অবৈধ দখলদাররা গিলে খাচ্ছে পতেঙ্গা সৈকত, মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায়
অবৈধ দখলদাররা গিলে খাচ্ছে পতেঙ্গা সৈকত। চট্টগ্রামের অন্যতম এ বিনোদন কেন্দ্রের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে স্থাপন করা হয়েছে শত শত অবৈধ দোকান। বসানো হয়েছে নাগরদোলাসহ নানা রাইড। অবৈধ এসব স্থাপনা থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় কোটি কোটি টাকা। এ টাকার পুরোটাই যাচ্ছে দখলদার প্রভাবশালীদের পকেটে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিংরোড নির্মাণ করে সরকার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর অর্থায়নে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সিডিএ। এ প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গায় সাগরপাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় পর্যটন কেন্দ্র। সৌন্দয বৃদ্ধির জন্য লাগানো হয় কয়েক হাজার গাছ। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৫ কিলোমিটার এলাকাই গিলতে শুরু করে অবৈধ দখলদাররা। সৈকতের বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে তিন শতাধিক খাবার, ঝিনুক, মালাই চা, কসমেটিক্সের দোকান। এ ছাড়া বসানো হয়েছে নাগরদোলা, বিচ বাইক, ঘোড়াসহ অন্যান্য বিনোদনের বিভিন্ন রাইড। বাদাম, ঝালমুড়িসহ নানান ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকান বরাদ্দ দেন স্থানীয় প্রভাবশালীদের কয়েকটি চক্র। এ চক্রে রয়েছে মোহাম্মদ মাসুদ ওরফে কুত্তা মাসুদ, ওয়াহিদুল আলম ওরফে ওয়াহিদ মাস্টার, মাইনুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, সাহাব উদ্দিন, তাজুসহ কয়েকজন। তারা দোকান বরাদ্দের নামে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে এককালীন নেন ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ভাড়া হিসেবে দৈনিক নেন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বাদাম ও অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে এককালীন নেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। দৈনিক নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। সৈকতে ভ্রাম্যমাণ বাদাম, ঝালমুড়িসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানদারের সংখ্যাও কয়েক শত। সব মিলিয়ে পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় মাসে কয়েক কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজির বড় একটা অংশ যায় পুলিশসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পতেঙ্গা সৈকত অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে দোকান ও স্থাপনা তৈরির বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে। এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করা হবে। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, স্থানীয় কয়েকটি চক্র মিলে পুরো পতেঙ্গা সৈকতে নষ্ট করে দিয়েছে। সিডিএর লাগানো গাছ ও বাগান নষ্ট করে অবৈধ দোকান নির্মাণ করেছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার সাকিলা সুলতানা বলেন, অবৈধ এসব দোকান উচ্ছেদের জন্য আমরা সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে অনুরোধ করেছি। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দোকানগুলো উচ্ছেদ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের নামে চাঁদা আদায়ের সুযোগ নেই। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।