Hot

অদৃশ্য ক্ষমতায় শ্রমবাজারের সর্বনাশ

মালয়েশিয়া-কুয়েতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ – মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়ংকর খারাপ – আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বন্ধ স্মার্টকার্ড, দূতাবাসে হয়রানির শেষ নেই – টাকা দিয়ে বিদেশ যেতে পারছে না শ্রমিক

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না স্মার্টকার্ড। প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ গ্রুপ ভিসার বাইরে স্মার্টকার্ড। এর সঙ্গে আছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র না দেওয়া ও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়নের বিড়ম্বনা। ডিমান্ড নোট সত্যায়ন হচ্ছে না দিনের পর দিন। সত্যায়নের অভাবে থাকতে থাকতে শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়াদ। ফলে বিদেশে জনশক্তি পাঠানো জটিলতার মুখোমুখি। দীর্ঘদিন থেকে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যেতে পারছে না। মালয়েশিয়ার শ্রমিক পাঠানো নিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগামী ৩১ মে থেকে সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার। মধ্যপ্রাচ্যের দু-একটা দেশ ছাড়া অন্যান্য দেশের অবস্থাও খারাপ।   জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, সাধারণ শ্রমিকরা বিদেশ যেতে টাকা জমা দিয়ে রেখেছে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিকে। কিন্তু সময়মতো স্মার্টকার্ড না পাওয়ার কারণে অনেক এজেন্সি ছাড়পত্র পাচ্ছে না। দেখে যায় বেশির ভাগ ডিমান্ড নোটের মেয়াদ থাকে চার থেকে ছয় মাস। এ সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ডসহ অন্যান্য ছাড়পত্র সম্পন্ন করতে হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাড়পত্র বিলম্ব হয়। এ কারণে বাতিল হয়ে যায় অনেকের ভিসা। আর বিএমইটি স্মার্টকার্ড ছাড়া কোনোভাবেই বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কাউকে যাওয়ার সুযোগ দেয় না। মেয়াদ নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকা ভিসাপ্রাপ্তরা রিক্রুটিং এজেন্সির সামনে গিয়ে ভিড় জমান। কারণ তারা তাদের সম্পূর্ণ টাকাই পরিশোধ করেছেন।

গতকাল বনানীর একটি রিক্রুটিং এসেন্সির সামনে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ হয়। তাদের একজন কুমিল্লার আবু তাহের বলেন, অনেকদিন থেকেই বসে আছি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু স্মার্টকার্ড না পাওয়াতে যেতে পারছি না। এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে। আড়ালে থাকা শক্তিশালী রহস্যময় ক্ষমতাবান ব্যক্তি এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছেন। এ কারণে উৎকণ্ঠিত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রহস্যময় ক্ষমতাবানের তৎপরতা বাড়লে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। চক্রান্তের কবলে পড়ে এ রেমিট্যান্স বন্ধ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপকভাবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কাছে আমাদের স্মার্টকার্ডের সার্ভার ট্রান্সফারের কাজ আমরা শেষ করেছি। আশা করছি, স্মার্টকার্ড নিয়ে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেগুলো আর থাকবে না। ডাটাবেজটাও আগের তুলনায় অনেক সিকিউরড হবে। ডাটাবেজ হ্যাকের যে ঘটনা ঘটেছিল তা তদন্তের জন্য সাইবার সিকিউরিটিতে দিয়েছি। দূতাবাস থেকে যে সত্যায়ন দিতে দিতে এত বিলম্ব হয় যে ভিসার মেয়াদই শেষ হয়ে যায়, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, সত্যায়ন না করে দিলেও তো বিপদ। দেখা যায়, কোনো কাজ নেই, ভুয়া কোম্পানি। সেই বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি দূতাবাসগুলো থেকে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় সত্যায়ন নিয়ে আসার জন্য। এ জন্য দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। তিনি আরও বলেন, এটাও বুঝতে হবে দূতাবাসগুলো থাকে মাত্র চার-পাঁচজন লোক। দূরের কোনো প্রতিষ্ঠান হলে সেটি ভেরিফাই করতেও তো একটু সময় লাগবে।

আমার ধারণা ভিসা এক্সপায়ার হয়ে যাওয়ার সংখ্যা খুব কম। তবে আমরা চেষ্টা করছি, বর্তমানে যে সংখ্যাটি রয়েছে সেটিকেও কমিয়ে আনার জন্য। মালয়েশিয়া এবং কুয়েতের শ্রমবাজার নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে সচিব রুহুল আমিন বলেন, মালয়েশিয়াতে ৩১ মে পর্যন্ত ওরা লোক নেবে। আমাদের কোটা নতুন করে না হওয়া পর্যন্ত বর্তমানে যে কোটা আছে সেটির মধ্য দিয়ে যাতে আমাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক যেতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি। আর কুয়েতের শ্রমবাজার তো এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি। আমরা চাইলেই তো আর খোলা হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। কুয়েতে নার্স পাঠানো নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক করার চেষ্টা চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যা যা করা প্রয়োজন সেগুলো শেষ করে পাঠিয়ে দিয়েছি, এখন আমরা কুয়েতের রেসপন্সের অপেক্ষায় আছি।   

জানা যায়, সত্যায়নের আবেদনের পর হাইকমিশনের ধীরগতিকে মেনে নিয়েই অপেক্ষা করেন রপ্তানিকারক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। সাধারণত ডিমান্ড নোট ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে হাইকমিশনের সত্যায়ন করে দেওয়ার কথা। প্রয়োজনে ভিজিট করে সময়ের মধ্যে করে দেওয়ার কথা। সূত্র জানায়, সাধারণত সত্যায়নগুলো করে থাকে মিশনের লেবার উইং। তারাই এ জন্য দায়িত্বশীল। কিন্তু লেবার উইং অনুমোদন করে দিলেও হাইকমিশনের অন্য অংশে আটকে যায় অনুমোদন। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতে, সত্যায়নের নামে এ দীর্ঘ ভোগান্তি ও কিছু লোকের বাণিজ্যের অবসান করা দরকার। কর্মী পাঠাতে কিছু সমস্যা হতে পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। অভিযোগ পেলে শাস্তি দেওয়াও হয়। দূতাবাস থেকে সত্যায়ন দিতে যেহেতু এত দীর্ঘ সময় লাগছে, তাই মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করার ব্যবস্থা করতে পারলে কর্মী পাঠানোয় গতি আসত। না হলে এখনকার এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংকটে পড়বে শ্রমবাজার।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প শ্রমবাজার এখনো তৈরি হয়নি। ইউরোপের বাজারে এখন কিছু লোক যাওয়া-আসা শুরু করেছে। এখন বড় পরিমাণে লোক যাচ্ছে না। তা কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প নয়। সৌদি আরবে শ্রমশক্তি চলমান আছে। মালয়েশিয়াতে কমে যাচ্ছে। জনশক্তির মার্কেটটা একটু ছোট হয়ে আসছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d