Hot

অকেজো ইভিএমের পাহাড়

♦ ধ্বংস করার পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের ♦ ইভিএম সংরক্ষণে বার্ষিক ভাড়া গুনতে হবে ২৪ কোটি ২৪ লাখ

অকেজো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পাহাড় এখন নির্বাচন কমিশনে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। এসব অকেজো ইভিএম ধ্বংস করা তথা পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন (ইসি)। ইভিএম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয়নি বলেই ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এসব ইভিএম ধ্বংস না করা হলে বার্ষিক ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৪১ জেলায় মাসিক ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা হারে ২৯ হাজার ৯০২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বিএমটিএফ-এর ওয়্যারহাউসে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইভিএম সংরক্ষণে বার্ষিক ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশন বিগত সময়ে সংসদ, স্থানীয় ও উপনির্বাচন মিলে প্রায় ১ হাজার ৪০০ নির্বাচন করেছে ইভিএম দিয়ে। আর ভোট দিয়েছে প্রায় আড়াই কোটি ভোটার। এদিকে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউস ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় এখন ওয়্যারহাউসের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, বিএমটিএফের ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার ভাড়া বাবদ প্রায় ৫২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে ইসির। এ ছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৬০ কোটি এবং র?্যাকের বকেয়া বাবদ ৩১ কোটিসহ মোট প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু জটিলতার কারণে এই অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না ইসি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিটি ইভিএম সংরক্ষণে সম্ভাব্য বার্ষিক ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৩৪৪ টাকা। সেই হিসেবে মাঠপর্যায়ে ৪১ জেলায় মাসিক ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা হারে ২৯ হাজার ৯০২টি ইভিএম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যার বার্ষিক ভাড়া ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইসি বলছে, ৬৪ জেলায় র‌্যাকসহ ইভিএম সংরক্ষণে জন্য দ্বিগুণ জায়গা প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী ইভিএম ও র‌্যাক সংরক্ষণের জন্য সম্ভাব্য বার্ষিক ব্যয় হবে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৪ টাকা।

এ ছাড়া বিএমটিএফের ওয়্যারহাউসে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২টি ইভিএম করার জন্য মাসিক ভাড়া ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসেবে বার্ষিক ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ইভিএমপ্রতি ব্যয় হবে ১১৪২ টাকা। নির্বাচন কমিশন বলছে, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ দেড় লাখ ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬৪ জেলায় র‌্যাকসহ ইভিএম সংরক্ষণ ও বিএমটিএফ এ ইভিএম সংরক্ষণের জন্য বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৪ টাকা। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি কাজী রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলে উন্নতমানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত রেখে যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়।

এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। সেই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করতে চেয়েছিল ইসি। বরাদ্দ চেয়েছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু টাকাও পায়নি, ইভিএমে ভোটও হয়নি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। তখন বলা হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে পড়ে।

অবশিষ্ট ১ লাখ ১০ হাজারের মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোয় ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য নেই নতুন কোনো প্রকল্পের অর্থের জোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। সেই শঙ্কাই এখন সত্য হতে চলেছে। কেননা, অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২ শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে নষ্ট ইভিএমগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে ইসি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে জুনে শেষ হচ্ছে ইভিএম প্রকল্প। তাই নষ্ট ইভিএমগুলো আর টেনে নিতে চায় না নির্বাচন কমিশনও। গত ৬ ফেব্রুয়ারির ইসির ২৭তম বৈঠকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, প্রকল্প খাতে সংস্থাপন না থাকায় ইভিএমের ওয়্যারহাউসের ভাড়া পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগের কাছে বরাদ্দ চাওয়া যেতে পারে।

এ ছাড়া ব্যয়বহুল ও ইভিএমের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হওয়ায় একটি কারিগরি কমিটি গঠনপূর্বক অচল ইভিএম শনাক্ত করে তা বিনষ্ট করা যেতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button