Trending

‘অর্থনীতিতে পাঁচ বড় চ্যালেঞ্জ’, পুঁজিবাজার অস্থিরতায় প্লেয়ার ও রেগুলেটররা দায়ী : অর্থ উপদেষ্টা

দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে এর খেলোয়াড় ও নিয়ন্ত্রকদের অনেক দোষ আছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া তিনি বলেন, প্রকাশ্যে কারচুপি নেই, তাই মূল্যস্ফীতি বেশি দেখাচ্ছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি আগে ৮ বা ৯-এ আটকে রাখা হলেও এখন কোনো ‘কারচুপি নেই’ বলেই মূল্যস্ফীতি বেশি দেখাচ্ছে।

বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে তাই যেন প্রকাশ করা হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই।”

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও একই রকমের। আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার ন্যূনতম কোনো মূল্য নেই, এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসেবে ব্যবহার হবে।

এটা জানা দরকার। আবার শেয়ার প্রাইস কমে গেলেই আন্দোলন করেন, আমি এর পক্ষে নই। এ জন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমি বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছি না।

পুঁজিবাজারের প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের অনেক দোষ আছে। আমি মনে করি এটা প্রচার করা দরকার।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি, একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানান বিভ্রাট রয়েছে। তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

আমরা এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো আমাদের কাছে নানান প্রশ্ন করে, তারা বোঝাতে চায় আগেই কম ছিল ইত্যাদি। এ নিয়ে আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, আগের তথ্য লুকানো ছিল, আমরা সঠিকটা উপস্থাপন করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করার চেষ্টা করছি। যাতে ব্যবসায়ীরা এক স্থান থেকে সব তথ্য পান। তথ্যের জন্য ব্যবসায়ীদের ১০ জায়গায় দৌড়াতে হবে না। আরো সুসংহতভাবে তথ্য যদি ম্যানেজমেন্ট করতে না পারি, তাহলে সামনে আরো সমস্যা তৈরি হবে। আমাদের এই মিথ্যা তথ্যের প্রয়োজন নেই, কারণ প্রিয় মিথ্যা যন্ত্রণাদায়ক।’

ব্যাংকিং অ্যালমানাকের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সিকদার, বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন,  গ্রন্থটির  নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জিল্লুর রহমান অর্থনীতিতে পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ চলছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও সন্তোষজনক পর্যায়ে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে অন্য তিনটির ক্ষেত্রেও ২০২৫ সালের মধ্যে ইতিবাচক কিছু দেখা যাবে। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যাবসায়িক শ্রেণির (অলিগার্ক) প্রভাব কমানোও অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ।

এখন অর্থনীতির চাকা ঘোরানো বা বেগবান করা দরকার বলে মন্তব্য করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অবশ্য এ কাজ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়, অন্যদেরও সমান দায়িত্ব আছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অনেক কিছু করার আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায় (এসএমই) থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কিভাবে আস্থার জায়গা তৈরি করা যায় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে পরিবারগুলোকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’ তবে অলিগার্কদের বাজার নিয়ন্ত্রণের শক্তি কমানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। 

অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমরা আর্থিক খাতগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা চাই। যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন এনেছি।’

তিনি জানান, ব্যাংকিং অ্যালমানাক তিনি আগে কখনো দেখেননি, শুক্রবার প্রথম দেখেছেন। দেখে তাঁর মনে হয়েছে, এটি আমানতকারীদেরও কাজে লাগবে।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে ব্যাংকিং অ্যালমানাকে। ব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষাবিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শিক্ষাবিচিত্রা’র উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল, শাখা, পণ্যের তালিকাসহ সবই আছে এই বইয়ে।

বইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নরুল আমিন বলেন, হালনাগাদ তথ্য বইয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পদ্মা ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যরা দিয়েছে।

ব্যাংকিং অ্যালমানাক ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ উভয় রূপেই প্রকাশ হয়েছে। অ্যামাজন ডটকম, রকমারি ডটকম ও প্রকাশনা সংস্থা পাঠক সমাবেশের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এই বই কেনা যাবে। দাম এক হাজার ২৫০ টাকা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button