আইফোনে ত্রুটি কী ও কেন!
সারাবিশ্বে অ্যাপল নিজস্ব নিরাপত্তাবলয়ের কারণেই বিশেষভাবে বিখ্যাত। সময়ের প্রয়োজনে অ্যাপল যখন অপারেটিং সিস্টেমে আপডেট নিয়ে আসে, তখন অনেকেই তা করতে অনীহা করেন। ফলে ওই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় সাইবার চক্র। আর তাতে কিছুটা যে সাফল্য মেলে না, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত সিস্টেম আপডেট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
নিরাপত্তার প্রশ্নে আইফোন মাঝেমধ্যে বিশেষ ঝুঁকির আওতায় আসে। নতুন আইফোন ১৬ মডেলের সিরিজ নিয়ে সারাবিশ্বে যখন হইচই, ঠিক তখনই সতর্কবার্তার কথা জানা গেল। অ্যাপল উদ্ভাবিত কয়েকটি পণ্যসেবা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারতের কম্পিউটার ইমার্জেন্সি টিম (সার্ট-ইন)। বহুল প্রতীক্ষিত আইফোন ১৬ সিরিজের বিক্রি ভারতে শুরু হওয়ার পরই মিলল সতর্কবার্তা।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল উদ্ভাবিত কয়েকটি সফটওয়্যার, যেমন– ম্যাকওএস, আইওএস, আইপ্যাডওএস, ওয়াচওএস এবং ভিসিয়নওএস সংস্করণে ‘উচ্চ ঝুঁকির’ বেশ কিছু দুর্বলতার দিক রয়েছে। আইফোনে নিরাপত্তা ত্রুটির সম্ভাব্য আক্রমণকারীকে সংবেদনশীল তথ্যের অ্যাকসেস করতে ও সব নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে (বাইপাস) যাওয়ার সম্ভাব্য সুযোগ করে দিতে পারে।
উচ্চ ঝুঁকির সতর্কবার্তা না মানলে বেশ কিছু সমস্যা দৃশ্যমান হতে পারে। হ্যাকারদের হাতে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে সংবেদনশীল তথ্যের অযাচিত (অ্যাকসেস) অনুপ্রবেশ। ডিভাইসে যে কোনো কোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে প্রতারক চক্র। নিরাপত্তাজনিত নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে সক্রিয় হতে পারে ডিভাইস।
ডিনায়েল অব সার্ভিস শর্তের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন হতে পারে। স্পুফিং অ্যাটাক চালাতে পারে হ্যাকাররা। দৃশ্যমান হতে পারে ক্রস সাইট স্ক্রিপ্টিং (এক্সএসএস) সাইবার হামলাও। অ্যাপলের কয়েকটি ডিভাইসে অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তাজনিত ত্রুটির জন্য উল্লিখিত সব ঘটনা ঘটার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সার্ট।
সংস্করণে ঝুঁকি
আইওএস ১৮ ও ১৭.৭-এর আগের সব সংস্করণ, আইপ্যাড (ওএস) ১৮ ও ১৭.৭-এর আগের সব সংস্করণ। ম্যাক (ওএস) সোনোমা ১৪.৭-এর আগের সব সংস্করণ। ম্যাক (ওএস) ভেনচুরার ১৩.৭-এর আগের সংস্করণ, ওয়াচও (এস) ১১ এর আগের সংস্করণ, টিভি (ওএস) ১৮-এর আগের সংস্করণ। উল্লিখিত সব অপারেটিং সিস্টেম যারা ব্যবহার করছেন, তাদের জন্যই সতর্কবার্তা দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
অপারেটিং সিস্টেমজনিত ঝুঁকি যেন অ্যাপল পণ্যসেবায় ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের কম্পিউটার ইমার্জেন্সি দলের সদস্যরা। অ্যাপল পণ্যসেবার গ্রাহকদের সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণ আপডেট করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিভাইসে বিশেষ বা অযাচিত কার্যক্রমের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যদিকে সাইবার সিকিউরিটিবিষয়ক বিধিনিষেধ মেনে চলতে বলা হয়।
বিশেষ এক্স কোড
মূলত আগের আইফোন অপারেটিং সিস্টেমে (ওএস) কিছু কারিগরি ত্রুটি (বাগ) চিহ্নিত করেছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সংস্থা। পুরোনো সংস্করণে কয়েক ধরনের বাগ দৃশ্যমান হয়েছে ইতোমধ্যে। তাতে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, অ্যাপলের সব সংস্করণে থাকা বিশেষ ‘এক্স কোড’ ঠিকঠাক কাজ করছে না। ফলে নিরাপত্তাবিষয়ক সব ধরনের ঝুঁকিতে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সংস্থা সার্ট পরামর্শে বলছে, যারা অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহার করেন, তারা যেন সব ধরনের সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করেন। ডিভাইসে সন্দেহজনক কিছু দৃশ্যমান হলেই নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। ডিভাইসে সাইবার সিকিউরিটিবিষয়ক যেসব নির্দেশনা দেওয়া, তা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা।
আইফোনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন উঠেছে, তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে বিষয়টি সরব হয়। কিন্তু নতুন আইফোন আত্মপ্রকাশ করলেই নানা অজুহাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে এমন নিরাপত্তার বিষয়ে গ্রাহককে সতর্ক করা হয়।
কিছুদিন আগে সরকারি কাজে দপ্তরের কর্মীদের আইফোনের ব্যবহার নিয়ে সন্দিহান ছিল কয়েকটি দেশ। তাতে অবশ্য কর্মীদের মধ্যে আইফোন ব্যবহারে ভাটা পড়েনি। শুধু তাই নয়, আইফোনে ঝুঁকি হতে পারে এমন আশঙ্কা তোয়াক্কা করা হয় না।
কিন্তু এবার নিরাপত্তার প্রশ্নে ওঠা সতর্ক খানিকটা হলেও তো ভাবাচ্ছে। অনেকে বলছেন, নতুন আইফোন বিক্রিতে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতেই সংঘবদ্ধ বিশেষ একটি মহল আইফোনের নিরাপত্তাবলয় ভেঙে ফেলতে যেন উঠেপড়ে কাজ করছে।