Bangladesh

আবরার হত্যা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে পালানোর খবরে মধ্যরাতে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন—এ খবর সামনে আসার পর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েক শ শিক্ষার্থী।

সোমবার রাত ১১টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।

রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েটের ১৯তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী—আবু ওবাইদা মায়াজ ও আরাফাত সাকিব। তাঁরা বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির শেষাংশে বিচারপতি জানান, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকায় তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী লড়ছেন না। এই দৃষ্টান্ত শহীদ আবরার ফাহাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের পর কথা বলেন আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের পর কথা বলেন আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ২০ জন সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুনতাসির আল জেমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরার ফাহাদ হত্যায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।

বিক্ষোভকারী বুয়েটের শিক্ষার্থীদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপিলের শুনানির শেষ দিন বিজ্ঞ বিচারপতির কাছে মুনতাসির আল জেমির পলায়নের সংবাদ আমাদের হতভম্ব করে। ফাঁসির আসামিদের স্থান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে আবৃত কনডেম সেলে। সেখান থেকে এত শীর্ষ সন্ত্রাসীর পলায়ন ন্যক্কারজনক এবং আমাদের জন্য লজ্জার। এই পলায়ন শহীদ আবরার ফাহাদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি।’

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বক্তব্যে বলা হয়, ‘কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নিজেদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত খুনি মুনতাসির আল জেমিকে খুঁজে বের করে আটক করতে হবে। পাশাপাশি তার পলায়নকার্যে সহযোগিতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘আজকে হাইকোর্টে শুনানি চলছিল। সেখানে আমরা জানতে পেরেছি, আমার ভাইয়ের খুনি জেমি পালিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের খুনির পলায়নের জন্য রাষ্ট্র দায়ী। বর্তমান সরকারও এই দায় এড়াতে পারবে না। সরকারের ঊর্ধ্বতনরা এটা জানতে পেরেছিল কিন্তু তারা সেটা লুকিয়ে রেখেছিল। আজকে হাইকোর্ট জানিয়েছে, সে নাকি ৫ আগস্টের পরে পালিয়েছে। আমরা এর স্পষ্ট কোনো জবাব পাইনি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক বিষয়।’

আবরার ফাইয়াজ আরও বলেন, ‘কোনো টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা সরকার ও কারা বিভাগ থেকে স্পষ্ট জবাব চাই। তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হোক এবং পলায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলনের আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন আবরার ফাইয়াজ। তাতে তিনি মুনতাসির আল জেমির কারাগার থেকে পালানোর বিষয়টি সামনে আনেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto