Hot

অর্থবছরের প্রথম সাড়ে সাত মাস: সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। সরকারের এ ঋণ গ্রহণ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে সাত মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শেষ দেড় মাসে ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উলটো আগের ঋণের প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে সরকারের ব্যাংক ঋণের এমন চিত্র এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের আগস্টের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমেছে। আবার সঞ্চয়পত্র থেকেও কোনো ঋণ পাচ্ছে না সরকার। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করে সরকার। এই ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উেসর ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উেসর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। গত ৩০ জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস ১৫ দিনে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। অথচ গত ১ জুলাই থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ৬ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৪৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ১২৮ কোটি টাকা, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ৩৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আর এই ঋণের পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের ৩৪ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকাই নেওয়া হয়েছে ট্রেজারি বিলের বিপরীতে। সর্বনিম্ন ১৪ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৩৬৪ দিন মেয়াদে এই ঋণ নিতে পেরেছে সরকার। বাকি ঋণগুলো দেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের বিপরীতে। গত অর্থবছরও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরবরাহ করে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। আর বাকিটা নেওয়া হয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। এদিকে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। উলটো এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাত্ এই ছয় মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা বেশি ভাঙানো হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button