আগ্রাসী আচরণে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরাইলকে
২০২৪ সালে গাজায় চলমান যুদ্ধের আগে ইসরাইলের জিডিপি ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে পরবর্তীতে সেই পূর্বাভাস সংশোধিত হয়েছে এবং তা এখন ১ শতাংশ থেকে ১.৯ শতাংশ পর্যন্ত নেমে এসেছে।
অবরুদ্ধ গাজায় দীর্ঘ প্রায় এক বছরের হত্যাযজ্ঞ চলাকালে এবং ইসরাইলের ক্রেডিট রেটিং পুনরায় কমানোর পরও, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ দাবি করেন যে, অর্থনীতি চাপের মুখে থাকলেও এখনও স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইল তার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল যুদ্ধের বোঝা বহন করছে’।
এ বিষয়ে ইসরাইলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কার্নিট ফ্লাগ সিএনএন-কে বলেন, ‘যুদ্ধ আরও তীব্র হলে তা অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও প্রবৃদ্ধির ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে’।
চলমান এই যুদ্ধ গাজার পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক ও মানবিক দিক দিয়ে চরম সংকটে ফেলে দিয়েছে। ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরও দ্রুত অর্থনৈতিক পতনের মুখে রয়েছে।
এদিকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে লেবাননের অর্থনীতিও এ বছর ৫ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বলে জানিয়েছে ফিচ সলিউশনস-এর মালিকানাধীন বিএমআই নামক একটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান যুদ্ধের খরচ প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। যার মধ্যে সামরিক খরচ এবং উচ্ছেদ হওয়া ইসরাইলি নাগরিকদের জন্য আবাসন খরচ অন্তর্ভুক্ত। আর এই খরচ ইসরাইলের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
যদিও স্মোটরিচ বলেছেন যে, নেতানিয়াহুর সরকার তার দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করবে। তবে অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন যে, চলমান যুদ্ধের ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।
এ বিষয়ে ইসরাইলের সাবেক গভর্নর ফ্লাগ বলেন, যুদ্ধের জন্য বিনিয়োগ কমানো হলে প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি ইসরাইল সরকার গাজা ও লেবানন থেকে তার সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল অবস্থানে পৌঁছাবে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইসরাইলের ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়েছে এবং সরকারকে উচ্চ সুদের হারে ঋণ নিতে হচ্ছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা ইসরাইলি বন্ড ও অন্যান্য সম্পদের ওপর বেশি রিটার্ন চাচ্ছে। ফলে ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং বাজেট ঘাটতির কারণে ইসরাইলের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এদিকে গাজা ও লেবাননে চলমান যুদ্ধের কারণে প্রযুক্তি, কৃষি, নির্মাণ এবং পর্যটন খাতও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।