Bangladesh

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন: জুনে মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৭.৫% এ

বৈশ্বিক নিম্ন প্রবৃদ্ধি, উন্নত দেশগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন ডলারের সরবরাহ কমিয়ে আনায় দেশীয় মুদ্রা টাকার মান রেকর্ড পরিমাণ কমছে। এর প্রভাবে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

অর্থ বিভাগের চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এ বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার হারের দ্রুত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব হচ্ছে। তবে অর্থবছরের শেষে এ চাপ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

বিশেষ করে জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। আর শিগগিরই সেটি ৯ শতাংশের নিচে বিরাজ করবে। সেখানে আরও বলা হয়, আমদানি ঋণাত্মক পর্যায়ে আছে। তবে রাজস্ব ও রপ্তানি আয় আছে সন্তোষজনক অবস্থায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বৈশ্বিক বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি যেভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে বর্তমান সংকটও মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারব।

প্রতি তিন মাস অন্তর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সেখানে বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে রাজস্ব আয়, সরকারের ব্যয়, বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি তুলে আনা হয় প্রতিবেদনে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।

মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনা উচিত। কিন্তু সেখানে নিয়ে আসতে পারবে কিনা আমি জানি না।

তিনি আরও বলেন, চেষ্টা করলে মূল্যস্ফীতি নির্ধারিত লক্ষ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। কারণ ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম কমেছে। শুনতে পাচ্ছি আগামীতে বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে মূল্যস্ফীতি কমবে কিনা এই মুহূর্তে বলা যাবে না।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এখন মুদ্রানীতিকে সহায়তার জন্য রাজস্বনীতিতে কয়েকটি উদ্যোগ থাকা দরকার। কারণ শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারবে না। পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। এই তিন নীতির সমন্বয় ঘটাতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। এতে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এছাড়া উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে নিয়ে আসে।

পলিসি রেট পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বৈশ্বিক বাজারে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর প্রভাবে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান রেকর্ড পরিমাণ কমছে।

অন্যদিকে টাকার মান কমে গিয়ে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এতে দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাজারে মুদ্রা প্রবাহ কমিয়ে আনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। যেখানে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে মুদ্রা সরবরাহের হার ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের একই সময়ে দেখা গেছে ৯ শতাংশ। এই মুদ্রা প্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখা হয়।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। একই সময়ে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও ২৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে এবং বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে এসেছে।

সেখানে আরও বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সরবরাহে বাধাগ্রস্ত, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো নানাবিধ প্রভাব মোকাবিলা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। যার প্রভাব এসে পড়েছে বাংলাদেশে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি ব্যয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমেছে। ওই সময় পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয় ১ হাজার ৫৮৯ কোটি মার্কিন ডলারের। বিপরীতে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারের। যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃচ্ছ সাধনের কারণে আমদানি কমেছে। এছাড়া নানাবিধি নিষেধ আরোপ এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি পরিহার ও মিতব্যয়ের কারণে এই হ্রাস পেয়েছে।

বাড়ছে রাজস্ব আদায় : প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মূলত ১০ লাখ টাকা বা এরচেয়েও বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট বা চালান বাধ্যতামূলক করা, ই-টিডিএস সিস্টেমের মাধ্যমে উৎসে কর কর্তন, ক্রমান্বয়ে তিন লাখ মেশিন স্থাপনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, থার্ড পার্টি ডাটা ব্যবহার করে নতুন করদাতা শনাক্তসহ নানা উদ্যোগের ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।

প্রতিবেদনে রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে বলা হয়, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মেগা প্রকল্প চালু হয়েছে। একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে আছে। পদ্মা সেতু থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আসছে। অন্য মেগা প্রকল্প থেকে আশানুরূপ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে।

কমছে সরকারের অর্থ ব্যয় : প্রথম প্রান্তিকে সরকার বাজেটের মাত্র ৮৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ৬৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এছাড়া সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ প্রাপ্ত দশ মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের ব্যয় করেছে মাত্র ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এসব মন্ত্রণালয়ের এডিবির অর্থ ব্যয়ের অনুপাতও ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এডিপি খাতে ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি কমছে : প্রথম প্রান্তিকে বাজেট ঘাটতি না হয়ে উদ্ধৃত্ত হয়েছে। এ সময় ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নিয়ে পরিশোধ করা হয় ৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ শোধ করা হয় ৬ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। এদিকে জ্বালানি তেলের মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৯০ টন জ্বালানি তেল মজুত উন্নীত করেছে। ২০২৫ সাল নাগাদ মজুতের সক্ষমতা বাড়ানো হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টনে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online