Hot

অর্থসংকটে ইতিহাসের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

ইতিহাসের সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২২.৪৮ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে যে তথ্য আছে, সেখানে এর আগের কোনো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এত কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়নি। গত অর্থবছরেই সর্বনিম্ন ২৩.৫৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার আইএমইডি প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এই চিত্র দেখা যায়।

আইএমইডির প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের ৫৮টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে অর্থ খরচ করেছে ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের বিপরীতে ছয় মাসে যে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা এর আগের যেকোনো সময়ের ছয় মাসের চেয়ে সর্বনিম্ন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোকে এখন বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলোর ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। গত তিন মাসে সরকারের অর্থায়ন থেকে যে টাকা খরচ করা হয়েছে, এর আগে এত কম অর্থ খরচ করার রেকর্ড নেই সরকারের। এ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২০.৩৭ শতাংশ। এর আগে কোনো বছরের ছয় মাসে এর চেয়ে কম খরচ হয়নি।

অর্থসংকটে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) এক প্রকল্প পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে আমার বিদেশি ঋণের প্রকল্পে সরকারের থেকে সিডি ভ্যাটের বরাদ্দ নিতে না পারায় ঋণের টাকা ছাড় করতে পারছি না। তাহলে বুঝতে পারছেন দেশীয় প্রকল্পগুলোর কী অবস্থা। অর্থসংকটে খুবই ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পগুলো।’

আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে এখনো খরচের খাতা খুলতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। গত অর্থবছর এক টাকাও খরচ করতে না পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার পাঁচ মাসে খরচ করেছে ৩.২৯ শতাংশ।

এ ছাড়া ৩.৫৪ শতাংশ খরচ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ৪.২৯ শতাংশ খরচ করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। আর ১০ শতাংশের কম খরচ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের চার মাসে খরচ এবং এডিপি বাস্তবায়ন হারে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংসদবিষয়ক বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়সহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ করেছে ৯ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। পাঁচ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা খরচ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। চার হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা খরচ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আর সর্বোচ্চ ৯৩.৪২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বাস্তবায়ন পরীবক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন এবং তহবিলের সীমিত ছাড়ও এডিপি বাস্তবায়ন হার কমিয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বছরের শুরুতে পেপার ওয়ার্ক থাকার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন প্রতিবছরই কিছুটা কম থাকে। তবে অনেক প্রকল্পেই কাজ হলেও অর্থছাড় কম হচ্ছে। এ কারণে বাস্তবায়ন হার কম দেখা যাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button