International

আদিয়ালা কারাগারের ‘ডেথ সেলে’ রয়েছেন ইমরান সবকিছুর নেপথ্যে জেনারেল বাজওয়া

  • ‘মানুষ জানে আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না’
  • ফর্ম-৪৫ খুঁটিয়ে দেখলেই নির্বাচনের কারচুপি স্পষ্ট হবে

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বলেছেন, আদিয়ালা কারাগারের একটি ডেথ সেলে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সাংবাদিক মেহদি হাসানকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম জিটিওতে। 

সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, ‘আমাকে এমন একটি সেলে রাখা হয়েছে যাকে বলা হয় ডেথ সেল (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য নির্জন খুপড়ি)। খুবই ছোট একটা জায়গা যেখানে সন্ত্রাসীদের রাখা হয়। কর্তৃপক্ষ আমাকে সন্ত্রাসীর আদলেই দেখাতে চায়। একজন বন্দির যেসব মৌলিক অধিকার থাকার কথা, তার কিছুই আমাকে দেওয়া হয় না। তারা এসব করে আমার মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস থাকায় আমার মন এখনো শক্ত আছে।’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় সাজা ভোগ করছেন। জেলে আটক অবস্থায় মেহদির পাঠানো বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইমরান। সাক্ষাৎকারে বর্তমান পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেন ইমরান। এই সরকারের বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।

নিজের বন্দিদশার পেছনে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার হাত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে আমি আমার সবগুলো পদক্ষেপ এবং সেগুলোর পরিণতি বিশ্লেষণ করার সময় পেয়েছি। ১১ মাস জেলে কাটানোর পর আমি প্রায় নিশ্চিত এ সবের পেছনে জেনারেল বাজওয়ার হাত ছিল। আমি অন্য কাউকে দোষ দিই না। তিনি সুক্ষ্মভাবে পুরো ব্যাপারটা পরিকল্পনা করেছেন, বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’

ইমরান আরও বলেন, ‘মিথ্যা এবং বানোয়াট বয়ান তৈরি করে জেনারেল বাজওয়ার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন। এর ফলে গণতন্ত্র এবং পাকিস্তানের ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা তিনি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ 

বিশ্ববাসীর উদ্দেশে ইমরান বলেন, ‘আমার বার্তা খুবই সহজ। ঘটনাটি শুধু ইমরান খানের সাথে করা হয়নি। বরং তা গণতন্ত্র এবং ২৫ কোটি পাকিস্তানি জনগণের ওপর আঘাত হিসেবে এসেছে। নারী, পুরুষ, শিশুরা নিহত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে। কেউ টু শব্দ করেনি। মাত্র একটি রাজনৈতিক দলকে সব দিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।’

পাকিস্তানে মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ বন্ধ উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ‘দেশের সব দল জানে, ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য নির্বাচন হয়েছে এবার। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার কথা কিন্তু এই নির্বাচনে তা হয়নি। বরং ক্ষমতাসীন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি আরও প্রকট হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যা হচ্ছে, এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না। তাতে আমার দুঃখ নেই। কিন্তু পাকিস্তানের মানুষের নির্বাচনী অধিকার দিনে-দুপুরে হরণ করা হয়েছে, এ নিয়ে বিশ্বের সোচ্চার হওয়া উচিত।’

সমর্থকেরা ইমরানকে ‘আলৌকিক দৃষ্টি’তে দেখে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন পাকিস্তানি এবং একজন মুসলিম হিসেবে আমি কর্তব্যটুকু পালন করছি। আমি অনুশোচনা বোধ করি না। আল্লাহ আমাকে সব দিয়েছেন। অর্থ থেকে শুরু করে জনপ্রিয়তা পর্যন্ত। এসব শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করাটা অনুচিত। মানুষ জানে আমি তাদের সাথে মিথ্যাচার করব না,  আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আমি মাথা নিচু করব না।

সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে ইমরান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বৈধতার অভাব আছে। পিএমএল-এন কোনোমতে ১৭টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে তাদের সন্ত্রাস, অত্যাচার এবং জালিয়াতি একদম স্পষ্ট। নির্বাচনের পরেও প্রায় দুই দিন সময় নিয়ে তারা ফলাফল জালিয়াতি করে। ফর্ম-৪৫ খুঁটিয়ে দেখলেই কারচুপি দেখা যাবে। ওরা এই কারচুপি ঢাকতে পারেনি। প্রতিপক্ষ যতই চেষ্টা করুক না কেন আমার দলের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল।’

যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও কোনো মিত্রকে পাশে না পাওয়ার বিষয়ে ইমরান বলেন, ‘আমি সবসময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছি। ন্যায়বিচারে সমতা থাকলে আমার রাজনীতিতে আসার প্রয়োজন পড়ত না। আমি বেশিরভাগ দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলাম। জেনারেল বাজওয়ারের কুটকৌশল কিছু সময়ের জন্য হয়ত প্রভাব ফেলেছে  রেখেছে, কিন্তু তা বেশিদিন থাকবে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button