আওয়ামী লীগকে ভোটে আনা নিয়ে নয়া আলোচনা
সাড়ে ১৫ বছরের দীর্ঘ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই দিশাহারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের
মুখোমুখি সিনিয়র অনেক নেতা। দাবি উঠছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেয়া এক বক্তব্য ঘিরে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে বিএনপি’র অনাপত্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলে বিক্ষুব্ধ হন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা মনে করেন, এটা জুলাই আগস্টের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। হিন্দুকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতিমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামতকে উপেক্ষা করবো না।
ছাত্ররা যখন গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলছে ঠিক তখন এমন বক্তব্য আশাহত করেছে তাদের। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ছেলেদের রক্তের ওপর পা রেখে দিল্লিকে কেবলা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জনগণের মুক্তির নিয়তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদেরকে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে। তিনি আরও লেখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যারা ধারণ করে, যারা গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চায়, তারা ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবি ছাড়া আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আর কোনো দ্বিতীয় বক্তব্য দিতে পারে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপনার কোনো আপত্তি নেই- দ্য হিন্দুর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনো একটি দল বা আরেকটি দলকে বেছে নেয়ার জন্য আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি রাজনীতিকদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করছি। এর আগে সোমবার সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে।
১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে; সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক অন্যতম আহ্বায়ক ও বর্তমানে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, গণহত্যার বিচারের পূর্বে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেবো না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে। এদিকে গতকাল আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুক পোস্টে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শতদিন পরে পুরনো বন্দোবস্তের প্রতি দাসখত লিখে দেয়া লোকেরা আবারো ঐক্যবদ্ধ হবে। এ দল, ওই দল এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য হলো পুরাতন প্রজন্ম ও বন্দোবস্ত। সেখানে তিনি আরও লেখেন, পুরাতন ও নতুনের এ রক্তাক্ত দ্বন্দ্বে রণনীতি ও প্রধান দ্বন্দ্ব বুঝে নেয়া জরুরি। খুবই জরুরি। মৃত্যু আমাদের ছুঁয়ে গেছে, আমরা জ্যান্ত মরা হয়ে গেছি। আমাদের শহীদ হয়ে যাওয়া ভাইবোনের সাক্ষ্যকে নিরন্তর পুনরাবৃত্তি করে যেতেই হবে।