Trending

আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কেন?

নতুন অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা কারা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে যে কেউ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন। যারা এই সুযোগ নেবেন, তাদেরকে সাধারণ ক্ষমাসহ এ সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে অর্থের উৎস সম্পর্কে সরকারের কোনো সংস্থা প্রশ্নও করবে না। তবে সরকারের এই উদ্যোগকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,‘এই সুযোগ দেয়াটা সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক। আমাদের সংবিধান এটা সমর্থন করে না। আবার ফৌজদারি আইনে যে কাজ করা অপরাধ, সেটা আপনি বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিতে পারেন না। অবৈধ টাকা উপার্জন তো অপরাধ। তাহলে যিনি এই অপরাধ করেছেন তাকে বিচার ছাড়াই ক্ষমা করে দিচ্ছেন, এটা কোনোভাবেই ঠিক না।’

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যদিও বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ কেউ কাজে লাগায়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেন। এতে আদায় হয় ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন এনবিআরের অস্থায়ী বিধানের আওতায় ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, চার বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় আগামী অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন,‘সরকারকে নানা কারণে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখন অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সরকারকে হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আমি একজন নাগরিক হিসেবে মনে করি, অর্থপাচার ঠেকাতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি কেউ এই সুযোগ নিয়ে দেশে টাকা বিনিয়োগ করেন সেটা তো খারাপ না।’

আয়কর আইন অনুযায়ী, যে কোনো করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে এর সাথে ওই করের ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পান। তবে এর বাইরে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর পরিশোধ করেও টাকা সাদা করার সুযোগ আছে। যদিও এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট যে কোনো সংস্থা চাইলে পরবর্তীতে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। অবশ্য তাতে খুব একটা অর্থ সাদা হচ্ছে না বা মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে না। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম বলেন,‘এই সুযোগ আমাদের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈষম্য তৈরি করে। তারপরও আমরা চাই কেউ এই সুযোগ নিয়ে টাকাটা দেশে বিনিয়োগ করুক। সরকার তো বারবার সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু কেউ তো সেই সুযোগ নিচ্ছে না। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার হয়েছে। আমার তো মনে হয়, লুটপাটের টাকার ৯০ ভাগই বিদেশে চলে গেছে। মাত্র ১০ ভাগ দেশে বিনিয়োগ হয়েছে। এখন এই সুযোগ নিয়ে যদি দেশে একটু বিনিয়োগ বাড়ে, তো বাড়ুক।’

আসন্ন বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে প্রশ্নহীনভাবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকদিন ধরে এই সুযোগ দেওয়ার পরও বিনিয়োগ বাড়েনি। এছাড়া নতুন বাজেটে এনবিআরকে কর আদায় বাড়াতে হবে। এজন্য তারা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে। আর যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। কর দিতে হলেও তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার দিতে হয় ২৫ শতাংশ হারে, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। আর যদি সরকার ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, তাহলে মাত্র অর্ধেক কর দিয়ে অঘোষিত টাকা সাদা করার সুযোগ পেতে পারেন এই অর্থের মালিকরা। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগও দেয়া হয়েছিল। তবে ওই অর্থবছরে দেশের একজনও সরকারের দেওয়া এই সুযোগ নেয়নি।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু, তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তবে কালোটাকা সাদা করার উদ্যোগকে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন,‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি শুধু অর্থনীতির বিষয় না, এটা নৈতিকতারও বিষয়। আমি মনে করি নৈতিক কারণেও এই সুযোগ দেয়া উচিত না। এর আগেও তো সরকার এই সুযোগ দিয়েছিল, তাতে কি অর্থনীতির কোনো উল্লম্ফন ঘটেছিল। না ঘটেনি। তাহলে কেন এই অনৈতিক সুযোগ দিতে হবে। আরেকটা বিষয় হল, এই ধরনের সুযোগ দেয়া হলে যারা বৈধ ব্যবসা করেন তারা উৎসাহ হারান। ফলে সরকার যে চিন্তা থেকে এই উদ্যোগগুলো নেয়, সেখানে আমার মনে হয় আরো ভাববার বিষয় আছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d