Trending

অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় মধ্যমেয়াদি কৌশলে সরকার

টানা পাঁচ বছরের বেশি সময় নানা রকম চাপের মধ্য দিয়ে পার করছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের আগে এ চাপ মোকাবিলায় অর্থনীতিতে কয়েকটি চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করে সরকার। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট তীব্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়তে থাকে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি নেওয়ার ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের অর্থনীতি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। যার সঙ্গে যোগ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। এ যুদ্ধের প্রভাব শুধু ইরান কিংবা ইসরায়েল নয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মধ্যমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো, আর্থসামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রস্তুতি এবং শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর মতো চ্যালেঞ্জগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন একটি অর্থবছর ২০২৫-২৬ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এদিকে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে অর্থবিভাগ। যা মোকাবিলার জন্য সম্ভাব্য মধ্যমেয়াদি কৌশল হিসেবে উৎপাদন বাড়ানো, আমদানি ব্যয় কমানো, রপ্তানি বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনসহ আরও কয়েকটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করে, দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সংকটে শিল্প উৎপাদন ও বিনিয়োগ স্থবিরতা ছিল উল্লেখযোগ্য। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বড় ধরনের একটা প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে। যা থেকে নিরাপদ নয় বাংলাদেশও। কেননা প্রয়োজনের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ খাদ্য আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। আর জ্বালানি খাত তো প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এসব সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কয়েকটি মধ্যমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করেছে। সেসব কৌশলের কিছু কিছু প্রস্তাবিত বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২ জুন উপস্থাপিত বাজেট ২০২৫-২৬, ২২ জুন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাটি শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টির আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের যে সময়সীমা পেছানো হয়েছে। তা খুব শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। এতে করে দেশের রপ্তানি খাত আরও বড় ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন কমেছে রপ্তানিমুখী শিল্পেরও। ব্যয় বেড়েছে কৃষিসহ অন্যান্য উৎপাদন খাতের। বিনিয়োগের ওপর এমন নেতিবাচক প্রভাবের কারণে নতুন কর্মসংস্থানে চলছে গতি ধীর। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে সোয়া ৩ লাখ। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার। গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ লাখ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর কর্মপরিকল্পনা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়াসহ বর্তমানের সার্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটও উচ্চাভিলাষী। বাস্তবায়নযোগ্য করার জন্য আরও ছোট করা উচিত। একই সঙ্গে সরকারের উচিত হবে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto