদ্বীপের খারাপ সম্পর্ক এবং সে দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তিকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে চীন।

মুইজ্জু সরকারের প্রতি ভারতের ‘অদূরদর্শী’ এবং ‘বিপরীতমুখী’ প্রতিক্রিয়ার কারণেও মালদ্বীপ চীনের দিকে আরও ঝুঁকেছে বলে মত জহিরের।

মালদ্বীপের জনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে পাঁচ লাখের কিছু বেশি। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকের কাছেই এটি স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্র। তবে দ্বীপরাষ্ট্রের কৌশলগত গুরুত্ব এর আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি।

দীর্ঘ দিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মালদ্বীপ। কারণ ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে উভয় দেশই।

ভারত মহাসাগরে পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথের মাঝে পড়ে মালদ্বীপ। সেই পথেই চীনে তেল সরবরাহ হয়। আশেপাশে আমেরিকার নৌঘাঁটি রয়েছে। আর সেই কারণেই মালদ্বীপকে ‘সামরিক সহায়তা’ প্রদান করা চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের দাবি, কোনোভাবেই তা ‘নিঃশর্ত’ না।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তার করে আমেরিকার নৌঘাঁটিতে নজরদারি চালাতে এবং দেশে পরিবহণের পথ সুগম করতে মালদ্বীপকে ব্যবহার করছে চীন। একেই চীনের ‘গোপন অভিসন্ধি’ বলে মনে করছেন ভারত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

মালদ্বীপ তথা ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পেলে তা ভারতের জন্য সুখবর নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ সোলির আমলে মালদ্বীপ সরকারের সাথে নয়াদিল্লির সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছিল। চীনকে ছাপিয়ে সে দেশের কাছাকাছি এসেছিল ভারত।

ভারতের কাছ থেকে অনেক সাহায্যও পেয়েছিল মালদ্বীপ। সে দেশে হাসপাতাল, স্কুল, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর জন্যও তহবিল সরবরাহ করে ভারত। তবে সেই পরিস্থিতি বর্তমানে বদলেছে।

গত বছরের নির্বাচনে মুইজ্জু ‘ভারত আউট’ স্লোগানের উপর ভিত্তি করে প্রচারাভিযান চালিয়েছিল। মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাসদস্যদেরকে সরানোর ডাকও দিয়েছিলেন মুইজ্জু। এর পর ক্ষমতায় এসে ভারত নিয়ে তার ‘অনিহা’র কথা বার বার প্রকাশ্যে এসেছে।

আন্তর্জাতিক মহলে মুইজ্জু পরিচিত ‘চীনপন্থী’ হিসাবে। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে রাজধানী মালের মেয়র থাকার সময় চীনের সাথে একটি সেতু নির্মাণের চুক্তি তিনি করেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর তার চীনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ আরো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পর তড়িঘড়ি চীন সফরেও গিয়েছিলেন মুইজ্জু। সেখানে গিয়ে দু’দেশের মধ্যে প্রায় ১৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। ঘটনাচক্রে, চীন থেকে ফিরে মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাসদস্যদের অপসারণের প্রতিশ্রুতিতে অটল ছিলেন মুইজ্জু।

২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারত এবং মালদ্বীপের মধ্যে একটি শীর্ষস্তরীয় বৈঠক হয়। তার পরেই মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, ১০ মে-র মধ্যে মালদ্বীপের তিনটি বিমানবন্দর থেকে বাহিনী সরাবে ভারত। প্রথম ধাপে ১০ মার্চের মধ্যে একটি বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নেয়া হবে বাহিনী। ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদেও মুইজ্জু একই দাবি করেছিলেন।

গত মাসে, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও মালদ্বীপ সরকার একটি বিতর্কিত চীনা ‘গবেষণা জাহাজ’কে তার পানিসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারতের দাবি ছিল, ওই জাহাজটি আসলে ‘গুপ্তচর জাহাজ’।

মালদ্বীপের তিনটি বিমানবন্দর এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৮৮ জন সদস্য রয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে তারা জরুরিকালীন পরিষেবা দিচ্ছেন মালদ্বীপবাসীকে। অসুস্থদের আকাশপথে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো কাজ তারা করে থাকেন।

এই সপ্তাহে ভারতীয় অসামরিক দল মালদ্বীপে ৮৮ জন সেনার দায়িত্ব বুঝে নিতে গিয়েছিল। তবে ভারতের ওই পদক্ষেপও প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। মুইজ্জু জানিয়ে দেন, ১০ মে-র পর মালদ্বীপে উর্দিতে বা অসামরিক পোশাকেও কোনো ভারতীয় বাহিনী থাকবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto