Bangladesh

আগামী নির্বাচন ঘিরে সংঘাত দেখছে ইইউ, পাঠাবে না পর্যবেক্ষক

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সংঘাতের শঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সংস্থাটির। নির্বাচন কমিশন বা সরকার আমন্ত্রণ জানালে জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বদলে ছোট একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে পারে ইইউ। এ বিষয়ক চিঠি গতকাল বুধবার সরকারকে দিয়েছে তারা। আজ বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সম্ভাব্যতাও বিবেচনায় রাখছে ইইউ সদস্য দেশগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার ইইউ সদস্যভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূত সমকালকে বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে ঢাকায় থাকা ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বিষয়টিতে আমাদের সব সহকর্মী খুশি না হলেও ২০১৮ সালের মতো হয়তো ইইউ একটি ছোট বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইইউর ছয় সদস্যের একটি প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গত ৮ থেকে ২৩ জুলাই বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলটি মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যায়ন করে। প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

ইইউ প্রতিনিধি দলটি জাতীয় নির্বাচন-পূর্ব সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। তারা মূলত নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা; নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা, নির্বাচন করার মতো পরিবেশের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে। এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা সিদ্ধান্ত নেবে।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ধরনের গুণগত পার্থক্য তৈরি হয়েছে, তা খোঁজার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইইউ নির্বাচনী পরিবেশ অনুসন্ধান মিশন। সেই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ ও দলগুলো অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা বোঝার চেষ্টা করেছে প্রতিনিধি দলটি।

ব্রাসেলসের সূত্রগুলো জানায়, এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আর নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা দপ্তরের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বরেলের।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সহায়ক পরিবেশ খুঁজছে ইইউ। এ কারণে বাংলাদেশে প্রাকনির্বাচন পর্যবেক্ষক দল সফর করে যাওয়ার পরও ঢাকার মিশনপ্রধানরা একের পর এক বৈঠক করেছেন একটি অভিন্ন অবস্থানে আসতে। বৈঠকগুলোতে তাদের কেউ কেউ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কেউ ঝুঁকির চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি বড় করে দেখেছেন।
কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ইইউ যদি পর্যবেক্ষক না পাঠায় তাহলে অন্য পর্যবেক্ষকদের ওপর নির্ভর করতে হবে, যার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক তাদের স্বার্থ অনুসরণ করে পর্যবেক্ষণ করবে। আবার কেউ মত দিয়েছেন ইইউর নির্বাচনের পর্যবেক্ষকদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন ঢাকা-ব্রাসেলস সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বিষয়গুলো নিয়ে একমতে আসতে পারেনি ঢাকার ইইউভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো।

গত ১২ জুন জোসেপ বরেলকে বাংলাদেশ ইস্যুতে চিঠি দিয়েছিলেন ইইউর ছয় সংসদ সদস্য। তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ এবং পক্ষপাতহীন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ওই সময়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা।

বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আস্থা তৈরি সবার দায়িত্ব উল্লেখ করে উত্তরে এক চিঠিতে জোসেপ বরেল বলেছিলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রকৃত সংলাপ উৎসাহিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা এবং সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছে। নাগরিক সমাজের জন্য যথেষ্ট স্থান রাখার জন্য বাংলাদেশকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মৌলিক স্বাধীনতাসহ বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি। এ প্রক্রিয়ার সহিংসতার জায়গা নেই এবং যে কোনো মূল্যে সহিংসতাকে এড়িয়ে চলতে হবে।

জোসেপ বরেল বলেছিলেন, ইইউ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে রয়েছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন ইইউর রাজনীতি ও মূল্যবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এর আগের দুই সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ। ২০১৪ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় সংস্থাটির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আসেনি। আর ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ইইউকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর জবাবে তখন ব্রাসেলস বলেছিল, ইইউ বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন নিয়োজিত করবে না। তবে দুই সদস্যের একটি নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে। যারা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করবেন এবং পরামর্শ দেবেন।

ঢাকা আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক পর্যবেক্ষক দল

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকনির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আগামী ৮ অক্টোবর বাংলাদেশে আসছে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) তিনজন ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) দুই-তিনজন বিশেষজ্ঞ ওই দলে থাকবেন। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে বৈঠকের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা– তা অনেকটাই নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক আসতে চাইলেও সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন জটিলতায় তারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d