Hot

অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ এ চর্চা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নিষিদ্ধ করা হলে কার্যত বাংলাদেশি ভোটারদের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।

তারা বলেছে, জুলাই বিপ্লব বা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত সহিংস গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে আছে কয়েক শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা শাখার তৎপরতাগুলো সমন্বয় করতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। উভয়পক্ষ একাধিক সূত্র থেকে বাস্তবে কী ঘটছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা রক্ষাকারী সিনিয়র কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। শত শত প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে শক্তি প্রয়োগ করে। গণহারে খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক করেছে। নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস- ওএইচসিএইচআর) গত বছর ১লা জুলাই থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলো তদন্ত করেছে। এরপর তারা ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট বা সত্যানুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে গতকাল। ১১৪ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সময়ে ছাত্র- জনতার ওপর কি নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। রিপোর্টে তারা বলেছে, তাদের টিম পূর্ণাঙ্গ এবং নিরপেক্ষ যাচাইয়ের মাধ্যমে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তাতে দেখা গেছে যে, এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে- সাবেক সরকার, নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা, তদন্ত সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরা পর্যায়ক্রমিকভাবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ওএইচসিএইচআর-এর এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা রক্ষাকারী খাতের সিনিয়র কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং নির্দেশনায় এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদী ও এর সঙ্গে জড়িত ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার কৌশল। এই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগের বিষয়। ফলে অতিরিক্ত ফৌজদারি তদন্ত প্রয়োজন এটা নির্ধারণ করতে যে, তারা কি পরিমাণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, নির্যাতন সংঘটিত করেছে এবং দেশের ভেতরকার গুরুতর কি পরিমাণ অপরাধ। রিপোর্টে বলা হয়, ২৩শে জুলাই সংকটের উত্তুঙ্গ সময়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর প্রস্তাব রাখেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। কিন্তু তিনি কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি। অবশেষে ১৪ই আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওএইচসিএইচআরের কাছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর অনুরোধ করেন। 

রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ই জুন হাইকোর্ট সরকারি চাকরিক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ কোটা পুনর্বহাল করে। তাৎক্ষণিকভাবে এ কারণে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। যেখানে রাজনৈতিক ও সুশাসনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্নীতি সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে এতে গভীর হতাশা দেখা দেয়। কিন্তু তা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এর বিস্তৃতি ঘটেছে। বৃদ্ধি পায় অর্থনৈতিক অসমতা। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের সুযোগে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নারী ও শিশু সহ বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, পেশাগত, ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড সব ক্ষেত্রের হাজার হাজার মানুষ এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তারা একটি অর্থপূর্ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার দাবি করেন। কিন্তু সাবেক সরকার জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে দমিয়ে ক্ষমতায় ঝুলে থাকার জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতিবাদকারীদের দমন করার চেষ্টা করে। ক্রমাগত তারা সহিংস হয়ে ওঠে। 

মধ্য জুলাই থেকে সাবেক সরকার ও আওয়ামী লীগ অব্যাহতভাবে সশস্ত্র ব্যক্তিদের চক্র বৃদ্ধি করতে থাকে। প্রতিবাদকে দমন করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে সরকারের মন্ত্রীরা সহ আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উস্কানি দেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন সশস্ত্র। তাদের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র। ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। উস্কানি দেয়া হয় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে। ছাত্ররা কখনো কখনো আত্মরক্ষা করেছে। জবাবে সরকার অধিক ভয়াবহ সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থনে তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সহিংসভাবে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর অপ্রয়োজনে এবং বৈষম্যমূলক শক্তি প্রয়োগ করেছে। এর মধ্যে ১৭ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ, ঢাকা ও অন্য শহরগুলোতে সম্পূর্ণ শাটডাউন আহ্বান করে। এতে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। এর জবাব দিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভকারী ও প্রতিবাদ আয়োজকদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতা চালায় তখনকার সরকার। জীবনের অধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয় এক্ষেত্রে। এ সময় প্রতিবাদী জনতাকে আকাশপথে ভয় দেখাতে র‌্যাব ও পুলিশের হেলিকপ্টার নামানো হয়। অন্যদিকে পুলিশ, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাজপথে মোতায়েন করা হয় মিলিটারি রাইফেল ও শটগান সহ। এগুলোতে বোঝাই ছিল প্রাণঘাতী ধাতব পেলেট বা ছররা গুলি। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সড়কে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু স্থাপনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারপরও তারা ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের ওপর হামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য কিছু বিক্ষোভকারী ইটপাটকেল ছোড়েন। হাতে লাঠি নেন।  

অবনতিশীল এই পরিবেশে এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার জবাবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু মানুষ সহিংস হয়ে ওঠেন। তারা সরকারি ভবন, পরিবহন বিষয়ক অবকাঠামো এবং পুলিশকে টার্গেট করেন। ১৮ই জুলাই সন্ধ্যায় সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নির্দেশ দেয়। ১৯শে জুলাই থেকে বিক্ষোভের শেষ পর্যন্ত বিজিবি, র‌্যাব এবং পুলিশ ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানগুলোতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যহীনভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছে। ফলে বহু মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আহত হন। এর মধ্যে বিক্ষোভের রিপোর্ট কাভার করতে গিয়ে হতাহতের তালিকায় সাংবাদিকও আছেন। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে খুব কাছ থেকে গুলি করে ‘সামারি এক্সিকিউশন’ সম্পন্ন করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বিক্ষোভকারীদের দমাতে পারেনি। উল্টো সহিংস অস্থিরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০শে জুলাই তখনকার সরকার কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের দিকে ফাঁকা গুলি করে। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা বা আহত করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এ অবস্থায় কমপক্ষে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বেশ কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যমতে, মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত জুনিয়র অফিসাররা ক্রমবর্ধমান হারে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন। এ বিষয়টি ৩রা আগস্ট অনুষ্ঠিত একটি বড় মিটিংয়ে সেনাপ্রধানকে জানিয়ে দেয়া হয়। তারা জানান, বিক্ষোভকারীদের ওপর তারা আর গুলি করতে চান না। তা সত্ত্বেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্লকেড পরিষ্কার করতে গিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব গুলি করে। 

যাই হোক, পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস পথ অবলম্বন করে তাদের দমাতে পারেনি। উল্টো বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। ২০শে জুলাই সরকার কারফিউ জারি করে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি  ছোড়ে- যা বিক্ষোভকারীদের নিহত বা গুরুতর আহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেনি; কেবল একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানা, ৩রা আগস্ট সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় জুনিয়র সেনা অফিসাররা বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের জন্য চাপ দিতে থাকেন; বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে তারা অস্বীকৃতি জানান। ২০ ?ও ২১শে জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধের সময় পুলিশ এবং র‌্যাব গুলি  ছোড়ার পূর্ণ অনুমতি পায়। এতে নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটে। জুলাইয়ের শেষের দিকে, সেনাবাহিনীও ব্যাপক অভিযানে অংশ নেয়, যেখানে পুলিশ এবং র‌্যাব গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নির্বিচারে বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করে। সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে, ৫ই আগস্ট বিক্ষোভকারীরা যে ঢাকা মার্চের ডাক দেয় তা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে থামানোর জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশকে একটি সরকারি পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে, পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে, কিন্তু সেনাবাহিনী এবং বিজিবি বৃহৎ অর্থে নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়েছিল। ফলে বিক্ষোভকারীরা নির্বিঘ্নে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

গোয়েন্দা সার্ভিসেস ডিরেক্টরেট জেনারেল অব আর্মড ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা- গোয়েন্দা শাখা এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিটিসি) প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের স্বপক্ষে প্রচারণা চালায়। গোয়েন্দা শাখা বন্দিদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নিয়মিত ও নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। সিটিটিসি-এর সদর দপ্তর শিশুসহ নির্বিচারে আটককৃতদের বন্দি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। গোয়েন্দা শাখা এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে অপহরণ ও নির্বিচারে আটক করে এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়। ডিজিএফআই, এনএসআই এবং গোয়েন্দা শাখার লোকজন আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাসেবায় বাধাগ্রস্ত করে, প্রায়শই হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে আইন সহায়তাকারী কর্তৃপক্ষ বা বিচার বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি যাতে নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের ঘটনা এবং অনুশীলন বন্ধ করা যায়।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই  পদ্ধতিগত এবং সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো চাপা রাখার পক্ষে কাজ করে। এনটিএমসি মন্ত্রণালয়সমূহের নির্দেশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সঙ্গে একত্রে কাজ করে যাতে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি সংগঠিত করতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবহারের সুযোগ না পায়। সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদান-প্রদানের জনগণের অধিকার সংকুচিত করা হয়। একই সঙ্গে, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং র‌্যাব মিডিয়া আউটলেটগুলোকে গণবিক্ষোভ এবং তাদের সহিংস দমন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট না করার জন্য মিডিয়ার ওপর চাপ দেয়। ডিজিএফআই পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং আইনজীবীদের নীরব হওয়ার ব্যাপারে ভয় দেখাতে থাকে। 

ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে পাওয়া প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এ সিদ্ধান্তে পৌঁচ্ছে যে পুলিশ, আধা-সামরিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িতরা সহিংস উপাদানগুলোকে ব্যবহার করে একটি সমন্বিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণ জ্ঞান, সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতে এ সহিংসতা ঘটানো হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা শাখার তৎপরতাগুলো সমন্বয় করতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। উভয়পক্ষ একাধিক সূত্র থেকে বাস্তবে কী ঘটছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য অনুসারে, ২১শে জুলাই এবং আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন সরবরাহ করতেন যেখানে বিশেষভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে সাইট পরিদর্শন করেন।

অধিকন্তু, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ এবং গোয়েন্দা শাখার দ্বারা পরিচালিত কার্যক্রমের অনুমোদন ও নির্দেশনা প্রদানের জন্য সরাসরি আদেশ এবং অন্যান্য নির্দেশনা জারি করে। এসব বাহিনী প্রতিবাদকারী ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্বিচারে আটকের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। 
২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে সাবেক সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল।  জনগণ প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতায় যুক্ত হয়ে পড়ে; বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং আওয়ামী লীগের অনুগত সমর্থক, পুলিশ এবং মিডিয়াকে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। বিক্ষোভ চলাকালে এবং পরে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজন, আহমদিয়া সমপ্রদায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা উৎচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংস আক্রমণের শিকার হন। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া এবং কিছু উপাসনালয় আক্রমণ করা হয়। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ঘটনা ঘটে। জমিজমা সংক্রান্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ, আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর আক্রমণ হতে থাকে। কিছু জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি সমর্থক এবং স্থানীয় নেতারাও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যাই হোক, ওএইচসিএইচআর-এর প্রাপ্ত তথ্যে এটা প্রতীয়মান হয়নি যে, ঘটনাগুলো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনায় সংগঠিতভাবে ঘটেছে বরং তারা সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার নিন্দা করেছে।

৫ই আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী বা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত কোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের ঘটনা তদন্ত বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো নানা কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যা ঘটছে মূলত আইনপ্রয়োগকারী এবং বিচার বিভাগের আগের বিদ্যমান কাঠামোগত ঘাটতিগুলোর কারণে। পুলিশি অসদাচরণ যেমন গণমামলার ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা, কিছু নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শন এবং প্রমাণ জালিয়াতি। অনেক অভিযুক্ত কর্মকর্তা পূর্বের অবস্থানে রয়ে গেছেন। আইসিটি ও অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। প্রতিশোধমূলক সহিংসতাসহ অন্যান্য অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা এখনো দায়মুক্তি ভোগ করছে।
সরকারি ও বেসরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ওএইচসিএইচআর-এর কাছে মনে হয়েছে এ বিক্ষোভ চলাকালে ১,৪০০ জনের মতো মানুষ নিহত হতে পারে, যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হয়। আরও হাজার হাজার গুরুতর আহতরা জীবন বদলে দেয়ার মতো গুরুতর আঘাতের শিকার হয়েছেন। ওএইচসিএইচআরের নিকট পুলিশ ও র‍্যাব প্রদত্ত তথ্য অনুসারে ১১ হাজার ৭ শত জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়। 

হতাহতের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। শিশুরা হত্যা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পঙ্গু, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটক, নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের মন্দ আচরণের শিকার হয়েছে। বিক্ষোভে প্রথমদিকের অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরাও নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়। যার মধ্যে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি এবং কিছু নথিভুক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘটিত যৌন নির্যাতন। ওএইচসিএইচআর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা হিসেবে যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি সম্পর্কিত অভিযোগ পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্পর্কিত তথ্য কম আসার পরিপ্রেক্ষিতে ওএইচসিএইচআর মনে করে যে, এটি যৌন সহিংসতার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ভিকটিমদের পরিপূর্ণ সহায়তার জন্য এর প্রভাব অনুসন্ধানের আগামীদিনে এর গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন।  

