Hot

অপরাধ বাড়াচ্ছে লুটের অস্ত্র

জুলাই বিপ্লবের পর দেশে প্রায় ৪৬০ থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট হয়। ১১৪টি ফাঁড়িতেও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির পাশাপাশি লুট হয় সরকারি অস্ত্র। লুটের এসব অস্ত্র কেউ কেউ নিজের কাছে রেখেছে, আবার কেউ বিক্রি করে দিয়েছে।

আবার হাতবদল হয়ে সেগুলো ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা চরমপন্থি, উগ্রপন্থি, দাগি আসামি, সন্ত্রাসী, জেল পলাতক আসামি, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হাতে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। এসব অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখার জন্য যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের বয়স ১৬-৩০ বছরের মধ্যে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতি, খুনসহ বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জেল থেকে যারা পালিয়েছেন, তাদের অনেকেই আবার অপরাধে জড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই অস্ত্র কিনছেন। বিশেষ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও চরমপন্থিরা পুলিশের লুট হওয়া এসব অস্ত্র কিনে নিচ্ছেন। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে মোট ৫ হাজার ৭৫০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪ হাজার ৩৫১টি অস্ত্র। এ ছাড়া একই সময়ে গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯টি। এই হিসাবে এখন অস্ত্র উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৯৯টি। আর গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৬২ হাজার ১৭০টি। আর লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এসএমজি, এলএমজি, বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, শটগান ও গ্যাসগান। এ ছাড়াও রয়েছে কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড, বিভিন্ন বোরের গুলি।

পুলিশ বলছে, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি করে একাধিক হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধার করা হয় ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মৃত মোতালেবের মেয়ে শাহিদা ইসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ। তিনি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায় তার প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানা যায়, শাহিদাকে যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সেটি পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র।

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, র‌্যাব গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে র‌্যাবের লুট হওয়া ১৬৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৯০টি, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২২৮টি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৬টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাবারুদের ক্ষেত্রে র‌্যাবের ৭ হাজার ৩০৩ রাউন্ড, পুলিশের ১১ হাজার ৯৪১ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আর অবৈধ গোলাবারুদ ১ হাজার ২৮০ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার-সংক্রান্ত মামলায় ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কারাসূত্র বলছে, ২ হাজার ২০০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের আসামি জেল থেকে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো ৭০০ আসামি পলাতক রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র যদি উদ্ধার করা না হয় তবে নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকেই যায়। যদিও কতগুলো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তার হিসাবও আমাদের হাতে পরিপূর্ণভাবে নাই। পুলিশ যেটা বলছে তার মধ্যেও আনুমানিক সংখ্যা আছে। অগ্নিসংযোগ, হামলা চালিয়ে কোনো কিছু লুট হলে পরিপূর্ণ হিসাব করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এর চেয়ে বড় বিষয় হলো যতগুলোর হিসাব দিচ্ছে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করা। পাঁচ মাসে যতগুলো উদ্ধার হয়েছে সেগুলো যে খুব প্রত্যাশিত সেটিও বলার সুযোগ নাই। লুট হওয়া অস্ত্র কারা লুট করেছে তাদের পরিচয় বের করা হবে- এমন ঘোষণাই আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু পাঁচ মাস পরেও উদ্বেগ কমছে না। কারণ এই অস্ত্রগুলো যখনই কোনো অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি বা সন্ত্রাসীদের কাছে থাকবে তারা সুযোগ পেলেই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করবে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ চট্টগ্রাম শহরে দুটি অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলিসহ ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পারে- ছিনতাইকারী এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা থেকে লুট করা। গত বছরের ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় আনিছ নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পাঁচটি গুলির খোসা ও অস্ত্র বহনের একটি ব্যাগ আলামত হিসেবে জব্দ করে। পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা গুলির খোসায় পুলিশ লেখা রয়েছে।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কোস্টগার্ড সদস্যরা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তলসহ জিয়াউর রহমান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউর পুলিশকে জানায়, তিনি ডাকাত সরদার। এর আগে তিনি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করলেও চট্টগ্রামে পুলিশের স্থাপনা থেকে পিস্তল লুট করে আবার ডাকাতি শুরু করেন। পুলিশ বলছে, ডাকাত জিয়াউর পাঁচ বছর আগে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের পর এখন আবার অপরাধে নামেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d