Bangladesh

অবৈধ বালু উত্তোলন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ১৫ চিঠি

৫ অক্টোবর রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণাঘাট থেকে বাহরিয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে আমরা সাতটি ড্রেজার দেখতে পাই। ড্রেজারগুলোর চারপাশে দুটি স্পিড বোট টহল দিচ্ছিল, যেন অন্য কোনো জাহাজ বা মাছ ধরার নৌকা এর কাছাকাছি যেতে না পারে।

৫ অক্টোবর, রাত সাড়ে ১২টা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে জনমানবহীন মেঘনা নদীর বুক চিরে চলছিল আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। চাঁদপুর সদর উপজেলার এই অংশের মানুষ অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছেন। তারপরও নৌকার মাঝি আমাদের সতর্ক করলেন যেন কোনো ধরনের আলো না জ্বালাই বা শব্দ না করি।

‘আলো জ্বালালে বা শব্দ করলে বিপদ হতে পারে’, বলেন তিনি।

তার ভয় এতটাই বেশি ছিল যে প্রায় ২০ মিনিট চলার পরে নৌকার ইঞ্জিনটিও বন্ধ করে দেন। নৌকাটি নিঃশব্দে স্রোতের তালে ভাসতে ভাসতে এগোতে থাকে।

একটু পরেই আমাদের নৌকা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে মেঘনার মাঝখানে একটি অর্ধবৃত্তাকার জায়গা জুড়ে টিমটিমে আলো জ্বলতে দেখা গেল। আরও খানিকটা এগিয়ে যেতেই আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রাতের নীরবতা ভেদ করে আমাদের কানে আসছে তীব্র শব্দ। এই শব্দ আসছে ড্রেজার থেকে। সামনে স্পষ্ট দেখা যায় নৌপুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

এর মাত্র দুই দিন আগে ৩ অক্টোবর মেঘনার গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য নয় জনকে গ্রেপ্তার এবং একটি বাল্কহেড ও একটি ড্রেজার জব্দ করে নৌপুলিশ। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, বাল্কহেড ও ড্রেজারটি চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের।

গত ৫ অক্টোবর রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণাঘাট থেকে বাহরিয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে আমরা সাতটি ড্রেজার দেখতে পাই। ড্রেজারগুলোর চারপাশে দুটি স্পিড বোট টহল দিচ্ছিল, যেন অন্য কোনো জাহাজ বা মাছ ধরার নৌকা এর কাছাকাছি যেতে না পারে।

সেখানে এতটাই অন্ধকার ছিল যে ছবি তোলা বা ভিডিও করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তার জন্য আমরা নৌকা ঘুরিয়ে ফেলি।

আমাদের নৌকার মাঝি বলেন, ‘এসব ড্রেজার সেলিম খান ও তার পরিবারের সদস্যদের। সেলিম খানের লোকজন রাতে এই এলাকায় মাছ ধরার নৌকাও ঘেঁষতে দেয় না, যাতে তাদের বালু উত্তোলনের কথা কেউ জানতে না পারে।’

নৌকার মাঝির নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তার পরিচয় প্রকাশ করছি না।

বর্তমানে মেঘনা নদী থেকে বালু তোলা নিষিদ্ধ। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাহরিয়া, হরিণা ও আলুর বাজার থেকে প্রায় প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বালু তোলেন সেলিম খানের লোকজন।

এসব বালু পরবর্তীতে হরিণাঘাট, মুন্সীগঞ্জ, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৪ অক্টোবর এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সেলিম খান প্রথমে জানান, তিনি অসুস্থ, কোনো কথা বলতে চান না। তারপরও প্রশ্ন করা হলে তিনি কল কেটে দেন এবং এরপরে আর ফোন ধরেননি, এমনকি ম্যাসেজেরও উত্তর দেননি।

সেলিম খানের উত্থান

স্থানীয়রা বলছেন, সেলিম খানের অন্তত ৫০টি ড্রেজার রয়েছে। এসব ড্রেজার প্রতি মাসে আনুমানিক তিন কোটি ঘনফুট বালু তুলতে পারে, যার পাইকারি মূল্য অন্তত ছয় কোটি টাকা।

আশির দশকে সেলিম খান রিকশা চালাতেন বলে জানা যায়। তবে, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে পরিচয় ও সখ্যতার সুবাদে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা।

সেলিম খান

সেলিম খান।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেলিম খান এক সময় ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দীপু মনির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তখন থেকেই মেঘনা থেকে বালু তুলে আসছেন।

বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সেলিম খানকে এখন বলা হয় ‘বালুখেকো’।

নথি অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল—এই চার বছরেই দীপু মনির নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার ২১টি মৌজা থেকে ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ঘনফুটের বেশি বালু তুলেছেন সেলিম খান।

বর্তমানে প্রতি সিএফটি সাদা বালুর পাইকারি দর দুই টাকা। এই হারে গত চার বছরে তিনি যে পরিমাণ বালু তুলেছেন তার মূল্য প্রায় এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।

বালু ব্যবসা থেকে হাজারো কোটি টাকা আয় করলেও সরকারি কোষাগারে এক পয়সাও দেননি সেলিম খান।

গত ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সেলিম খানকে ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উত্তোলন করা বালুর রয়্যালটি হিসেবে এই টাকা দেওয়া না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় জেলা প্রশাসন।

গতকাল ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সেলিম খান রয়্যালটির টাকা পরিশোধ করেননি বলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান।

তদন্তে দেখা গেছে, দীপু মনির সমর্থন ছাড়া সেলিম খান তার বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতেন না। তিনি সেলিম খানের জন্য অন্তত তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন।

দীপু মনি ও সেলিম খানের এই ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা ইতোপূর্বেও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসের অনুষ্ঠানে এই আলোচনা আবারও সামনে আসে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরেন।

সরাসরি নাম উল্লেখ না করে মনজুর আহমেদ চৌধুরী ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নদী দখলকারীরা রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। যারা মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ২৫ মন্ত্রীর বর্তমান মন্ত্রিসভায় কেবলমাত্র একজন নারী মন্ত্রী আছেন। তিনি হচ্ছেন চাঁদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপু মনি। চাঁদপুর জেলায় মোট পাঁচটি সংসদীয় আসন আছে। সেখানে দীপু মনি ছাড়া আর কেউ মন্ত্রী নন।

নদী দখলকারী, বালু উত্তোলনকারী ও তাদের সহযোগীদের বিষয়ে কথা বলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে অপসারণের কারণ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকার ‘জনস্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সেলিম খানের শক্তি দীপু মনি

যেখান থেকে এটা স্পষ্ট যে সেলিম খানের অবৈধ বালুর ব্যবসাকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন দীপু মনি।

২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দীপু মনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অন্তত ১৫টি আধা সরকারি লেটার বা ডিও লেটার লিখেছেন, যাতে সেলিম খান ও তার পরিবারের সদস্যরা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে এবং ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করতে পারেন।

একের পর এক চিঠিতে তিনি সরকারি দপ্তরগুলোকে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজকে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং নদীর তলদেশে উত্তোলনযোগ্য বালুর পরিমাণ নির্ধারণের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চালানোর অনুমতি দিতে ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানান।

সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম খান নিজেই। আর শান্ত ও বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের মালিক তার ছেলে ও মেয়ে।

২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে আট মাসে দীপু মনি সাতটি চিঠি দেন সরকারি কার্যালয়গুলোতে। এর তিনটি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, দুটি তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, একটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং একটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে দেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালের ১৬ জুন একই দিনে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের কাছে দুটি চিঠি পাঠান দীপু মনি।

একটি চিঠিতে ‘বিশেষভাবে অনুরোধ’ করা হয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রী যেন ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে তিন বছরের জন্য মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনে সেলিম খানকে অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান।

দীপু মনি আরেকটি চিঠিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান, যেন সেলিম খানের মেয়ের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজকে মেঘনায় একটি হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

২০১৯ সালে দীপু মনির ছয়টি চিঠির মধ্যে দুটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, দুটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, একটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং একটি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছিল।

ওই বছর তিনি একই দিনে তিনটি চিঠি দেন দুটি মন্ত্রণালয় ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে। এসব চিঠিতে সেলিম খানের বালুর ব্যবসাকে সহায়তা করতে বলা হয়।

প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় তিনি অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনবার চিঠি দেন এবং মুখ্য সচিবের হস্তক্ষেপ চান বলে আমাদের হাতে থাকা নথিতে প্রতীয়মান হয়।

২০২১ সালের ৩ আগস্ট দীপু মনি ভূমি সচিবকে চিঠি দেন। সেখানে তিনি ২০১৯ সালে দেওয়া তার চিঠির বিশদ উল্লেখ করেন এবং সেলিম খানের ছেলের মালিকানাধীন শান্ত এন্টারপ্রাইজের পক্ষে ২০২০ সালের হাইকোর্টের একটি আদেশ মনে করিয়ে দেন।

এরপর দীপু মনি ভূমি সচিবকে চিঠি দিয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চাঁদপুরের উপ-পরিচালককে বাশগাড়ী এলাকার একটি বালুমহাল শান্ত এন্টারপ্রাইজের কাছে ‘বুঝিয়ে দিতে’ এবং সেখান থেকে আট কোটি ৬০ লাখ সিএফটি বালু উত্তোলনের ‘নির্দেশ’ দিতে বলেন।

২০১৯ সালে দীপু মনির কাছ থেকে দুটি চিঠি পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। অবসরপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বালুমহাল ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য সচিবদের কোনো ভূমিকা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানান, নীতিগতভাবে মুখ্য সচিবদের এমন কোনো ভূমিকা নেই, যদিও এমন কিছু কোথাও লেখা নেই।

তিনি বলেন, ‘দীপু মনি এটা করতে পারেন না। তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে এটা করেছেন।’

বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সেলিম খান ও তার অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তার।

প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি জানান, সেলিম খানের অবৈধ বালির ব্যবসা সম্পর্কে তিনি জানেন না এবং এর থেকে তিনি কোনোভাবেই আর্থিক সুবিধা নেননি।

তাহলে সেলিম খানের পক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে দীপু মনি এত চিঠি কেন পাঠিয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার একটি ইউনিয়নের দলীয় নেতা ও চেয়ারম্যান যখন বৈধভাবে বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা চেয়েছেন, তখন মেঘনা নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং কিছু এলাকার ভাঙন রোধে তাকে বালু উত্তোলনে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সময়ে উল্লিখিত স্বব্যাখ্যাত ডিওগুলো আমি দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আমার এলাকার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ কোনো বৈধ কাজ করতে চাইলে সে কাজে তাকে সহায়তা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’

‘আমরা চাপে আছি’

কিন্তু, সেলিম খান বৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন না।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সেলিম খানকে কখনোই কোনো বালুমহাল ইজারা দেয়নি। সরকারি নথিও তাই বলছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তিনি (সেলিম খান) আদালতের আদেশ ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করছেন। হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তিনি এই আদেশ পেয়েছিলেন। আপিল বিভাগ পরবর্তীতে হাইকোর্টের এই আদেশ বাতিল করেছেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তোলনকৃত বালুর রয়্যালটি আদায় করতে।’

নদীভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকির কারণে গত বছর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন মেঘনায় ১০টি বালুমহাল বাতিল করেছে।

তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে এসব বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সেলিম খান তদবির করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি কর্মকর্তা।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেলিম খান নিয়মিত ডিসি অফিসে আসেন এবং জানতে চান, কেন তাকে বালুমহাল ইজারা দিতে দেরি হচ্ছে। আমরা চাপে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে ডিসি অফিসে অনেক ডিও লেটার এসেছে। কাজেই আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি যে কার প্রভাব খাটিয়ে সেলিম খান আরও বালু তুলতে চাইছেন।’

গত ১৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার মেঘনা নদীর তলদেশের প্রায় ৪১৫ একর জমিকে বালুমহাল হিসেবে ঘোষণা করে। ইজারা দেওয়া হলে এই জায়গা থেকে প্রায় ৩০ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করা যাবে।

এই বালুমহাল বাহরিয়া এলাকায় অবস্থিত, যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেলিম খান সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেতে জোর তদবির করছেন।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সেলিম খান এসব করে বেড়াচ্ছে। এগুলো তার একার পক্ষে করা কোনোভাবেই সম্ভব না।’

নদী থেকে বালু উত্তোলন ছাড়াও সেলিম খানের নাম আলোচনায় আসে অবৈধ ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময়ও। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী এই অভিযানের সময় তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন বলেও জানা গেছে।

বর্তমানে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা চলছে এবং তার দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ ছাড়া, ২০২২ সালের মার্চ মাসে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও দীপু মনির ভাই ওয়াদুদ টিপুর সঙ্গে সেলিম খানের নাম উঠে আসে।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও মেঘনা নদী থেকে অসৎ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে সেলিম খানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারের এক মাস পরও তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভায় ‘বিশেষ অতিথি’ হিসেবে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দীপু মনি ওই সভায় ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন এবং সেলিম খানকে ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি’ হিসেবে সম্বোধন করে বক্তব্য রাখেন।

গত প্রায় এক দশক ধরেই সেলিম খানের প্রতি দীপু মনির অব্যাহত সমর্থনের বিষয়টি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগে আলোচনা ও বিতর্কের অন্যতম বিষয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সেলিম খানকে দীপু মনি যতটা ব্যবসায়িক সুবিধা দেন ততটা আর কোনো দলীয় নেতাকে দেননি। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণেই সেলিম খানকে দীপু মনি সহযোগিতা করেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d