আইফোনে চ্যাট জিপিটি যুক্ত হলে কী কী পরিবর্তন আসবে
ভয়েস কমান্ড সিস্টেম সিরি-র সাথে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমগুলিকে ওপেন এআই-এর চ্যাট জিপিটি’র সাহায্যে আরো শক্তিশালী করে তুলতে চায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।
সোমবার অ্যাপলের বার্ষিক ডেভেলপার শো’তে চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে সিরি’কে নতুন সাজে সাজানোর ঘোষণা দেন আইফোনের নির্মাতারা।
নতুন পার্সোনালাইজড এআই সিস্টেমের অংশ হিসেবে চালু হওয়া এই প্রযুক্তির নাম হবে “অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স”। এর মাধ্যমে অ্যাপলের ডিভাইসগুলো আরো সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করায় আইফোন ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের পাশাপাশি ওপেন এআই এর মাধ্যমে চ্যাট জিপিটি ব্যবহারের সুযোগ মিলবে।
টেক্সট ও কন্টেন্ট জেনারেশনসহ অন্যান্য টুল বুস্ট করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে চ্যাট জিপিটি। আগামী শরতেই পরীক্ষামূলক ভার্সন চালু হতে পারে।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেছেন যে এ পদক্ষেপটি তার কোম্পানির পণ্যগুলোকে এক ধরনের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
যদিও ঘোষণার দিন শেয়ার বাজারে এর একটি শীতল প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদিন অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমেছে এক দশমিক ৯১ শতাংশ।
ওপেন এআই ও অ্যাপল অংশীদারের ভিত্তিতে এই যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে খুব একটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না এক্স (সাবেক টুইটার) এবং টেসলার মালিক ইলন মাস্ক।
‘ডেটা নিরাপত্তা’র কারণে তার কোম্পানি থেকে আইফোন নিষিদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
মাস্ক বলেন, ‘অ্যাপল যখন আপনার তথ্য ওপেন এআইয়ের কাছে হস্তান্তর করবে, তখন কী ঘটবে সেই ধারণা নেই। তারা আপনাকে নদীর তলদেশে বিক্রি করছে।’
তবে ইলন মাস্কের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দেয়নি অ্যাপল।
অ্যাপলের এ ঘোষণাটি নিয়ে উপহাস করেছে স্মার্টফোন কোম্পানি স্যামসাংও।
এক্স (সাবেক টুইটার) এর এক পোস্টে তারা লিখেছে, ‘অ্যাপলের এই উদ্যোগ নতুন বা যুগান্তকারী কিছু নয়। এআই’তে স্বাগতম।”
তবে প্রতিযোগী কোম্পানি অ্যাপলকে ঘায়েল করতে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাংয়ের এ ধরনের বক্তব্য এই প্রথম নয়।
নতুন এআই’র প্রযুক্তি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরতে কতখানি সাহায্য করছে অ্যাপলের কাছে সেটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ কী?
গবেষণা সংস্থা সিসিএস ইনসাইটের প্রধান বিশ্লেষক বেন উড বলেছেন, অ্যাপলের নতুন ব্যক্তিগত এআই সিস্টেম দুর্বল মানসিকতার বিনিয়োগকারীদের শান্ত করতে পারলেও প্রতিষ্ঠানটির জন্য আরো গভীর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তিনি বলছেন, এই ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ এটি যেমন একটি পণ্যও নয়, তেমনি এটি কোনো অ্যাপসও নয়।
যখন অ্যাপলের গ্রাহকরা এটি ব্যবহার শুরু করবেন, তখন এটি একটি অ্যাপের অংশ হয়ে উঠবে। ব্যবহারকারীদের ম্যাসেজ লেখার সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পথ দেখাতে সহযোগিতা করবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স।
সেই অর্থে, এটি অনেকটাই মাইক্রোসফটের এআই সহকারী কপিলটের মতোই। তবে এটি চালু করতে আইফোন বা অ্যাপল ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না।
অ্যাপল সিরি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট চালু করেছিল ২০১০ সালে। এটি ব্যবহারকারীদের তাদের ডিভাইস এবং অ্যাপগুলোকে আরো সহজে পরিচালিত করতে বেশ কার্যকরী হয়েছে।
নিঃসন্দেহ এটি বলাই যায় সিরি ভয়েজ অ্যাসিস্ট্যান্টের সীমাবদ্ধতাগুলোকে স্বীকার করেই চ্যাট জিপিটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে সিরি তার ব্যবহারকারীদের সহায়তা করতে পারতো না, সেসব ক্ষেত্রে চ্যাট জিপিটি সহায়ক হিসাবে কাজ করবে, বলছিলেন উড।
সোমবারের ওই শো’য়ের মূল বক্তব্যের সময় যখন অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছিল তখন অ্যাপেল সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টিতে।
এই প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু কাজ ডিভাইস নিজ থেকেই করবে। যখন বড় কোনো অ্যাকশন নেয়া হবে তখন এটি চলে যাবে আই ক্লাউডে। তবে সেখানে কোনও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে না বলেও জানানো হচ্ছে।
যেটি অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতির একটি মূল জায়গা।
অ্যাপলের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রেগ ফেদেরিগি বলেন, ‘এই সিস্টেমটি আইফোন, আইপ্যাড ও ম্যাকের মূল অংশকে আরো শক্তিশালী করবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী এটা সবচেয়ে ভালোভাবে সেবা দেয়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সেইসাথে, গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষা করবে।’
ওপেন এআই ও অ্যাপেল চুক্তি কী?
ওপেন এআই-এর চ্যাট জিপিটি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপলের এ উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু অ্যাপলের মতো একটি কোম্পানির জন্য এটিকে একটি অস্বাভাবিক বিষয় হিসেবেও ভাবা হচ্ছে।
গুগল এবং মাইক্রোসফ্ট সাম্প্রতিক সময়ে এআই’র মাধ্যমে সেবা দিতে গেলে ত্রুটিও ধরা পড়েছে। সে সব ত্রুটির বিষয়গুলো পরবর্তীতে ভাইরালও হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে অ্যাপল তার নিজ গ্রাহকদের অ্যাপ স্টোরের বাইরের কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার অনুমতি দিচ্ছে না নিরাপত্তার কারণে। সে কারণেই নিজস্ব সাফারি ছাড়া সরাসরি অন্য কোনো ওয়েব ব্রাউজারও ব্যবহার করার অনুমতি দেয়নি।
পরবর্তীতে ইইউ আইনের কারণে সেটি পরিবর্তিত হয়।
এটা হলো, সেই স্বীকৃতি যে এখন অ্যাপলও চ্যাট জিপিটির সাথে প্রতিযোগিতায় পারছে না।
যদি তাই হয়, তাহলে এটি এআই সুপার জায়ান্ট ওপেন এআই’র বর্তমান শক্তি সম্পর্কে অনেক ধারণা প্রদান করে।
অ্যাপল ঘোষণা করেছে যে তাদের মিক্সড হেডসেট রিয়েলিটি হেডসেট ভিশন প্রো-১২, জুলাই থেকে যুক্তরাজ্যে বিক্রি হবে। যদিও এটি গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যাচ্ছে।
সোমবার অ্যাপল শো’তে আরো যে সব ঘোষণা দেয়া হয়েছে :
– স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেক্সট পাঠানো
– শিডিউল ম্যাসেজ পাঠানো
– মাথার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এয়ার পড প্রো নিয়ন্ত্রণ
– পাসওয়ার্ডের জন্য একটি ডেডিকেটেড অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ
– কিছু অ্যাপ লুকিয়ে রাখতে ফেস আইডির ব্যবহার