অর্থনীতিতে কালো মেঘ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে পোশাকের অর্ডার বিলম্বিত বিপাকে রফতানিকারকরা, মূল্যস্ফীতির ভারে সাধারণ মানুষ বিপাকে, দিনে দিনে বেকারত্ব বাড়ছে, বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আর্থিক ক্ষমতার অভাব, রাজস্ব আদায়েও মন্থরতা, সরকারি-বেসরকারি ঋণ নির্ভরতা, বেসরকারি বিনিয়োগে অগ্রগতি নেই; বরং কমেছে, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিরতায় প্রভাব, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক সূচকগুলোর সবখাতেই নিম্নমুখী ধারা
বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই দুর্দশায় দেশের আর্থিক খাত।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বছরেও সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড় জমায় জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ২০২৪ সালে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যা আট হাজার ৮৪২ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ১৫০ টাকা হিসাবে)। যা আগের বছরের চেয়ে ৩৩ গুণ বেশি। ২০২৩ সালে যা ছিল ২৬৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যেখানে এই সময়ে সুইস ব্যাংকে সারা বিশ্বের আমানত কমেছে। স্বৈরাচার হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক ছাত্রদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য ও নানাভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়াদের অর্থের উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পতিত ফ্যাসিস্টের দোসর ও কালোটাকার মালিকদের কেউ কেউ এসব ছাত্রদেরকে ডোনার হিসেবে টাকা ঢালছেন এমন অভিযোগও আছে। অতীতের ভুল সংশোধন না করে একটি গোষ্ঠী অবৈধভাবে অর্থ আয় ও অর্থ পাচারে এখনও মত্ত আছে। একই সঙ্গে সঠিক নীতি, সংস্কার ও পরিকল্পনার অভাবে সেই দুর্দশা আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে দেশের আর্থিকখাতকে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের কারনে বৈশ্বিক অস্থিরতায় প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এই ধারাবাহিকতায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ছাড়া আর্থিক খাতের কোন সূচকেই সফলতা নেই। যদিও রফতানি আয়ে আগামী দিনে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নীতি ৩ মাসের স্থগিতাদেশ আগামী ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে। এ জন্য পশ্চিমা অনেক ক্রেতা পোশাকের আগামী প্রান্তিকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। তাই রফতানি আয়ের সফলতা নিয়ে আগামী দিনে শঙ্কা ভর করেছে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা প্রতিদিনই বাড়ছে। যা সরকারি-বেসরকারি উভয়খাতেই। বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আগামীদিনে সরকারকে ভোগাবে। শুধুমাত্র জুনেই বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি ঋণ সরকারিভাবে পাওয়ার আশা করছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১৩০ কোটি ডলার এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি ও ওপেক থেকে ২২০ কোটি ডলার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঋণ মূলত বাজেট সহায়তা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হবে। অপরদিকে দেশে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল-এই তিন মাসে ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। জানুয়ারি ২০২৫ শেষে দেশের বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে ঋণগ্রহণের হার বাড়তে শুরু করে, এবং এপ্রিল শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে- যা জানুয়ারির তুলনায় ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া মূল্যস্ফীতির ভারে সাধারণ মানুষ বিপাকে, দিনে দিনে বেকারত্ব বাড়ছে, বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আর্থিক স্বক্ষমতার অভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা, রাজস্ব আদায়েও মন্থরতা, বেসরকারি বিনিয়োগে অগ্রগতি নেই; বরং কমেছে, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক সূচকগুলোর সবখাতেই নি¤œমুখী ধারা। বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমাতে রাজস্ব আদায় একমাত্র চালিকাশক্তি। অথচ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট তিন লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এক কথায় আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিতে কালো মেঘের শঙ্কা ভর করেছে।
এমনকি এ থেকে উত্তরণে কোন পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না। বরং ৩৭৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুই হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এতে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। একই সঙ্গে ছাত্র জনতার বিপ্লবের পরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং ব্যবসার পরিবেশ না থাকায় বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ায় ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীদের বেতনও তুলতে পারছেনা ব্যবসায়ীরা। যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি অনিশ্চয়তার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগও। এদিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে। যে কারণে দেশের পোশাক নির্মাতারা পরবর্তী গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের কাজের আদেশ নিশ্চিতকরণে বিলম্ব দেখতে পাচ্ছেন, কারণ মার্কিন খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলি জুলাইয়ের প্রথম দিকে মার্কিন প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে। পশ্চিমা ক্রেতারা সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন্ন মৌসুমের জন্য, যেমন- গ্রীষ্ম এবং শরৎকালের জন্য অর্ডার দেন। কিন্তু তারা অপেক্ষা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ৯ জুলাই কি সিদ্ধান্ত নেন। রফতানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক খাত তাই বিপাকে আছে পোশাকের অর্ডার নিয়ে। আগামী দুই মৌসুমে পোশাকের বাজারে এই প্রভাব পড়লে অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে। অবশ্য বাংলাদেশের রফতানিকারকরা আশা করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশগুলির জন্য প্রস্তাবিত হার পুনর্বিবেচনা করবে।
দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন হয়েছে। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈারাচর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তৈরি হয় নতুন পরিস্থিতি। এর পরও কাটেনি অস্থিরতা, নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন বারবারই রাজপথে নেমেছে। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিনিয়োগের বাধার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে বেকারত্বের হারও। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের মতো নতুন বিনিয়োগকারীরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেই আবার বলছেন- নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ স্থিতিশীল হবে না। তাই দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য চান। ইতোমধ্যে অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হওয়ায় স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যখন বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তখন সুইস ব্যাংকে আমানত বাড়া খুবই উদ্বেগের। তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন সুশাসনের অভাব এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করায় টাকা পাচারের লাগাম বর্তমান সরকারের টানা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে হারে বড় হয়েছে সেই অনুপাতে বাড়েনি কর্মসংস্থান। বরং বাড়ছে বেকারত্বের অভিশাপ। এদের মাঝে আবার শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত বছরের শেষে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ১০ হাজার। ২০২৪ সাল শেষে দেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু সুইস ব্যাংক নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। কারণ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে টাকা রাখা হয়েছে, সেটা মূলত দুর্নীতির। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মূলত তিনটি কারণ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। কেননা দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারও বেড়েছে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থ পাচার বাড়ছে।
এদিকে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাকখাত শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। ট্রাম্পের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার মেয়াদ আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে। এরপর কি হবে এ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন পশ্চিমা পোশাক ক্রেতারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলির কাজের অর্ডার এখনও ধীরগতিতে রয়েছে কারণ তারা এখন ‘অপেক্ষা করো এবং দেখো’-এই নীতিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পরবর্তী মৌসুমের জন্য পোশাকের অর্ডারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, পরবর্তী মৌসুমের জন্য মার্কিন কাজের আদেশ এখনও বাড়েনি, কারণ ক্রেতারা ট্রাম্পের স্থগিত থাকা পাল্টা শুল্কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সাধারণত দেশীয় বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সেবা পেতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় নতুন দেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। অনেকে আবার গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা সঙ্কটে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন দেশে বিনিয়োগের পূর্বে সে দেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। এরপর তারা যৌথভাবে অথবা সম্পূর্ণ এককভাবে বিনিয়োগ করেন । কিন্তু দেশের যা অবস্থা তাতে দেশীয় বিনিয়োগকারীরাই যেভাবে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছে না, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভরসা পাবে কিভাবে বলেও প্রশ্ন রাখেন একাধিক ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নি¤œ প্রবণতার কারণ জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার বলেন, একজন বিনিয়োগকারী তখনই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যখন তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর ওপর ভরসা পান। বিনিয়োগের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হয়। দুঃখজনক হলেও এটি স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ কখনোই ভালো ছিল না। এর অন্যতম কারণ হলো, দেশের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিশ্বাসযোগ্যতা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব। এর ওপর গত কয়েক বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেনি।
ফিকি সভাপতির মতে, গত ১০ মাসে সরকার যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, অথর্নীতির চাকা সচল না হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের আশা করা শুধু অযৌক্তিক নয়, দুরূহ হবে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বিডার ফেসবুকে ‘আমাদের আমলনামা’ নামে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি জানান, গত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিনোয়োগের পরিমাণ আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় একই। যদিও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরে এত তাড়াতাড়ি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের জায়গায় ফিরে গেছে, যা আশার কথা।