Bangladesh

আদানির বিদ্যুতের বকেয়া পাওনা ছাড়ে তোড়জোড়

৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি; ছাড় করতে বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠি

ভারতীয় কোম্পানি আদানি ও দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎখাতের ভর্তুকি পরিশোধে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর অর্ধেক দেয়া হবে আদানি বিদ্যুৎকে আর বাকি অর্ধেক দেয়া হবে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বাবিউবো) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই টাকায় আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির অপরিশোধিত বিল মেটানো হবে।

বাবিউবো সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে দেয়ার পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এবং আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ জমেছে ৪২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, পবিত্র রমজান, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভর্তুকির অবশিষ্ট অর্থ (৩৫,০০০-১৭,০০০) ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড় করা প্রয়োজন বলে বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকার মধ্যে আগামী মার্চ মাসের জন্য চার হাজার কোটি টাকা, এপ্রিল মাসের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, মে মাসের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং জুন মাসের জন্য চার হাজার ৭০১ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের জন্য চার হাজার কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের পাওনা পরিশোধ করতে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা মিলিয়ে মোট তিন হাজার কোটি টাকা জরুরিভিত্তিতে ভর্তুকি হিসেবে ছাড় করার জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে আদানি গ্রুপ তাদের ঝাড়খন্ড প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিদ্যুৎ কেনার বিপরীতে ৩১ কোটি ডলার (৩,৫০০ কোটি টাকা) বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। এ সময় বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) জানিয়েছিল, এর আগের মাসে কিছু অর্থ প্রদান করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা (১.৬৩ বিলিয়ন ডলার) পাওনা জমে গেছে।

দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিংক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি।

এ নিয়ে গত বছরের শুরুতেই আদানির প্রতিনিধিদলের সাথে দফায় দফায় আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিপিডিবিকে জানানো হয়, পায়রা ও রামপাল কেন্দ্রের চেয়ে তাদের বিদ্যুতের দাম কম হবে।

আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার পরপরই, অভিযোগ করা হয়, বিপিডিবি তার ঝাড়খন্ড প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ারের সাথে পাওয়ার-পারচেজ চুক্তি (পিপিএ) সংশোধন চেয়েছিল। কিন্তু তাতে সম্মত হয়নি আদানি। পাওয়ার বোর্ড পিপিএতে একটি ‘ডিসকাউন্ট’ বিধান অন্তর্ভুক্ত করার আশা করছিল।

সাধারণত কয়লার আন্তর্জাতিক মূল্য গণনা করার সময় বেঞ্চমার্কিং নিউক্যাসল প্রাইস ইনডেক্সের পরিমাণ এবং ক্যালোরিফিক মান দিয়ে ট্যাগ করা হয়, যা একজন ক্রেতাকে বাল্ক মূল্যের ওপর ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পেতে সক্ষম করে। আদানির চুক্তির ক্ষেত্রে এটি করা হয়নি।

এর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)ও চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিল। টিআইবি সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধনী গঠন এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিলের পরামর্শ দেয়।

গত বছর ফেব্রুয়ােিত গ্রাফট ওয়াচডগ তার ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে যে বিপিডিবি ‘বিতর্কিত’ আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট কেনার চুক্তি সম্পাদন করলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত জিম্মি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আদানি ওয়াচসহ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক উৎস দ্বারা প্রকাশিত তথ্যের দিকে ইঙ্গিত করে, টিআইবি বলে যে, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার আদানির মালিকানাধীন বিতর্কিত খনি থেকে আসবে। এমনকি কয়লা আদানি জাহাজ দ্বারা বহন করা হবে, যা আদানি-মালিকানাধীন বন্দরে আনলোড করা হবে এবং পরিবহন আদানি-মালিকানাধীন রেলওয়ে দ্বারা করা হবে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ আদানি দ্বারা নির্মিত ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে।

বিবৃতি অনুসারে, আদানির গোড্ডা প্রকল্পকে দেশী ও বিদেশী উদ্যোগ দ্বারা গৃহীত অন্য যেকোনো প্রকল্পের থেকে অগ্রহণযোগ্য উচ্চ হারে সক্ষমতা চার্জ দিতে হবে।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d