Hot

অনুদানের টাকায় নয়ছয় প্রকল্প, শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নের নামে অর্থ সাবাড়

অনুদানের টাকা নিয়ে রীতিমতো নয়ছয়ের আয়োজন করা হয়েছে। অনুদান প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। অথচ যাদের জীবনমান উন্নয়নে এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেই শ্রমিকদের জন্য ব্যয় করা হবে মাত্র ২৫ লাখ টাকা। বাকি টাকার বেশির ভাগজুড়ে আছে ইচ্ছামাফিক আয়োজন। দেশি-বিদেশি পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় করা হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। দুবছর মেয়াদি প্রকল্পের জন্য অফিস ভাড়া বাবদ মাসে গুনতে হবে প্রায় ৬ লাখ টাকা। গণ-অভুত্থ্যানপরবর্তী বাংলাদেশে এখনো প্রকল্পের নামে এরকম অনিয়ম-দুর্নীতি আয়োজনের সম্ভাব্য প্রস্তাবকে মানতে পারছেন না পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন তুলে আপত্তি জানানো হয়েছে।

আলোচ্য প্রকল্পের নাম ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর দি ওয়ার্কারস ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড লেদার সেক্টর (এসওএসআই)’। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অনুদান দিচ্ছে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড)। প্রস্তাব অনুযায়ী, দুবছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরের ৫০ জন শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি করে পুনর্বাসন করা। এজন্য মোট ব্যয় করা হবে মাত্র ২৫ লাখ টাকা। গড়ে মাথাপিছু ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া পোশাক ও লেদার সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের কেউ আহত হলে তাদের জন্য সামাজিক বিমা চালুর পদ্ধতি প্রস্তুত করা, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার উপায় বের করা, এসব শ্রমিকের দুর্ঘটনা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পলিসি বা নীতিমালা প্রণয়ন এবং শ্রমিক পরিবারে মাতৃত্বকালীন সুবিধা, বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, অসুস্থতার চিকিৎসাসহ বৃদ্ধ বয়সে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর উপায় বের করা হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ৩১৫ জন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শকের সেবাগ্রহণ, ৫টি অনুদান চুক্তি, ৮৭টি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার করা হবে। এছাড়া ৬টি সফটওয়্যার, ৩৫টি কম্পিউটার, ৩৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার, ১৮টি অফিস সরঞ্জামাদি এবং ৫৬টি আসবাবপত্র কেনা হবে।

সূত্র জানায়, ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় উল্লিখিত প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের ব্যয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে প্রকল্পের বেসিক বা মৌলিক কাজ কী কী হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে পরামর্শক খাতের ব্যয়, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয়ের চিত্র দেখে সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, প্রায় ৮৩ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে যদি বিদেশি পরামর্শক খাতে প্রায় ১৫ কোটি, দেশীয় পরামর্শকদের পেছনে ১০ কোটি এবং বাড়ি ভাড়ার নামে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়, তাহলে মূল কাজের কী আর থাকল? এছাড়া কম্পিউটার ও আসবাবপত্র কেনাকাটার পেছনেও বড় অঙ্কের ব্যয় করা হবে। ফলে এ ধরনের প্রকল্পে ওই অর্থে প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করা কখনো সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলোচ্য প্রকল্পের পর্যালোচনা সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, অনুদানের টাকা বলেই যে উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারবে, বিষয়টি সেরকম নয়। কেননা অনুদান হিসাবে দেওয়ার পর টাকাটা বাংলাদেশ সরকারের। ফলে আমরা বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করেছি। তিনি জানান, প্রকল্পের সব খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য আলাদা অফিস না নিয়ে জিআইজেড অফিসের একটি স্পেস ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যতটা ভাড়ার প্রয়োজন হয়, কেবল সেটিই ধরতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button