International

অস্তিত্বসংকটে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি

১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি ঐতিহাসিক পরাজয়ের পথে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে নানা পূর্বাভাস বলছে, বামঘেঁষা কিয়ার স্টারমারের বিরোধী লেবার পার্টি পার্লামেন্টে সম্ভাব্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে। কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক গত মে মাসের শেষের দিকে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তাঁর দল কনজারভেটিভ বা টোরি দলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বৃষ্টির মধ্যে একা দাঁড়িয়ে ভিজছিলেন তিনি। তাঁর কিছু সমালোচক বলছিলেন, সবকিছু শেষ করার জন্য আপাতদৃষ্টিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

কনজারভেটিভ পার্টির সেই সমাপ্তি নিকটেই মনে হচ্ছে। গত মাসে কনজারভেটিভ ঘেঁষা যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকা এক জরিপ চালায়। তাতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, টোরি দলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। হাউস অব কমন্সে বর্তমানে যাদের ৩৬৫ আসন রয়েছে, সেখানে ক্ষমতাসীন দল হয়েও তারা এবার মাত্র ৫৩ আসন পাবে। পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে লেবার পার্টি পাবে ৫১৬ আসন। ঋষি সুনাক তাঁর নিজের আসনেও হেরে যেতে পারেন। তাঁরই মতো বর্তমান মন্ত্রিসভার দুই–তৃতীয়াংশ নেতা নিজ আসন হারাবেন। কিছু পূর্বাভাসে এ–ও বলা হয়, কনজারভেটিভ পার্টি বৃহত্তম দলের স্থানও হারাবে। মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা তাদের চেয়ে বেশি আসন পাবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, টোরি দলের বিলুপ্তি অকারণে ঘটছে না। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসে টোরিরা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য পাঁচ প্রধানমন্ত্রী দেখেছে। এ ছাড়া একাধিকবার অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মহামারি, ব্রেক্সিটের (ইউরোপ থেকে আলাদা হওয়া) পরবর্তী নানা সমস্যা ছিল।

লেবার পার্টির যাত্রাপথও মসৃণ ছিল না। স্টারমার নিজেকে জেরেমি করবিনের চেয়ে আলাদা করে তুলেছিলেন। তিনি সরাসরি তাঁর বিরোধিতা করেন। এতে করবিন আলাদা হয়ে যান এবং স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। নির্বাচনের আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার লেবার ও কনজারভেটিভ মিলে সবচেয়ে কম ভোট পাবে, যা হবে এ শতকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া নির্দিষ্ট জাতিসত্তার মধ্যেও এ দুটি দল ভোট কম পাবে। এর কারণ, স্টারমার গাজার পরিবর্তে ইসরায়েলকে সমর্থনের কথা বলেছেন।

টোরি দলের দুর্যোগের সুযোগে লেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাবে। নিউইয়র্কার–এ লেখা এক প্রবন্ধে স্যাম নাইট লিখেছেন, গত দেড় দশকে টোরি দলের দুটি মৌলিক সত্য বের হয়ে এসেছে। একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্য মারাত্মকভাবে ভুগেছে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। ২০০৮ সালের পর অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে বেরোতে পারেনি দেশটি। টোরি দল ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়েছে। আরেকটি মৌলিক সত্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যে বৈষম্য বেড়েছে এবং উৎপাদনশীলতা কমেছে। প্রকৃত মজুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে যখন ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন জোট প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল, তার চেয়ে প্রকৃত মজুরি আর বাড়েনি।

দলের ভগ্ন উত্তরাধিকার নিয়ে প্রচার চালানোর পরিবর্তে সুনাক নির্বাচনের শেষ দিনগুলোতে লেবার পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠেকানো নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। বিপর্যস্ত সুনাক জনপ্রিয় নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, দলের অভ্যন্তরীণ ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁর নেতৃত্বে টোরিরা এখন শুধু লেবার পার্টির বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ার লড়াই লড়ছে না, একই সঙ্গে উদীয়মান রিফর্ম ইউকে পার্টি যে ক্ষতি করছে, তা ঠেকাতেও লড়ছে। এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে নাইজেল ফারাজ, যিনি জাতীয়তাবাদী, ট্রাম্প–সমর্থক হিসেবে বেশি পরিচিত।

ডানপন্থী দলগুলো লাখ লাখ ভোটে জিতবে—এটা ভেবে টোরি দল বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এটা ভাবা ঠিক হবে না। তবে টোরি নেশন: দ্য ডার্ক লিগাসি অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট সাকসেসফুল পলিটিক্যাল পার্টি বইয়ের লেখক স্যামুয়েল আর্ল যুক্তি দেন, পার্টির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় ফারাজের গভীর ছাপ থাকতে পারে। ডানপন্থীদের ক্ষমতায় বাধা না হয়ে কনজারভেটিভ পার্টি তাদের জন্য দরজা খুলেছে। প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থকে ব্রিটেনের সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button