Bangladesh

আপৎকালীন সঙ্কট মেটাতে বেড়ে যাবে ব্যাংকের ব্যয়

– নীতিনির্ধারণী সুদহার ১১ মাসে চারবার বৃদ্ধি
– ব্যাংক ঋণের সুদহারসহ সামগ্রিক ব্যয় বাড়বে

ডলার সঙ্কটে টাকার মান কমে যাচ্ছে। বেড়েছে ডলারের মূল্য। এতে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। বেড়েছে জনদুর্ভোগ। এমনি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নীতিনির্ধারণী সুদহার আরেক দফা বাড়িয়েছে। এবার রেপোর (আপৎকালীন ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলোর ধার) সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে পৌনে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে চারবার বাড়ানো হলো এ সুদহার। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর বাড়ানো হয়েছিল এ সুদহার। রেপোর সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আপৎকালীন তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাবে। আর এ ব্যয় সমন্বয় করতে গ্রাহকের ওপর সুহারসহ চাপানো নানা মাশুল। সুদহার বেড়ে যাবে। এতে বেড়ে যাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। আর পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়লে মূল্যস্ফীতিও আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চারবার নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়িয়েছিল। বছরের প্রথম মাসেই অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারিতে রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে পৌনে ৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০ জুন ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছিল। গত চার অক্টোবর এক লাফে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে সোয়া সাত শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ গতকার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে পৌনে ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই টাকার সঙ্কট চলছে। অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করে চলছে। তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে ধার দেয়া হচ্ছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে। এমনি পরিস্থিতিতে রেপোর হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে। এমনিতেই ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় কমে গেছে, বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ, এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করার উপকরণ রেপোর সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর চলমান পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমদানি চাহিদা বাড়ছে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে যে পরিমাণ ডলার সরবরাহ হওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে না। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ ডলার আসছে, বিপরীতে আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। এর ফলে স্থানীয় বাজারে ডলার দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি ডলার পেতে এখন ক্ষেত্রবিশেষ ব্যয় করতে হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণের জোগান দেয়। আর এ ঋণের বিপরীতে ট্রেজারি বিল ও বন্ড দেয়া হয়। সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিলে দেয়া হয় ট্রেজারি বন্ড আর এক বছরের কম মেয়াদে ঋণ দিলে দেয়া হয় ট্রেজারি বিল। ব্যাংকগুলোর হাতে এমন সোয়া তিন লাখ কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে নগদ চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াকে ব্যাংকিং ভাষায় রেপো বলা হয়। বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর জন্য রেপোর সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়। বেড়ে যায় সুদহার। তখন কম পরিমাণ ঋণ নেয়া হয় ব্যাংক থেকে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কারোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ আদায়ের ওপর এক ধরনের শিথিলতা দিয়েছিল। বলা হয়েছিল ঋণ আদায় না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। এ কারণে নগদ আদায় ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ চাহিদা বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অপর দিকে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংকই চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহে। এমনি পরিস্থিতিতে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ তারল্যসহায়তা ও রেপো ও বিশেষ রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একদিকে ব্যাংকগুলোতে টাকার সংকট, পাশাপাশি ডলার সংকটসহ জ্বালানি তেলসহ আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি, এমনি পরিস্থিতিতে রেপোর সুদহার বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এতে বেড়ে যাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার। আর ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে বাড়বে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। এতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নীতি সুদহার আরো এক দফা বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া স্পেশাল রেপোর সুদ ৯.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭.২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএসএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে নীতি সুদহার করিডোরের নি¤œসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৫.২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto