Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

‘অসাধ্য সাধন’ করত সাধনের পরিবার

সাধন চন্দ্র মজুমদার ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সাড়ে পাঁচ বছরের খাদ্যমন্ত্রী। টানা চারবার তিনি হয়েছেন এমপি। গেল সাড়ে ১৫ বছর সাধন চন্দ্রের জনপ্রতিনিধির জমানা ছিল অরাজকতায় ভরা। ক্ষমতাকে তিনি মনে করতেন ‘জাদুর কাঠি’। সেই কাঠির ছোঁয়ায় নানা অপকর্মে তাল দিয়ে গেছেন তাঁর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার এবং দুই জামাতা আবু নাসের বেগ ও নাসিম আহম্মেদ। সবাই মিলে গড়ে তোলেন  দুর্ভেদ এক সিন্ডিকেট। টাকা দিয়ে ‘অসাধ্য সাধন’ হতো সাধন চন্দ্রের ডেরায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুরোভাগে থেকে সব অপকর্মের সমন্বয় করতেন ভাতিজা রাজেশ। তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর সহকারী; বসতেন মন্ত্রণালয়ে। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাধন চন্দ্রের বড় জামাতা আবু নাসের বেগ (মাগুরার সাবেক ডিসি) ও মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্বে থাকা ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। টাকার বিনিময়ে দপ্তরের যে কোনো পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ– সবকিছু মন্ত্রণালয়ে বসে তারাই সামলাতেন। টাকার লেনদেন হতো মন্ত্রীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায়। সেই বাসভবন সন্ধ্যা থেকেই খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পদভারে করত গমগম। প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দরদাম ঠিক করে পছন্দমাফিক বদলি কিংবা পদায়ন নিতেন কর্মকর্তারা।

প্রতি পদায়নে অন্তত ৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠত। লোভনীয় পদের মধ্যে ছিল আরসি ফুড (রিজওনাল কন্ট্রোলার অব ফুড), ডিসি ফুড (ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার) এবং ওসি এলএসডি (গুদাম কর্মকর্তা)। এ ছাড়া ধান-চাল বেশি উৎপাদন হয় এমন তালিকাভুক্ত জেলার বাইরেও যে কোনো স্থান ও পদে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। খাদ্য বিভাগের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী  সূত্র সমকালকে নিশ্চিত করেছে এসব তথ্য।

শিকড় থেকে শিখরে
শিকড় থেকে শিখরে চড়েছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। রাজনৈতিক জীবনে প্রথমে নওগাঁর নিয়ামতপুরের হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে হয়ে যান নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। ধাপে ধাপে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পর একসময় সাধারণ সম্পাদক বনে যান।
সাধন চন্দ্র ২০০৮ সালে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে প্রথম খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হয়ে দ্বিতীয় দফা তাঁকে দেওয়া হয় খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। দলীয় পদ আর মন্ত্রীর প্রভাবে তিনি এলাকায় ‘একতন্ত্রী শাসক’ হয়ে ওঠেন।

সাধন সিন্ডিকেটের পুকুরচুরি!
পুকুর বা বড় জলাশয় দখলে নিয়ে মাছ চাষ ছিল সিন্ডিকেটের অন্য রকম নেশা। সাধন চন্দ্রের নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায় অন্তত ছয় হাজার জলাধার। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার জলাশয়ই ছিল সাধনদের কবজায়। তাদের এমন ‘পুকুরচুরি’ এখনও অনেককে কাঁদায়। তেমনই একজন নিয়ামতপুরের মাছ ব্যবসায়ী হাকিম মণ্ডল। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সরে গেছে তাঁর বুকে জমা কষ্টের পাথর। সমকালকে বললেন, ‘কত বছর যে নিজের জলাধারের কাছে ঘেঁষতে পারিনি! পুকুরভরা মাছ তুলে নিয়ে বেচে দিয়েছে মন্ত্রীর লোকজন, ভয়ে প্রতিবাদ করিনি। হাজার হাজার পুকুর তারা কুক্ষিগত করেছিল। নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম। তিনি কথা শুনেছেন। আজ আমি মহাখুশি। নিজের জলাটা ফেরত পেয়েছি।’
জানা গেছে, বরেন্দ্রভূমি নিয়ামতপুরের গত দেড় দশকে মাছ চাষে অভাবনীয় সাফল্য আসে। লাভজনক এ প্রকল্পে আয় আসে কোটি কোটি টাকা। এ কারণে পুকুর কারবারে নামে সাধন সিন্ডিকেট। যে কারোর নামেই পুকুর লিজ থাকুক না কেন, তা সিন্ডিকেটের কাছে ছেড়ে দিতে হতো। সরকারি এমন অনেক জলাশয় আছে, যেগুলো গত পাঁচ বছরের মধ্যে ডাক (দরপত্র) দেওয়া হয়নি। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করত সাধন সিন্ডিকেট। দলীয় লোকজন ছাড়াও ব্যবসায়ীর কাছে কমিশনের মাধ্যমে মাছের ব্যবসাও চলত।

বদলি-পদায়নে ধুন্ধুমার বাণিজ্য
সাধন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/সমমান পদে ৬১ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। এর পর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ একসঙ্গে ২০৬ উপ-খাদ্য পরিদর্শককে পদোন্নতি দেওয়া হয় খাদ্য পরিদর্শক/সমমান পদে। এর মধ্যে পদায়ন করা হয় ২০৫ জনকে। একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর ২৪ নিরাপত্তা প্রহরীকে সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদায়ন করা হয়। এক দিন পরই ৪৭ জনকে সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক থেকে উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল ৫৯ জনকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/সমমান পদে পদোন্নতিসহ পদায়ন করা হয়। এর মধ্যে খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলাগুলোতে ভালো পদায়নের জন্য সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছে এ সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে, পদায়ন নিতে নওগাঁ সদরের খাদ্য পরিদর্শক মাসুদ রানাকে খরচা করতে হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন মাসুদ এখনও আছেন বহাল তবিয়তে। কথা বলতে মাসুদ রানার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

টাকা খেয়েও কাজ করেনি এমন বিস্তর অভিযোগও আছে সাধন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ছোট ভাইকে পদায়নের কথা বলে খাদ্যমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় ৩০ লাখ টাকা নিয়েছিল। গত পাঁচ বছরেও পদায়ন হয়নি। টাকাও ফেরত পাইনি। একদিন টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিয়ে বলেছিল, কেটে পানিতে ভাসিয়ে দেবে। ভয়ে আর টাকা চাইতে যাইনি। এখন তারা জনতার ভয়ে নিজেরাই পালিয়ে আছে।’

সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও কথা বলা যায়নি। তবে সাধন চন্দ্র মজুমদারের জামাতা ও একান্ত সচিব (সাবেক) আবু নাসের বেগ বলেন, ‘আমি অল্প সময় একান্ত সচিব ছিলাম। তবে কোনো ঘুষ লেনদেনে আমি জড়িত ছিলাম না। এসব কারা করেছে, তাও জানি না। সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোথায় আছেন, সে বিষয়টিও আমার জানা নেই।’

চালের চালবাজিতে সাধন পরিবার 
সাধন চন্দ্রের ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার ও জামাতা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদের হাতের মুঠোয় ছিল নওগাঁ। দেশের অন্যতম মোকাম নওগাঁয় দামের সামান্য হেরফের হলেই ধাক্কা লাগে চালের বাজারে। অথচ এ জেলাতেই বিভিন্ন গুদামে হতো অবৈধ ধান-চাল মজুত। মিলারের বেশির ভাগই সাধনের আত্মীয়। চাল ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো ধান-চাল মজুত করে রাখত। এ সিন্ডিকেটের কারণেই চালের বাজারে কখনোই কাটেনি অস্থিরতা। এসব করে তারা শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
পোরশার অনেক ব্যবসায়ী জানান, সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের সিন্ডিকেট খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব দরপত্র বাগিয়ে নেয়। এ কারণে নওগাঁর অধিকাংশ চালকল মিল মালিক মন্ত্রীর ওপর ছিলেন নাখোশ।
নওগাঁ শহরের সুলতানপুর মহল্লার ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিলে বছরের পর বছর হাজার হাজার টন চাল মজুত থাকত। মিলটির মালিক দ্বিজেন ঘোষ নিজেকে সাধনের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। সরকার পতনের পর এখন তাঁকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনার চালের মিল আছে নিয়ামতপুরে। তাঁর অবাধ্য হওয়ার সুযোগই ছিল না বড় বড় চাল ব্যবসায়ীর। চালকল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামও নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগ নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ধান-চাল মজুত রাখার অভিযোগ থাকলে কখনও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়নি। 

সুলতানপুর মহল্লায় সুফিয়া এগ্রো অ্যারোমেটিক অটোমেটিক রাইস মিলটি মনোরঞ্জন মনার। জেলায় যত অবৈধ মজুতদার রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই মনার কারণে হয়েছেন প্রভাবশালী। চক্রটি সব সময় নিজেদের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও সরকারের নীতিনির্ধারকের ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে সিন্ডিকেট চালিয়েছে। 
এ ব্যাপারে মনোরঞ্জন মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলে তাঁর নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বন্ধ পাওয়া যায়। নিয়ামতপুরের শিবপুর বাজারের প্রতিষ্ঠানে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার স্থানীয় লোকজনও দিতে পারেননি তাঁর খোঁজ।

চালকল মালিক গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, এখন নওগাঁয় সচল চালকলের সংখ্যা ৫৭১। এর মধ্যে ৫৩টি অটোমেটিক ও ৫১৮টি হাসকিং মিল। এসব মিলে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার টন চাল উৎপাদন হয়। নওগাঁর ১১ উপজেলায় স্থানীয় ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা রয়েছে ৮০০ টন চালের। এ চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত চাল দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করার কথা। তবে এ চক্রের সদস্যদের মজুতদারির কারণে বছরের পর বছর চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রাখা হয়েছে।

সরকারি কাজেও ঘুষ
রাস্তা উন্নয়ন, পাকাকরণ, সংস্কারসহ সব কাজেই ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। ঘুষের কমিশনের টাকা কম হলেই রোষানলে পড়তেন ঠিকাদার। সর্বশেষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ নওগাঁ সদর থেকে আত্রাই, বদলগাছী ও মহাদেবপুর এবং মান্দা থেকে নিয়ামতপুর উপজেলার ছয়টি সড়কে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়। আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নের এ প্রকল্প থেকে আগাম ২০ শতাংশ টাকা নিয়েছে সাধন সিন্ডিকেট। এ ছাড়া কমিশন নেওয়া অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভূমি অফিস, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, হাসপাতাল বর্ধিতকরণ, থানা ও পুলিশ ব্যারাক সম্প্রসারণ প্রকল্প, জজকোর্ট সম্প্রসারণ, টিটিসির একাডেমিক ভবন নির্মাণ, খাদ্য বিভাগের গুদাম নির্মাণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণসহ আরও ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ উল্লেখযোগ্য। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদারের সহকারী জানান, বেশির ভাগ টাকাই সাধনের ভাই মনা ক্যাশ নিতেন। তিনি নিজে না এলে কে আসবে, তা ফোনে জানিয়ে দিতেন। কাজের চুক্তিমূল্যের ওপর নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো তাদের। 

স্থানীয়রা জানান, সাধন চন্দ্রের হুকুম ছাড়া কোনো নথি নড়ার সুযোগ ছিল না। সরকারি নির্মাণকাজ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ছাড়াও নিয়োগ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, ধর্মীয় উপাসনালয়, জমি দখল, বিচার সালিশ, বাজার ব্যবস্থা, বিশেষ দিবস, নিজ দলের নেতৃত্ব গঠনসহ সবখানেই লাগত তাঁর অনুমোদন।

নওগাঁর সব হাটবাজার নামমাত্র মূল্যে ডেকে নিতেন সাধনের লোকজন। তারাই নির্মাণ করেছেন নিম্নমানের দুর্যোগ সহনীয় ঘর। এ ছাড়া নওগাঁয় হাজার কোটি টাকার সিএসডি নির্মাণ প্রকল্প ও সাপাহারে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনায় সাধন সিন্ডিকেটের বড় ধরনের বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য ছিল। সেখানে অধিকাংশ জমিই বায়নাসূত্রে মালিক বনে গিয়েছিল তারা। কম দামে জমি কিনে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রির ছক এঁকেছিল। তবে দেশের পটপরিবর্তনে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

যেভাবে চলত কারসাজি 
পদায়ন নেওয়া কর্মকর্তারা সরকারি গুদামে মজুত করা চাল অভিনব উপায়ে জালিয়াতি করে ‘ঘুষ বিনিয়োগ’ তুলে নিতেন। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ছাড় করা পুরোনো চাল ফের গুদামে ঢুকিয়ে বেশি দামে ক্রয় দেখানো হতো। কাগুজে এই হাতবদলে মালপত্র সমন্বয় করার আয়ের কোটি কোটি টাকার নির্দিষ্ট একটি অংশের ভাগও দিতে হতো সাধন চক্রকে।
এমন এক ঘটনা ধরা পড়ে বগুড়ার সোনাতলায়। সেখানে ধান সংগ্রহ অভিযানে তালিকার বাইরে কাগুজে ক্রয় দেখানো হয়। তালিকায় পাওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে ভিন্ন নাম-পরিচয় পাওয়া গেলে বিষয়টি ধরা পড়ে। ধান কে দিচ্ছে সরকারি খাদ্যগুদামে আর টাকা যাচ্ছে কার ব্যাংক হিসাবে, তা জানেন না সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তা।
দেখা গেছে, তালিকা অনুসারে এলএসডিতে তিন টন ধান দিয়ে টাকাও বুঝে পেয়েছেন আমিরুল ইসলাম মোল্লা নামের একজন। তবে আমিরুলকে ফোন করলে পাওয়া যায় রিয়াদ নামের এক স্কুলছাত্রকে। এখানে পাশের জেলা গাইবান্ধার সাঘাটার বাসিন্দা স্কুলছাত্র রিয়াদকে বানানো হয়েছিল কৃষক।

এ ব্যাপারে সোনাতলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহ মো. শাহেদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুমোদন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লটারির পর যে তালিকা আমরা পাই, সেটি নিয়ে ধান সংগ্রহ করি। এই ভুল কীভাবে হলো, তা বলতে পারছি না।’

খাদ্য বিভাগের বাইরে নওগাঁ জেলা সদরের বিভিন্ন অফিস ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দপ্তরের সব কাজেই অনুমোদন লাগত সাধন চন্দ্রের। এটি না করলে তাঁর ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার নানাভাবে হেনস্তা করতেন। পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহারের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাদ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হলেও তিনি থাকতেন শহরে। তাঁর ভাই ও সিন্ডিকেট সদস্যরা পুরো জেলায় রাজত্ব চালাত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto