Bangladesh

আদানির চুক্তি বাতিলের পথ খুঁজছে বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে আবারও আলোচনায় ভারতের আদানি গ্রুপ। ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পর বিভিন্ন দেশ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দরসহ নানা বিষয়ে ভারতের গ্রুপটির সঙ্গে করা চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিপাকে আছে বাংলাদেশও। দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন শর্তের কারণে চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আদানির চুক্তিতে কোনো অনিয়ম, অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা– খুঁজে দেখা উচিত। এমন কোনো অনিয়ম পেলেই বাংলাদেশ আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি করতে পারবে। প্রয়োজনে চুক্তি বাতিলের সুযোগও আসতে পারে। যেমন কর ছাড়সহ পাওয়া বেশকিছু সুবিধার বিষয়ে বাংলাদেশকে জানায়নি আদানি। এটিকে চুক্তির লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ দেওয়া ও প্রতারণার দায়ে আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন মার্কিন আদালত। অভিযোগ হলো, সৌরশক্তি প্রকল্পের কাজ পেতে তারা ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন। ২৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি কাজের ব্যাপারে এই ঘুষ দেন তারা। বিষয়টি গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল আদানি গ্রুপ। এ নিয়ে দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সংকটে পড়লেন আদানি। ঘুষ অভিযোগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানির বাজারদর অনেকটাই কমে গেছে। 

কেনিয়ায় চুক্তি বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রে জালিয়াতির অভিযোগের পর কেনিয়া আদানির সঙ্গে বড় দুটি চুক্তি বাতিল করেছে। আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে ১৮৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। চুক্তি ছিল, তারা সেটি ৩০ বছরের জন্য পরিচালনা করবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ৭৪ কোটি মার্কিন ডলারেরও একটি চুক্তি ছিল।

খতিয়ে দেখছে শ্রীলঙ্কা

ঘুষ জালিয়াতির অভিযোগের পর শ্রীলঙ্কাও আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির নতুন সরকার আগের সরকারের সময় চূড়ান্ত করা আদানি গ্রিন এনার্জির মান্নার এবং পুনরিয়নের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করছে। চুক্তিগুলোর আর্থিক ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে বলে সিলন বিদ্যুৎ বোর্ডের (সিইবি) মুখপাত্র প্রকৌশলী ধনুষ্ক পরাক্রমসিংহ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের বড় প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আদানি গ্রুপ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক উদ্বেগের আলোকে এটি জরুরি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে কলম্বোয় আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি বন্দরকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে আমেরিকার সরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি)। তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে। 

একতরফা চুক্তির ফাঁদে বাংলাদেশ

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী রিলায়েন্স ও আদানির জন্য বিদ্যুৎ ব্যবসার বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। মোদির সফরের দুই মাসের মাথায় আদানি পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভেতরেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব ছিল আদানির। তবে সমঝোতার ২ বছর পর ২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়।  

চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে পিডিবি। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির পরতে পরতে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত আছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৩ মাস অন্তর কত বিদ্যুৎ নেবে, তা আগেই ঘোষণা করতে হবে। যদি বাংলাদেশ এর চেয়ে কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ঘোষিত পরিমাণের সমান দাম পরিশোধ করতে হবে। অথচ বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলোর সঙ্গে এমন কোনো শর্ত নেই। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে পিডিবি কখনোই ৩৪ শতাংশের নিচে বিদ্যুৎ নিতে পারবে না। কম বিদ্যুৎ নিলে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত কয়লা ব্যবহার করা হতো তার দাম ও কয়লা পরিবহন খরচের অর্থ দিতে হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার পরিমাণ, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বেশি ধরা হয়েছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে কয়লার সিস্টেম লস ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর চুক্তিতে এমন বিধান নেই। দেরিতে বিল পরিশোধের জন্য বছরে ১৫ শতাংশ সুদ ধরা আছে আদানির চুক্তিতে, যা পায়রায় নেই।

পায়রা ও রামপাল চুক্তিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য উভয় পক্ষই একে অপরের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পাবে। তবে আদানির চুক্তিতে বলা হয়েছে, এমন কোনো ঘটনায় বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ না কিনতে পারে, তবে ক্যাপাসিটি চার্জ, জরিমানাসহ সব পাওনা দিতে হবে। একই কারণে যদি আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারে, তবে পিডিবিকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে তারা বাধ্য  থাকবে না।

এ ছাড়া যদি রাজনৈতিক কোনো কারণে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটা মেরামত ও এ-সংশ্লিষ্ট সব খরচ পিডিবিকে দিতে হবে। রামপাল বা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এ সম্পূরক খরচ দিতে হবে না। 

গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ছয় টাকা ৬০ পয়সা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচলন (ওঅ্যান্ডএম) খরচ এক টাকা। জ্বালানি (কয়লা) খরচ প্রতি ইউনিটের জন্য সাত টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে খরচ হয়েছে ১৫ টাকা ১৪ পয়সা। চুক্তিতে অসম সুবিধার জন্য আদানির ওঅ্যান্ডএম খরচও অন্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।

কয়লায় গচ্চা ৩০০০ কোটি

রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রর চেয়ে আদানির কয়লার দাম বেশি ও মান খারাপ। অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা কেনায় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ছাড় মিললেও আদানির ক্ষেত্রে তা পাচ্ছে না পিডিবি। 
২০২৩ সালের জুন থেকে এই জুন পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার দাম গড়ে পায়রা নিয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা; রামপাল ৭ টাকা ৯২ পয়সা। একই সময়ে আদানির দাম পড়েছে গড়ে ৮ টাকা ১৫ পয়সা। অর্থাৎ পায়রার চেয়ে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৪১ পয়সা; রামপালের চেয়ে ২৩ পয়সা বেশি নিয়েছে আদানি। এ হিসাবে ১৫ মাসে শুধু কয়লার দামেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি।

বর্তমানে প্রতি টন ৪৬০০ কিলো ক্যালরির কয়লা ৯০ ডলারে কিনছে আদানি। অন্যদিকে একই মানের কয়লা পায়রা কিনছে ৬৮ ডলারে। সে হিসাবে প্রতি টনে ২০ থেকে ২২ ডলার বেশি নিচ্ছে আদানি। 

পিডিবির এক সাবেক প্রকৌশলী বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। পায়রা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দামে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পিডিবি ভোগ করে। রামপালও বছরজুড়ে কয়লা কেনার সময় ছাড়ের শর্তেই চুক্তি করে। আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। তার চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি। 

পিডিবির কর্মকর্তারা আরও জানান, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার কেনা দাম ধরেই বিল করে। তবে চুক্তি অনুসারে আদানির আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার সূচকের (কোল ইনডেক্স) গড় মূল্য হিসাব করা হয়। গড় দাম ধরার কারণে আদানির বিল বাড়তি আসছে। 

কী করছে বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের শাসনামলের আদানিসহ বড় বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটি অত্যধিক নির্মাণ খরচ, চুক্তির জন্য অনৈতিক লেনদেনসহ কয়েকটি বিষয় যাচাই করছে। 

সূত্র বলছে, প্রায় সব প্রকল্পই আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন। গেল দেড় দশকে এই কোম্পানিগুলোর সম্পদ কয়েক গুণ বেড়েছে শুধু বিদ্যুৎ ব্যবসা দিয়ে। তাই কমিটি এই চুক্তিগুলো সম্পাদনের সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে দেখছে। সাবেক বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, আহমদ কায়কাউসসহ পিডিবির সাবেক কয়েকজন চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলীর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি পর্যালোচনায় আন্তর্জাতিক মানের আইন ও তদন্তকারী সংস্থাকে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি, যা আন্তর্জাতিক সালিশি আইন ও কার্যধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করা যায়। 

কারা কী বলছেন

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, আদানির চুক্তির সবখানেই বাংলাদেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই এ চুক্তি বাতিল করতে হবে। 

অর্থনীতিবিদ এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা আনু মুহাম্মদ বলেন, আদানির চুক্তির কোনো প্রয়োজন ছিল না। একটি অন্যায্য চুক্তি জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদানি তো চুক্তি অনুসারে সুযোগ নেবেই। তিনি বলেন, সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক চাপ থাকতেই পারে। তাই সরকারের উচিত কীভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা যায়, দ্রুত তা খতিয়ে দেখা।

পর্যালোচনা কমিটির সদস্য ও বুয়েট অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী সমকালকে বলেন, আমরা বিদ্যুতের চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছি। আমি আশা করছি, সরকারের কাছে একটি মানসম্মত প্রতিবেদন তুলে দিতে পারব। কমিটি কী কী অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি হাসিব চৌধুরী। 

অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, একটি শক্তিশালী কমিটি আদানিসহ বিভিন্ন প্রকল্প খতিয়ে দেখছে। তারা যে সুপারিশ করবে, সরকার সে অনুসারে ব্যবস্থা নেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d