Bangladesh

অনাহার-অর্ধাহারে বন্যার্তরা দিশেহারা

বন্যা পরিস্থিতি কোথাও অপরিবর্তিত কোথাও অবনতি : ঘরবাড়ি প্লাবিত থাকায় রাস্তাঘাট-বাঁধে ঠাই নিয়েছে বানভাসিরা : নদীভাঙনে বিলীন বসতভিটা-কৃষিজমি

উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল হয়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও আরো অবনতি, কোথাও অপরিবর্তিত রয়েছে। ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। লাখ লাখ বন্যার্ত মানুষ অভাব-অনটনে, অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে মানতেবর দিনযাপন করছে। অধিকাংশই নিত্য অনাহারে-অর্ধাহারে দিশেহারা। বেশিরভাগ বন্যার্তের ঘরবাড়ি ঢল-বানের পানিতে ডুবে কিংবা ভেসে গেছে। অনেকেই আশ্রয়টুকু হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িবাঁধে অথবা রাস্তা-ঘাটে ঠাই নিয়েছে। বানভাসিদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, অসুস্থদের ওষুধ-পথ্যের সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি জরুরি ত্রাণ সাহায্য তাদের ভাগ্যে জুটেনি এখনও। কাজকর্ম বিশেষত বন্যার কারণে এলাকায় দিনমজুর ও কৃষিকাজ না থাকায় বন্যার্তরা কোন আয়-রোজগারও করতে পারছে না। এদিকে গতকাল রোববার বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা-ঘাঘট, করতোয়া-আত্রাই, সুরমা-কুশিয়ারা, মেঘনাসহ দশটি নদ-নদী ২১ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
দেশের অভ্যন্তরে টানা বর্ষণ ও উজানে ভারতের ঢলের কারণে প্রধান নদ-নদীগুলো ফুলে-ফুঁসে উঠার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন বেড়েই চলেছে। বন্যা বিস্তৃত হয়ে এবং নদীভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে ফল-ফসলি জমি, খেত-খামার, বসতভিটা, রাস্তাঘাট। গতকাল পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে উত্তর, উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলা। বন্যায় অন্তত ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ লাখ মানুষ। এ মুহূর্তে বন্যার্তরা খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি, অসুস্থদের চিকিৎসার অভাব ও দুঃখ-দুর্দশা সীমাহীন। গৃহপালিত পশুপাখির খাদ সঙ্কট বিশেষত গো-খাদ্যের অভাব প্রকট।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্য ও মধ্যাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ জেলাগুলোতে বন্যা পারিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। মধ্যাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে টাঙ্গাইল থেকে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত ফুঁসে উঠেছে। তাছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়ছে নদ-নদীর পানিছে। আগেই বন্যা কবলিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, কোথাও প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিপদসমীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো হচ্ছেÑ দুধকুমার, ধরলা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, আত্রাই, সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সোমেশ্বরী ও মেঘনা।
দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অন্যতম বৃহৎ অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদ তিনটি পয়েন্টের সবক’টিতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৫৩ সে.মি. এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদের ১০টি পয়েন্টে পানি কোথাও সামান্য হ্রাস পায়, কোথাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। এর মধ্যে যমুনা ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১, বাহাদুরাবাদে ৮৩, সাঘাটায় ৮০, সারিয়াকান্দিতে ৫৫, কাজীপুর ৫৪, জগন্নাথগঞ্জে ১১৭, সিরাজগঞ্জে ৬১ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া যমুনা নদের পানি মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
মধ্যাঞ্চলে করতোয়া-আত্রাই নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমার ২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার কাছে মধ্যাঞ্চল ও মধ্য-পূর্বাঞ্চলে মেঘনা নদীর পানি মুন্সীগঞ্জে মেঘনা-ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নদী দুধকুমার পাটেশ^রীতে বিপদসীমার ৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় ঘাঘট নদী বিপদসীমার ২৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি কুড়িগ্রাম জেলার পাটেশ^রীতে আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫২ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ১৯ এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে। এদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা উভয় নদীর পানি আরও কিছুটা হ্রাস পেয়ে সুরমা একটি পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদী ৩টি পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ^রী নদী কলমাকান্দায় বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহেরর প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে, যমুনা নদের পানি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা উভয় নদের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে। বৈশি^ক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহের যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে সতর্কসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ধরলা ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে সিরাজগঞ্জ জেলার আত্রাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ঘাঘট নদীর পানি হ্রাসের ফলে গাইবান্ধা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনেশ^রী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার-করতোয়া, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, ইছামতী-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং তা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
পাউবো’র পর্যবেক্ষণাধীন দেশের ১১০টি নদ-নদীর পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৪৯টিতে হ্রাস পায়। দু’টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল। বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ও বিপদসীমায় রয়েছে দশটি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৬৭, শিলিগুড়িতে ১০৪ মিলিমিটার। দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয় যশোরে ১৭২, পঞ্চগড়ে ১১০ মি.মি.।
কুলাউড়া পৌরসভা : বন্যার ২১ দিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার চলতি বন্যায় বিগত ২১ দিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। বন্যা আরো দীর্ঘায়িত হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বন্যা দীর্ঘায়িত হলে সমাজের বিত্তবান, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনকে বানভাসি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, গত ১৪ জুন থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। ১৭ জুন ঈদের দিন থেকে কুলাউড়া উপজেলাসহ পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। পৌরসভায় প্রথমে ২টি এবং পরে আরো ২টিসহ মোট ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। এতে ১১৯টি পরিবারের ৪ শতাধিক মানুষ আশ্রিত। বন্যায় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আংশিক এবং অতিবৃষ্টির কারণে ৯টি ওয়ার্ডে ১৮ কিলোমিটার রাস্তা, ১২ কিলোমিটার ড্রেন, এক হাজার ঘর-বাড়ি, ১৮টি কালভার্ট, ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২টি কাঁচা বাজার, অনেক মসজিদ, বিভিন্ন গোবাদি পশুর খামার, বিভিন্ন পুকুর, অফিস আদালতের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
মেয়র আরো জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত দুর্ভোগগ্রস্থ মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা পুনারায় প্রদান করাসহ তা বৃদ্ধি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট, বাড়ী-ঘর, কালভার্ট ও অন্যান্য অবকাঠামো দ্রুত মেরামত ও পুুননির্মাণ এবং দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতা দূরীকরণে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবী জানান। তাছাড়া কুলাউড়ায় পৌরসভায় বন্যাকবলিত মানুষের জন্য বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানিয় জলের তীব্র সঙ্কট। পৌরসভায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র উপযোগী অথবা একটি আলাদা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন।
মেয়র জানান, গত ২১ দিনে সরকারি ত্রাণ বলতে ১৪ মেট্রিক টন চাল ও ১২০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবান, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনকে বানভাসি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী, সচিব ও কাউন্সিলারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। টানা ৭ দিন স্থায়ী বন্যায় ব্রহ্মপূত্র নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে, গত তিনদিনে হুহু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মেইন ল্যান্ডে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে নাগেশ্বরীতে দুধকুমার নদীর ১০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১২ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলায় পানিবন্দী লোকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। তবে জেলা দুর্যোগ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৭৫০ জন।
একই উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ার কোবাদ আলী জানান, এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ খবর নিতে আসে নাই। চুলা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সকাল গড়িয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত পেটে কিছু পড়েনি।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কার্যত বন্যা এলাকায় কাউকে দেখা মেলেনি। ওই সব গ্রামে গত ৬দিন ধরে কোন মেডিকেল টিম খোঁজ খবর নেয়নি বলে বানভাসীরা জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়া যাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, ১৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২টি এবং নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সবুজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫টি বানভাসী পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
টাঙ্গাইলে জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। জেলার ভুয়াপুর, কালিহাতি, বাসাইল ও সদর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীতে আসা তীব্র পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। এসব সড়ক ভেঙে নদীর পানি তীব্র গতিতে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতেকরে প্লাবিত হয়ে পড়ছে বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার, ফসলী জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।
জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে জানান, হরিরামপুরে হঠাৎ করে ক্ষেতে পানি আসায় মরিচ, ভূট্টা, চিনা বাদাম, তিল, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতির সম্ভাবনায় দিশেহারা কৃষকেরা। এ উপজেলার এ সময় অন্যতম প্রধান ফসল কাঁচা মরিচ। প্রচন্ড খরা ও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দফায় দফায় ক্ষতির সম্মুখীন হয় মরিচ চাষিরা। মৌসুমের শেষ দিকে কিছুটা মরিচে লাভের আশা উঁকি দিতেই উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে মরিচ ক্ষেতে পানি প্রবেশ করায় রাতারাতিই যেন গাছ টলে পড়ছে। ঝরে পড়ছে মরিচের ফুল। ফলে কৃষকের লাভের আশা পরিণত হয়েছে গুড়েবালিতে। উপজেলার চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভূট্টা, চিনা বাদাম, তিল ও আউশ ধান নিয়েও বিপাকে চরাঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক।
এদিকে ক্ষেতে পানি আসায় মরিচের ফলন বিনষ্ট হয়ে পড়ায় কাঁচা মরিচের দামও আকাশচুম্বী। এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের কাঁচামরিচ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমান এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা প্রতি কেজি পাইকারী বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০/৩০০ টাকা দরে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে নাভিশ্বাস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বিন্দু মরিচের আবাদ হয়েছে ১৭৫০ হেক্টর আর কৃষিবিদ মরিচ ১১০৬, কারেন মরিচ ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬৬৫ হে. জমি।
এস. কে. সাত্তার, স্টাফ রিপোর্টার, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল থেকে জানান, মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমে গেছে। ফলে উজনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নিম্নাঞ্চলে অনেকের পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি মিললেও বন্যায় কাঁচা সড়ক, বীজতলা, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে বাড়ছে ভোগান্তি। বাড়ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও মৃগী নদীর পানি। ফলে নতুন করে শেরপুরের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবার শঙ্কা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে শেরপুরের ৩টি নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ৪ উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজারো পরিবার। ২ উপজেলার বিভিন্নস্থানে বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের। বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ২০টি বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় হাজারো পরিবার। ২০টি গ্রামের নিন্মাঞ্চলে রয়েছে জলাবদ্ধতা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু রাস্তাঘাট। ঘরবাড়ি ও গাছপালা।
অপর দিকে গতকাল রোববার ও শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বিশ^জিতসহ নেতাকর্মীগণ বন্যাকবলিত বনগাঁও এলাকা পরির্দন করেছেন। সংসদ সদস্য দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দেখছি অবিলম্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d