International

আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট বাজুমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ

আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট বাজুমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ

আফ্রিকার দেশ নাইজারের সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গ করার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমের বিচার করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।

বাজুমকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক চাপকে যে সামরিক বাহিনী গুরুত্ব দিচ্ছে না তাদের সবশেষ এই ঘোষণা থেকে সেটা বোঝা যাচ্ছে।

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর থেকে তাকে তার প্রাসাদের বেজমেন্টে আটক করে রাখা হয়েছে।

বাজুমের চিকিৎসক সম্প্রতি তাকে দেখা আসার পর বলেছেন এরকম এক ‘কঠিন পরিস্থিতিতে’ আটক থাকার পরেও তার ‘মনোবল ভালো’ আছে।

মোহামেদ বাজুমকে মুক্তি দেয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই শনিবার তার চিকিৎসককে তার সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়।

এই পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে সামরিক বাহিনী আরো কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী বলছে যে তারা ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং তার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের বিচরের জন্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং নাইজারের আভ্যন্তরীণ ও বহিঃনিরাপত্তা ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের বিচার করা হবে।’

রাষ্ট্রীয় টিভিতে এই বিবৃতিটি পাঠ করে শোনানো হয়, তবে তাতে এর চেয়ে বেশি কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ৬৩ বছর বয়সী মোহামেদ বাজুমকে রাজধানী নিয়ামেতে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের বেজমেন্টে তার স্ত্রী ও ছেলেসহ আটক করে রাখা হয়েছে। তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধান জেনারেল আব্দুরহমান চিয়ানি ২৬ জুলাই বাজুমকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেকে নাইজারের নতুন শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন।

মোহামেদ বাজুমের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াস নাইজারের সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এমনকি তারা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণেরও হুমকি দিয়েছে। তবে এসব হুমকিতে সামরিক বাহিনী কান দিচ্ছে না বলেই এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল চিয়ানি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন তারা তাদের দেশকে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করবেন।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর নাইজারের সামরিক বাহিনীর ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করেছে ইকোওয়াস। তার মধ্যে রয়েছে নিজেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া।

এর ফলে রাজধানী নিয়ামেসহ বড় বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নাইজারের এই অচলাবস্থা অবসানের লক্ষে মধ্যস্থতার জন্য পাশে নাইজেরিয়ার প্রভাবশালী মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার নিয়ামেতে সামরিক বাহিনীর নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

সামরিক বাহিনীর নিয়োগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী আলী মাহামান লামিন জেইনি বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ইকোওয়াসের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেগুলো কিভাবে তুলে নেয়া হবে সেবিষয়ে আলোচনা হবে’।

নিজেরে অভ্যুত্থানের আগে প্রতিবেশী বারকিনা ফাসো এবং মালিতেও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের তৎপরতা এবং ভাড়াটে সৈন্য বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের মাধ্যমে আফ্রিকার বিস্তৃত সাহেল অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যেই এসব দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে।

আটক থাকা সত্ত্বেও বাজুমের লেখা একটি নিবন্ধ সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন যে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে এবং ‘আমাদের দেশ, আমাদের অঞ্চল এবং সমগ্র বিশ্বের ওপর এই অভ্যুত্থানের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।’

আটক থাকা অবস্থায় বাজুমের ওজন উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তার ২০ বছর বয়সী ছেলেরও বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্ক বাজুমকে যে অবস্থায় আটক করে রাখা হয়েছে তাকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনের ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের সময় বাজুমের ৩৪ বছর বয়সী কন্যা জাজিয়া ফ্রান্সে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। ব্রিটেন-ভিত্তিক সংবাদপত্র গার্ডিয়ানকে তিনি গত সপ্তাহে বলেছেন যে তার বাবা, মা ও ভাইকে খাওয়ার জন্য নিরাপদ পানি দেয়া হচ্ছে না, সেখানে বিদ্যুৎ নেই এবং খাবার হিসেবে তাদেরকে শুধু ভাত ও পাস্তা দেয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ফ্রিজের খাবার পঁচে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর বাজুমকে একবার দেখা গেছে। চাদের নেতা মাহামাত ইদ্রিস দেবির সাথে তার সাক্ষাতের পর এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়।

অভ্যুত্থানের পর দেবি নাইজারের রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য বাজুম ও সামরিক নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে যে তার এই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button