Bangladesh

অষ্টম ও নবম শ্রেণি: শুরুতে সব বই পাচ্ছে না অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী

পাণ্ডুলিপি পেলেও ৬টি বই ছাপাই শুরু হয়নি

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি মাত্র ১১ দিন। বছরের প্রথম দিন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে অধীর অপেক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। বইয়ের জন্য কৌতূহলী শিক্ষার্থীরা প্রতীক্ষায় থাকলেও তাদের সেই সুখবর এখনো নিশ্চিত হয়নি। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বছরের প্রথম দিন বই পাচ্ছে না। এছাড়া ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি পেলেও এখনো ছাপাই শুরু হয়নি।

আগামী শিক্ষাবর্ষে এই দুই শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি বেশি বই ছাপা হবে। এর মধ্যে গত সোমবার অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের অনুসন্ধানী ও অনুশীলন এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের মোট ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি হাতে পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসব বই জানুয়ারির আগে ছাপা শুরু করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির অন্য প্রায় ৬০ ভাগ বই মুদ্রণের কাজই শুরুই হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এই বই ছাপাতে অনেক সময় দরকার। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি বই। এখন পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণ চুক্তি শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি। তবে মাধ্যমিক স্তরের ৭ কোটির বেশি বই এখনো ছাপানো বাকি রয়েছে। ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও দেশের সব শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী তাদের হাতে সব বই তুলে দিতে সময় লাগবে এক মাসের বেশি। ফলে নতুন বছরের শুরুতে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাচ্ছে না।

যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, প্রাথমিক সব বই প্রস্তুত। তবে মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির কিছু বই ছাড়া বাকি সব শ্রেণির বই ১ জানুয়ারির আগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে।

এদিকে বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বই উৎসবের জন্য আলাদা ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে। প্রাথমিকের বই উৎসব হবে রাজধানীর মিরপুরে। আর মাধ্যমিকের বই উৎসব হবে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় এ উৎসব দুটি স্থান থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৃথকভাবে বই উৎসব হবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ। আর মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।

মুদ্রণ সমিতির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাথমিকে নতুন কারিকুলামের ২য় ও ৩য় শ্রেণির প্রায় এক কোটির মতো বই এখনো সরবরাহ করা হয়নি। মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইও এখনো সরবরাহ হয়নি। অষ্টম এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসহ মোট ৬টি বইয়ের মোট ৩ কোটির বেশি বই ছাপানোর অনুমোদনই হয়নি। এছাড়া অষ্টম ও নবম শ্রেণির অন্যান্য বইয়ের ৩৫ শতাংশ ছাপানো হয়েছে। বাদবাকি বইয়ের ছাপানো ও সরবরাহ করতে জানুয়ারি মাস লেগে যাবে। অষ্টম ও নবম মিলে ৭ কোটির বেশি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে।

এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু করায় মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শেষ। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ চলছে। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সঙ্গে বই ছাপানোর কাজ চলছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য পাণ্ডুলিপি আসতে দেরি হয়েছে। অতিদ্রুত এই বইগুলো ছাপা শুরু হয়ে যাবে।

ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চুক্তি করে এনসিটিবি। অথচ এ বছরের (২০২৩ সাল) বাকি আছে মাত্র কয়েকদিন। অষ্টম শ্রেণির বই ছাপানোর চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর নবম শ্রেণির বইয়ের চুক্তির মেয়াদ আছে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে কোনো ছাপাখানাই এত বই ছাপিয়ে শেষ করতে পারবে না। টেন্ডার, কাজের চুক্তি, বিল পরিশোধ যথাসময়ে না করায় বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে এনসিটিবি।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, নতুন বছরের শুরুতে অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী বই পাবে না। ফেব্রুয়ারির দিকে তাদের এই বই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম বইয়ের সফট কপি ও ডামি তৈরি করতে দেরি হয়েছে। তাই এই দুই শ্রেণির বই ছাপা শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। এছাড়া মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির বইয়ের চেয়ে নবম শ্রেণির বইয়ের প্রায় দ্বিগুণ কাজ রয়েছে। যেহেতু নবম শ্রেণির বইয়ের সবচেয়ে বেশি কাজ। যতই ধারণ ক্ষমতা থাকুক যথাসময়ে বই দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গত সোমবার ইতিহাস ও সামাজিক এবং বিজ্ঞানসহ মোট ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি হাতে পেয়েছে এনসিটিবি। এই পাণ্ডুলিপি হাতে পাওয়ার পর ছাপা শুরু করতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যাবে। ফলে বইগুলো জানুয়ারির আগেই ছাপা শুরু করা সম্ভব নয়। সবমিলে মোট বইয়ের ৯ কোটির বেশি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকের সব বই ছাপানো শেষ। ১ জানুয়ারির আগে নবম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বই ছাপানো শেষ হবে। তবে অষ্টম শ্রেণির বই পৌঁছাতে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাবে। এছাড়া ৮ম ও নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক এবং বিজ্ঞান বইয়ের পাণ্ডুলিপি আমরা কেবল হাতে পেয়েছি। এসব বইও দ্রুত ছাপানো শুরু হবে। ফলে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor