Bangladesh

অসাধু চক্রের কাছে জিম্মি ভোক্তা: বেঁধে দেওয়া মূল্যের দ্বিগুণ দামে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি

অসাধু চক্রের কাছে জিম্মি ভোক্তারা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একেক সময় একক পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা ৭ দিন আগেও ছিল ৪৫-৫০ টাকা। 

যদিও দেড় মাস আগে সরকার কেজিপ্রতি আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫ টাকা। এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যা ৭ দিন আগেও ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে করা হচ্ছে। 

এমনকি কার কারণে বাজারে এমন পরিস্থিতি তা চিহ্নিত করেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করে পণ্য আমদানির ঘোষণা করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে অসাধু সেই চক্র আরও বেশি সুযোগ পেয়ে ভোক্তার পকেট কেটে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা।

এদিকে কয়েক মাস ধরেই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলু ও পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার আলু আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয়ের আমদানি অনুবিভাগ সূত্রে জনা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫ প্রতিষ্ঠান আলু আমদানির জন্য অনুমতি চেয়েছে। আর বুধবার থেকে সরকার নির্ধারিত দামে কেজিপ্রতি ২৬-২৭ টাকা করে হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১০০ টাকা ছিল। আর আমদানিকারকরা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৮০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। যা ৭ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা।

ক্রেতারা জানান, পণ্যের দাম বেড়ে গেলে এখন আর তদারকি সংস্থাগুলো কোনোভাবেই পণ্যের দাম কমাতে পারছে না। এক প্রকার লোভ দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়লেও তদারকি সংস্থার কোনো দেখা নেই। বাজারে তাদের অভিযান পরিচালনা করতেও দেখা যাচ্ছে না। ফলে বিক্রেতারা এই দুই পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কেটে বাড়তি টাকা মুনাফা করছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রেতারা জিম্মি। এমনকি তারা সরকারের আদেশও মানছে না। দেখা গেছে, দেশে যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, বিক্রেতারা সেটা কার্যকর না করে ক্রেতার কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু যেসব তদারকি সংস্থা এই মূল্য কার্যকর করবে তারাও অসাধুদের কাছে এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে ক্রেতারা কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছে না। তাই তদারকি সংস্থার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।

এদিকে সোমবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আলুর কেজি কোনোভাবেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকা আলুর কেজি হবে কেন? মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে আমরা আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে। 

আমদানির এ সিদ্ধান্ত বাজারে প্রভাব ফেলবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রভাব ফেলবে বলেই আমরা অনুমতি দিয়েছি। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তারা তৎপরতা বাড়াবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button