International

অবশিষ্ট হাসপাতালগুলোতেও ইসরায়েলের হামলা, গাজাবাসীর আর্তি শুনছে না কেউ!

মঙ্গলবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই বিস্ফোরণে নতুন করে আহত হয়েছেন ২০ রোগী। শুক্রবার অভিযান চালায় হাসপাতালের ভেতরেও। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সুফিয়া-সহ কয়েক ডজন স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।

খাদ্য নেই, ওষুধ নেই, নেই মাথার ওপরে ছাদ—গাজার বিপর্যয় যেন বিশ্ব মানবতার নৈতিক স্খলনের এক সাক্ষী। অবাধে ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা আজ বিশ্ব সম্প্রদায়ের অজানা নয়। গাজার স্বাস্থ্য খাতকে এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই টার্গেট করা হয়েছে। এখন অব্যাহত রয়েছে কোনোক্রমে টিকে থাকা কয়েকটি হাসপাতালের ওপর নির্বিচার আক্রমণ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখন উত্তর গাজার তিনটি প্রধান হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এই অবস্থায়, সেখানকার রোগী, আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষজন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার থেকে বেইত লাহিয়া এলাকায় কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে আক্রমণ করছে জায়নবাদী সেনারা। একই অবস্থা জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আল-আওদা হাসপাতালের। হাসপাতাল তিনটিকে অবরোধ করার পাশাপাশি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে তারা।

মঙ্গলবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই বিস্ফোরণে নতুন করে আহত হয়েছে্ন ২০ রোগী। শুক্রবার অভিযান চালায় হাসপাতালের ভেতরেও। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সুফিয়া-সহ কয়েক ডজন স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আবু সুফিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা কী করেছে— সে সম্পর্কে তাঁদের জানা নেই। তবে তাঁকে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইসরায়েলিরা কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে মুক্তি দিয়েছে। তারা জানিয়েছেন, আবু সুফিয়াকে ইসরায়েলি সেনাদের পেটাতে দেখেছেন।

তবে আটককৃতদের বিষয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ জানিয়েছে, উত্তর গাজার শেষ প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্র কামাল আদওয়ান হাসপাতালকেও অচল করে ফেলা হয়েছে।

এই অবস্থায় কিছু রোগীকে নেওয়া হয়েছে কাছের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে, কিন্তু এই হাসপাতালটিও চালু নেই। সেখানে চিকিৎসা সেবা দিতে যেতেও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধা দিয়েছে ইহুদিবাদী সেনারা।

গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের বলেছেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হাসপাতালের আশেপাশের বেশিরভাগ ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি অবকাঠামোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারপাশে ধ্বংসস্তূপের কারণে হাসপাতালটিতে যাতায়াতের রাস্তাগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।’

হাসপাতালটিতে টানা বোমা এবং গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলিরা। ফলে জরুরি বিভাগ, আইসিইউ-সহ হাসপাতালের বেশিরভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালে হামলার বিষয়ে গৎবাঁধা বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল শুক্রবার তারা জানায়, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল হামাস। গত ১৫ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধের সময় হামাসের যোদ্ধারা হাসপাতালটিকে শক্ত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে।

তবে এসব দাবিকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে নাকচ করেছে হামাস।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button