অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
ডলার সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংককে সানেমের পরামর্শ
চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ডলার সরবরাহে ঘাটতি মেটাতে হবে। এ জন্য টাকার সুদহার এবং ডলারের দর বাজারভিত্তিক করতে হবে। ডলার সংকট কাটানোর জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে যত প্রভাবশালীই হোক অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির সংকট সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপ নিতে যত দেরি হবে সমস্যা তত গভীর হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সানেমের পক্ষ থেকে এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ও গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বৈঠকে অংশ নেন।
জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, হুন্ডিকারবারি ও অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন। যথাযথ প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আর নির্বাচনের আগে অর্থা পাচার সাধারণত বাড়ে। এ সময় সানেমের পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থ পাচার শুধু এখনকার বিষয় নয়। এ ছাড়া সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ইন্টেলিজেন্স রয়েছে, তাতে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব। সানেমের নির্বাহী পরিচালক জানতে চান, নির্বাচনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সায় আছে কিনা। এ ক্ষেত্রে কোনো রোডম্যাপ রয়েছে কিনা। এর উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোডম্যাপ করার প্রক্রিয়া চলমান। আর সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সায় পেতে সমস্যা হবে না।
বৈঠকের বিষয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে ডলার সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য ডলারের দর বাজারভিত্তিক করতে হবে। একই সঙ্গে হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ না করে শুধু রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে লাভ হবে না। এতে রেমিট্যান্স খুব একটা বাড়বে না। কেননা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে যে দর দেওয়া হবে, হুন্ডিওয়ালারা তার চেয়ে বেশি দরে ডলার কিনবে। বৈঠকে তিনি বলেছেন, এ ছাড়া রপ্তানি বিল যথাসময়ে দেশে না আনা, ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি এ পর্যায়ে আসার পেছনে ভুলনীতি এবং যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া বড় কারণ। সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা এবং ডলারের দর ধরে রাখা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। বর্তমান বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য নতুন করে আবার বাড়ছে। এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো যেতে পারে।
বৈঠকে সানেমের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। এখন যে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার চেয়ে অনেক বেশি।
চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে গত ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।