পুরনো আইন ও নীতি, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন কাঠামো এবং আইনের শাসনের অবক্ষয়ের কারণে  প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে শক্তির ব্যবহার হয়েছে। পুলিশের সামরিকীকরণ, নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে। সাবেক আওয়ামী সরকার শান্তিপূর্ণ নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর নির্ভর করেছিল। এমন নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির কারণে বিরোধীরাও সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে প্রতিবাদ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়।

ওএইচসিএইচআর-এর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং চলাকালে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছে, জরুরিভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে যাতে একই ধরনের গুরুতর মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই লক্ষ্যে, ওএইচসিএইচআর এই প্রতিবেদনে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের সংস্কার, দমনমূলক আইন ও নীতি বাতিল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সাজুয্য রেখে আইন সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসন খাতের সংস্কার, এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর পরিবর্তন যাতে করে বৈষম্য কমানো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। 

এই ক্ষেত্রে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে ন্যায্য এবং স্বাধীন ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকারের পদ্ধতি স্থির করা যা জাতীয় মানসিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে। এর অংশ হিসেবে ওএইচসিএইচআর একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ এবং পরামর্শের মাধ্যমে একটি সামগ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবতানির্ভর ক্রান্তিকালীন বিচার প্রক্রিয়ার সুপারিশ করছে। এ বিচার প্রক্রিয়া দাঁড় করানোর লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সাযুজ্যময় সবচেয়ে দায়ী অপরাধীদের জন্য বিচার নিশ্চিত করা। এটি করা হবে ভিকটিমকেন্দ্রিক এক বৃহৎ অ্যাপ্রোচ অনুসরণের মাধ্যমে যা মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিচার এবং সুরক্ষায় সহায়ক হবে। এ কাজটি করা হবে সত্যানুসন্ধান, ক্ষতিপূরণ, স্মৃতিসংরক্ষণ, নিরাপত্তা সেক্টর কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই এবং অন্যান্য ব্যবস্থা যা পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা দেবে। এই ধরনের উদ্যোগ সামাজিক সংহতি, জাতীয় নিরাময় এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সমপ্রদায়ের পুনর্মিলনকে সহায়তা করবে।
ওএইচসিএইচআর দায়বদ্ধতা সমর্থন করার লক্ষ্যে প্রতিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের আরও স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের সুপারিশ করছে। ওএইচসিএইচআর এই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসরণ ও বাস্তবায়নের সুবিধাসহ বাংলাদেশকে অব্যাহত সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত।

ওএইচসিএইচআর ঘটনার ফলাফল এবং সুপারিশগুলো অনলাইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও অন্যান্য ২৩০ বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার গ্রহণের ভিত্তিতে তৈরি করেছে। সরকার, নিরাপত্তা বিভাগ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তাদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ঘটনা সংশ্লিষ্ট সরজমিন অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন অনেক প্রাক্তন এবং বর্তমান সিনিয়র কর্মকর্তারা রয়েছেন। তথ্য-উপাত্তগুলোর সত্যতা ভিডিও এবং ফটো, মেডিকেল ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং অস্ত্র বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি ঘটনা বা অপরাধ ঘটেছে এবং তা বিশ্বাস করার মতো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আছে সেগুলোও ওএইচসিএইচআর অনুসন্ধান করা হয়েছে। একজন অপরাধীর অপরাধ প্রমাণের জন্য এসব মান নিয়ন্ত্রক হিসেবে ফৌজদারি কার্যধারায় অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের চেয়ে কম। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরও ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।

যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ১৫ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা অন্যায়ভাবে প্রতিবাদীদের দমন করতে চেয়েছে। জুলাইয়ের শুরুর দিকে তখনকার সরকারের নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ বলতে থাকে যে, এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল। ফলে এই আন্দোলন সরকারের জনপ্রিয়তার জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। এর কয়েকদিন পরেই ‘রাজাকার’ ইস্যু সামনে আসে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাইভেটভাল এবং প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিতে থাকেন যে, তিনি কঠোর অবস্থান নেবেন। এক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করবেন। তার কথার প্রতিধ্বনি ওঠে সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে। তারা ছাত্রদের আন্দোলন বৈধ করে দিতে এবং ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। চলতে থাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক, নির্যাতন ও সব রকম অত্যাচার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor