আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে ড. ইউনূসের বিচার
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ? স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
শ্রম আইনের মামলায় একটি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর খুব দ্রুতই বিচারের দিকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘দুর্নীতি ও অর্থ পাচার’ মামলাটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করা হয়েছে শেষোক্ত মামলাটির চার্জশিট। অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে ৩ মার্চ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর সক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল। ধারাবাহিক উদ্বেগের এক পর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১২৫ নোবেল বিজয়ীসহ ২৪২ বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। চিঠিতে তারা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। যদিও তাদের এই ‘আগ্রহ’ স্ব-প্রণোদিত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়েই তারা দেখিয়েছেন এই আগ্রহ। চিঠিতে তারা বলেন, এই পর্যবেক্ষণ শুধুমাত্র গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দেয়া রায়ই নয়। বরং দুর্নীতি দমন কমিশন পরিচালিত চলমান তদন্তেরও করা হবে। চিঠিতে তারা পর্যবেক্ষণ পরিচালনার জন্য একজন সিনিয়র আন্তর্জাতিক আইনজীবীর পরিচালনায় স্বাধীন আইনজীবী বিশেষজ্ঞদের একটা ছোট্ট দলের প্রস্তাব করেন। পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখারও আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্ববরেণ্যদের এই আহ্বানের পর সর্বশেষ পর্যায়টি হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর আপিল চলার সময় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। গত শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতর ‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র পাঠানো এক ইমেইলের জবাবে জানায়, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য করেছি, শ্রম আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে পরিচালিত হয়েছে। দুদকের মামলার চার্জশিট দাখিল প্রশ্নে মার্কিন দফতরের মুখপাত্র বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অতিরিক্ত মামলাগুলির জন্য একটি চার্জশিট অনুমোদন করেছে; যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে। এ বিষয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতো যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন যে, এই মামলাগুলি ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। শ্রম ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশে আইনের শাসন জারি থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন জাগাতে ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ার আগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায়ের মাধ্যমে ও দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় ‘বিচারিক হয়রানি’ হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারকে একাধিক চিঠি দেন নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্ব নেতারা। এই পটভূমিতে গত বছর আগস্টের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলাগুলো অন্যায়ভাবে করা হয়েছে কি না বা অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি কোনও অবিচার হয়েছে কি না সেটি দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবী পাঠানোর ‘আমন্ত্রণ’ জানান। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমন্ত্রণ আকারে কথাটি বলা হলেও সেটি ছিলো কার্যতঃ বিশ্ব নেতাদের প্রতি সরকারের ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ। ড. ইউনূসের মামলা এবং বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের আগ্রহ দেখিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেন সেই চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করলেন। এখন দেখার বিষয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার-প্রশ্নে সরকার কি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে ? দেশের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক স্বাধীন আইনজীবী বিশেষজ্ঞদের সত্যিকারার্থেই স্বাগত জানাবে ?
এ প্রশ্নে নিকট অতীতের অন্ততঃ দু’টি উদ্যোগের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে ২০০৭-২০০৮ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নেয়া একটি উদ্যোগ। আরেকটি ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে নেয়া।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অত্যন্ত নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। এ সময় তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ছিলো দুদকের একাধিক মামলা। এসব মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা। তা সত্ত্বেও বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা দু’জন আইনজীবীকে নিয়োগ দেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন কানাডার আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও মন্ট্রিয়ল ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. পায়াম আকাভান, অন্যজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী উইলিয়াম স্নোডান। শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করতে দুই আন্তর্জাতিক আইনজীবীকে উড়িয়ে আনা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু তৎকালীন ‘ওয়ান-ইলেভেন’ পরবর্তী সরকার দুই আইনজীবীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দিলেও সরাসরি আইনি লড়াইয়ের অনুমতি দেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাক্ট অনুযায়ী তারা কাউন্সিলে অ্যানরোলড’ নন। পরে তারা শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইরত এ দেশীয় আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক-পরামর্শ শেষে ফিরে যান।
আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১২ সালে। ওই বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছিলো জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। এ বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে কার্যকর অবস্থান নেয় তৎকালীন তুরস্ক সরকার। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন তুরস্কের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করেন তুরস্কের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এই দলে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ছাড়াও ছিলেন দেশটির ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট একে পার্টি এবং সা’দত পার্টির নেতৃবৃন্দ। চার দিনের সফরকালে তারা তৎকালীন আইনমন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে তুরস্কের ১৪ প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরকে ‘গোপন সফর’ আখ্যায়িত করে ব্যাপক বিতর্ক তোলা হয়। মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে কেন্দ্র করে তুরস্ক এবং বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে।
এর আগের বছর যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বৃটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান এসেছিলেন বাংলাদেশে। সরকার তাকে দেশেই প্রবেশ করতে দেয়নি। কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রেখে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয় এয়ারপোর্ট থেকেই। যদিও একটি সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ক্যাডম্যান এসেছিলেন মূলতঃ জামায়াত নেতাদের আমন্ত্রণে, তাদের পক্ষে আইনি লড়াই করতে। সরকারের দৃষ্টিতে এখন টবি ক্যাডম্যান একজন বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডাকারী ঘৃণিত এক ব্যক্তি।
এ দু’টি ঘটনা থেকে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ-প্রচেষ্টার শেষ পরিণতি সম্পর্কে ধারণা মেলে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের ঘোষণার পর সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তাও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, আদালতের যে কোনো নথি বা রায় পাবলিক ডকুমেন্ট। মামলায় কেউ পক্ষ থাকলে নিয়মানুযায়ী সে রায়ের সার্টিফায়েড কপি পায়। এছাড়া অন্য যে কেউ পক্ষ না থাকলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সার্টিফায়েড কপি তুলতে পারবে। এছাড়া যে কোনো আইনজীবী বা এক্সপার্টের সাথে ওই মামলার বিভিন্ন বিষয় বা পরিচালনা নিয়ে কথা বলতে পারবেন সেই অধিকার তাদের আছে। তবে বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, যারা সংগঠনটির সদস্য তারাই শুধু আদালতে মামলার শুনানি করতে পারে। বার কাউন্সিলের সদস্যরাই শুধু কোর্টে শুনানি করতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল পর্যালোচনা বা আলোচনার জন্য মামলা স্থগিত করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলা স্থগিতের এ ধরনের কোনও বিধান নেই।
এর আগে শ্রম আইনের মামলায় দণ্ডাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন ১২ মার্কিন সিনেটর। ওই চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান তারা। চিঠিতে তারা বলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে দেড় শতাধিক ভিত্তিহীন মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের উল্লেখ করেছে। খ্যাতনামা এই সংস্থাগুলো বলেছে, বিচারপ্রক্রিয়ার গতি এবং বারবার ফৌজদারি কার্যধারার ব্যবহার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচারব্যবস্থার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।
চিঠির প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কংগ্রেসম্যানরা যদি সে রকম চিঠি দিয়ে থাকেন, তাহলে তারা বলছেন আদালতে হস্তক্ষেপ করার জন্য।
সিনেটরদের চিঠির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এএম আমিনউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মার্কিন সিনেটরদের চিঠি দুর্ভাগ্যজনক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার হয়েছে প্রকাশ্য আদালতে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে না জেনে অথবা প্রভাবিত হয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন সিনেটররা। ২৪২ বিশ্বব্যক্তিত্বদের বিচার পর্যবেক্ষণে বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানো প্রশ্নে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিনউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, যারা সংগঠনটির সদস্য তারাই শুধু আদালতে মামলার শুনানি করতে পারে।
এছাড়া আরো এককাঠি বাড়িয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, কোন্ দেশের কোন্ সিনেটর কী বললো আমরা সেগুলো গায়ে মাখি না। তাদের (সিনেটর) বক্তব্য অবান্তর, অযৌক্তিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। সিনেটররা শ্রম আদালতের রায়টি পড়ুক, বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর বক্তব্য দিক। তিনিও বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে সিনেটরদের আহ্বান জানান।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে সরকার প্রধান এবং অন্যান্যদের আহ্বান ছিলো ‘নিছক কথার পিঠে কথা’। কিন্তু এই কথাকেই যে লুফে নিয়ে ২৪২ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের বিশেষজ্ঞ আইনজীবী এবং পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর আগ্রহ দেখাবেন- এমনটি হয়তো ভাবেননি নীতি নির্ধারকরা। বিশ্লেষকদের মতে, সত্যিই যদি বিশেষজ্ঞরা ড.ইউনূসের বিচার পর্যবেক্ষণ করতে আসেন, তখন হয়তো সরকার ভিন্ন তরিকা গ্রহণ করবে। বিশেষজ্ঞ দলকে ভিসা না দেয়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দোহাই দিয়ে সরাসরি আইনি লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হতে না দেয়া কিংবা অন্য নতুন কোনো কৌশল। কারণ, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলকে শেষ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দেয়ার যথেষ্ট যুক্তি সরকারের পক্ষে রয়েছে।
ড. ইউনূসের বিচার পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা প্রশ্নে আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তাদের মামলা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই আমি আশা করবো তারা যেহেতু আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, তাদের যেন দেশে আসার সুযোগ দেয়া হয়। তাদের যেন ভিসা দেয়া হয়। তারা যেন নথিপত্র দেখতে পারেন সেই সুযোগ করে দেয়া হয়- এই প্রত্যাশা করছি।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের এই রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত সরকার আমন্ত্রণ জানানোর পরই এসেছে। এখন সরকারের অনুমতির ওপর এটি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, কোনও বিদেশী আইনজীবী আদালতে ‘মুভ’ করতে পারবেন কি না এটি বার কাউন্সিলের এখতিয়ার। বার কাউন্সিলই এটির পারমিশন দেবে। আদালত নয়। সরকারের সর্বময় ক্ষমতা রয়েছে। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিদেশী আইনজীবীরা আদালতেও শুনানি করতে পারবে। সরকার এলাউ না করলে হবে না। কারণ, পাবলিক ডকুমেন্ট হিসেবে আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা বা ড. ইউনূসের আইনজীবী প্যানেলকে সহায়তা করার অধিকার তাদের রয়েছে।