Trending

অ্যাপলের কারখানা কি আর চীন থেকে ভারতে যাচ্ছে না?

ভারতের বিশ্ব উৎপাদন কেন্দ্র হওয়ার স্বপ্ন নতুন মাত্রা পেয়েছিল যখন অ্যাপল জানায় যে তারা তাদের আইফোন উৎপাদনের বড় একটি অংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক মার্কিন-চীন বাণিজ্যচুক্তি এই আশায় জল ঢেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক আলোচনার পর চীনের উপর ট্রাম্প আমলের শুল্ক ব্যাপকভাবে কমে ১৪৫% থেকে নেমে ৩০% তে এসেছে। যেখানে ভারতের ক্ষেত্রে তা ২৭%। এর ফলে, চীনের তুলনায় ভারতের প্রতি বিশ্বের বড় কোম্পানীগুলো আকর্ষণ অনেকটাই কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেজ্ঞরা। দিল্লি-ভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানান, এর ফলে অনেক বহুজাতিক সংস্থা তাদের ভারতমুখী বিনিয়োগ স্থগিত করতে পারে বা আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, অ্যাপলকে ভারতে উৎপাদন না করতে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, কারণ ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্কযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। তবে সব আশা হারিয়ে যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যের দীর্ঘমেয়াদী বৈরিতা ভারতের পক্ষে যেতে পারে। ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভারত ও চীন প্রায় ৪০% সমজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে, যা ভারতকে চীনের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। 

ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যেই চীনের ফাঁকা জায়গা পূরণের চেষ্টা শুরু করেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতের নতুন রপ্তানি আদেশ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান নোমুরা বলেছে, ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল ও খেলনা শিল্পে ভারতের সম্ভাবনা দিনদিন বাড়ছে। তবে উন্নত বাণিজ্য পরিবেশ তৈরি না হলে এই সম্ভাবনা ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে। ‘ভারতকে শুধুমাত্র শুল্ক সুবিধার ওপর নির্ভর না করে কাঠামোগত সংস্কারেও নজর দিতে হবে,’ জানান নোমুরার অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মা ও অরোদীপ নন্দী।

দীর্ঘদিন ধরেই জটিল ব্যবসায়িক পরিবেশ, কর জটিলতা ও ধীরগতির নীতিমালা ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করেছে। যদিও মোদি সরকারের ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ’ প্রকল্প কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে, তথাপি ভারতের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান এখনো ১৫% এর আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্লেষক নীতি আয়োগও স্বীকার করেছেন যে ভারত চীন থেকে বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে। সস্তা শ্রম, কম শুল্ক এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধায় ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে যেটি দেখা দিয়েছে তা হলো চীনের ওপর  ভারতের নির্ভরতা। আইফোনের মতো পণ্যের কাঁচামাল এখনো বেশিরভাগই চীন থেকে আসে। ‘ভারত শুধু অ্যাসেম্বলি করে আয় করতে পারবে না, যদি না উচ্চমূল্যের যন্ত্রাংশ তৈরি এখানেই শুরু হয়,’ বলছেন শ্রীবাস্তব। তার মতে, অ্যাপল যেখানে প্রতিটি আইফোন থেকে ৪৫০ ডলার আয় করে, সেখানে ভারত আয় করে মাত্র ২৫ ডলারের নিচে। ‘এই ব্যবধান না কমালে, ভারতের লাভ কেবল সংখ্যায় থাকবে, বাস্তবে নয়।’

GTRI জানায়, অ্যাসেম্বলি লাইনের কর্মসংস্থান খুবই সীমিত দক্ষতার, যা অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। এর বিপরীতে, নোকিয়া ২০০৭ সালে যখন চেন্নাইতে কারখানা স্থাপন করেছিল, তখন তারা সম্পূর্ণ সাপ্লাই চেইন স্থানান্তর করেছিল, যা একটি টেকসই মডেল তৈরি করেছিল।

সব মিলিয়ে, অ্যাপলের আশা জাগানিয়া সিদ্ধান্ত ভারতের সামনে নতুন দিগন্ত খুলেছে ঠিকই, তবে টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, কাঠামোগত সংস্কার এবং নীতিগত স্থিরতা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto