Bangladesh

অভ্যুত্থানে নারীদের যৌন নির্যাতন করে নিরাপত্তা বাহিনী ও আ’লীগ সদস্যরা : জাতিসঙ্ঘ

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয় সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য মেয়েদের ও মহিলাদের যৌন নির্যাতন করেছিল।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মহিলা বিক্ষোভকারীদের উপর শারীরিক আক্রমণ প্রায়শই মুখ, বুক, শ্রোণী এবং নিতম্বের মতো নির্দিষ্ট শরীরের অংশগুলোকে লক্ষ্য করে করা হতো, কারণ অপরাধীরা কেবল ব্যথা দেয়ার জন্যই নয় বরং স্পষ্টতই নারীদের তাদের লিঙ্গের ভিত্তিতে অপমানিত ও অবমাননা করার চেষ্টা করেছিল।’

ওএইচসিএইচআর গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেনেভা অফিস থেকে ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য করে সহিংসতা প্রায়শই লিঙ্গভিত্তিক ছিল, যা বিশেষভাবে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপমানজনক ধরণগুলোকেই প্রতিফলিত করে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অপরাধীরা নারীদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার, আন্দোলনের মধ্যে নারী নেতৃত্বকে দুর্বল করার এবং প্রতিষ্ঠিত পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতিকে শক্তিশালী করার হাতিয়ার হিসেবে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালিয়েছিল।

শারীরিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে লিঙ্গভিত্তিক অপমান করা হতো, মহিলা বিক্ষোভকারীদের প্রায়শই নানা ধরনের অন্যান্য অবমাননাকর শব্দ যেমন ‘বেশ্যা’, ‘মাগী’ এবং ‘পতিতা’ বলে উল্লেখ করা হতো।

ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পুরুষ এবং পুলিশ অফিসাররা প্রায়শই ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্ন করা এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ধরণের যৌন সহিংসতার মৌখিক হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে যে, তারা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা শারীরিক যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তির নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য বিবরণ পেয়েছে।

একটি ঘটনায়, আগস্টের শুরুতে ঢাকায় বাঁশের লাঠি হাতে একদল লোক একজন মহিলাকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, সে একজন বিক্ষোভকারী কিনা।

জাতিসঙ্ঘের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুসারে, তার ব্যাগ ও ফোন তল্লাশি করে একটি বাংলাদেশী পতাকা পাওয়ার পর তারা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, তার চুল ছিঁড়ে ফেলে, তার জামা ছিঁড়ে ফেলে, তার স্তন ও নিতম্বে হাত দেয়, তার বুকে আঁচড় দেয় এবং যৌনতাসূচক গালিগালাজ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে- জুলাই মাসে ঢাকায় ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই সমর্থক একজন বিক্ষোভকারী মহিলা, তার মা এবং তার পরিবারের সকল মহিলাকে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, যৌনতাসূচক অশ্রাব্য গালিগালাজ করার সময় তার স্তন ও যৌনাঙ্গে হাত দেয়।

ঘটনার পর ফোন করে ভুক্তভোগী তার ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আবার ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানিয়েছেন যে- ছাত্রলীগের লোকেরা কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন মহিলাকে লাঞ্ছিত করেছিল, এদের মধ্যে দু’জন ছাত্রীকে তারা আটক ও হাত দিয়ে নির্যাতন করে এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করে।

বাংলাদেশের ভুক্তভোগীরা প্রায়শই কার্যকর রিপোর্টিং ব্যবস্থার অভাব, অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধের ভয়, বিশেষ করে যদি তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হন এবং ব্যাপক সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে যৌন সহিংসতার রিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকেন।

জাতিসঙ্ঘের অধিকার সংস্থা আরো বলেছে, ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা অনেক সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, মনোসামাজিক এবং আইনি পরিষেবাও পান না। এমনকি যদি তারা রিপোর্ট করতে ইচ্ছুক হন, তবুও তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা, সম্মান ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেয়া হয় না।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, সম্ভবত তারা ঘটনা নথিভুক্ত করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটনা ঘটেছে এবং তাই যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লিঙ্গ-সংবেদনশীল ঘটনা তদন্তের জন্য দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto