অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পে প্রতিটি কম্পিউটারের দাম পড়বে ৩১ লাখ টাকা
শুমারিতে ১.৬৬ কোটি টাকায় ১০৭ সেমিনার
উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ের লাগাম টানতে সরকারের প্রজ্ঞাপন, সার্কুলার, নির্দেশনা কোনোটাই কাজে আসছে না। লাগাম ছাড়া ব্যয়ের নেশায় মত্ত প্রকল্প প্রণয়নকারী সংস্থাগুলো। ফলে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে নির্দেশ দিচ্ছেন। তার পরও থাকছে না নিয়ন্ত্রণ। অর্থনৈতিক শুমারিতে ৪০টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিকে ব্যয় করা হয়েছে ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এতে প্রতিটির দাম পড়বে ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৫ টাকা। আবার কম্পিউটার সামগ্রীতে এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ১০৭টা সেমিনারে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রতি সেমিনার খরচ দেড় লাখ টাকার বেশি। খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠায় ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে ঘুরপাক খেয়ে মঙ্গলবার অনুমোদন পায়।
একনেকে পাস হওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান সব ব্যবসা, শিল্প, সেবা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ প্রণয়ন করার মাধ্যমে সময়ের বিবর্তনে অর্থনীতিতে যে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে তার স্বরূপ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় প্রথবারের মতো পূর্ণাঙ্গ স্ট্যাটিসটিক্যাল বিজনেস রেজিস্টার প্রণয়ন করতে চাচ্ছে বিবিএস। আর এ জন্যই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া। ২০২২ সালে প্রথমে প্রকল্পটি ৭৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৭ মেয়াদের প্রাথমিক প্রস্তাব করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের পিইসি সভায় বেশ কিছু খরচের ব্যাপারে আপত্তি জানায়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে মোট ৬৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আবার সংশোধিত আকারে প্রস্তাব করে ব্যুরো। এখন প্রকল্পটি কমিয়ে আড়াই বছরে বাস্তবায়নের জন্য ৫৭৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা।
শুমারি প্রকল্পের খরচের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, তখন পুনর্গঠিত ডিপিপিতেও কিছু অসামঞ্জস্যতা পায় পরিকল্পনা কমিশন। ১৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবিত ডিপিপি অপেক্ষা বর্তমান প্রস্তাবিত ডিপিপির মোট ব্যয় ৫১ কোটি ৬২ লাখ টাকা কমানো হলেও আবারও কিছু ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু অঙ্গ নতুন করে যোগ করা হয়েছে। একাধিক খাতে বিশেষ করে ইন্টারনেট বা ফ্যাক্স বা টেলেক্স, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণ ব্যয়, জরিপ, স্টেশনারি, কম্পিউটার সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে আগের পিইসিতে বলা হয়।
খরচের তথ্য বলছে, জরিপ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রশিক্ষণে ৬১ কোটি ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ৩০ মাসে চুক্তিতে যানবাহন ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। পরামর্শক ব্যয় চারজনে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে মোট ৪০টির জন্য ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কম্পিউটার সফটওয়্যারে ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ইন্টাননেট, ফ্যাক্সে প্রায় ৭ কোটি টাকা। আবার পরিবহন খাতে ব্যয় এক কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজর টাকা। যানবাহন ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে ব্যয় ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আবার কম্পিউটার সামগ্রীতে এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তথ্য ও পরিসংখ্যান সচিব শাহনাজ আরেফিনের কাছে কম্পিউটারের এতো দাম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কারণ এটার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলতে হবে। আর জনশুমারি প্রকল্পের কাজ চলছে। শেষ হয়নি। তাই ওই প্রকল্পের ট্যাব ও কম্পিউটার অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করা যাবে না।
১০৭টি সেমিনারের ব্যাপারে তিনি বলেন, জোনাল অপারেশন, পাইলটিং ও লিস্টিং করতে হবে। জনশুমারি ও গৃহগণনার সাথে এই প্রকল্পের তুলনা করলে হবে না।
শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য আবদুল বাকী গতকাল বলেন, তিনি এই প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে দুইবার পিইসি সভা করেছেন। ফলে মূল প্রস্তাবনা থেকে দেড়শ’ কোটি টাকা কমানো সম্ভব হয়েছে। এই প্রকল্পে যন্ত্রপাতির সংখ্যাই বেশি। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে আবার জানান।
tadalafil canada cost