Hot

আবার বোয়িং প্রলোভন

লোকসানের দোহাই দিয়ে প্রায় ১৮ বছর আগে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ রুটে আবার ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী সরকারি বিমান সংস্থাটি। এ নিয়ে সরকারের হাইকমান্ড মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এ রুটে ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রির ক্ষেত্রে এর আগেও নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল।

ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দেশটির সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা বিমানমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আগেরবার দৃশ্যপটে ছিলেন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস।

কয়েক দিন আগে মার্কিন সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজ কিনলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ব্যাপারেও তারা আশাবাদী। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্র্তা বলেন, নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে যুক্তরাষ্ট্র বোয়িংয়ের বিষয়টি সামনে এনেছে। তারা অফিশিয়ালি না বললেও আকার ইঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছে বোয়িং কিনলে বিমানের নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করাসহ সব ধরনের সুযোগ দেবে। ওই কর্মকর্তা আশা করছেন, বিমানের ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট দ্রুত চালু হবে।

২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমান নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করে। অর্থনৈতিক কারণে ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় এখন আবার ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালু করতে চায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এই ফ্লাইট চালু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয়টি স্থানে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনাও আছে সংস্থাটির। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তর থেকে ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার পারমিট’ পেতে আবেদনও করেছে। লোকসানের কারণে প্রায় ১৯ বছর আগে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটটি বন্ধ করে বিমান। তবে ওই সময় বিমানের কর্মরত কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করলেও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সাড়া না মেলায় এখন ভোগান্তিতে পড়েছে বিমান। ফ্লাইটটি পুনরায় চালু করতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) থেকে ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে। ছাড়পত্রের জন্য পূরণ করতে হবে বেসামরিক বিমান চলাচলসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিএওর সব মানদণ্ড। এখন ক্যাটাগরি-২-এ অবস্থান করছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বেবিচক। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) মানদন্ড অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে সব মানদণ্ডের বাকি শর্তগুলোও পূরণ হবে।

এর আগে বেবিচককে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে এফএএ। মূলত ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণে এফএএ এটা করেছিল। বিমানের ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনায় এফএএর ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র না থাকায়ও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই-তিন বছরের মধ্যে পুনরায় ফ্লাইট চালু করতে না পারায় নতুন করে বেবিচক, শাহজালাল ও বিমানকে এফএএ থেকে ক্যাটাগরি-১-এর ছাড়পত্র নিতে হবে।

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল বেবিচক। পরে চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ থাকে ওই সমঝোতা।

বর্তমান বিমানবহরে ২১টি এয়ারক্রাফট বা উড়োজাহাজের মধ্যে ১৬টি বোয়িং কোম্পানির। এর মধ্যে ছয়টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এবং চারটি ৭৭৭। বাকিগুলো বোম্বারডিয়ার টারবোপ্রপ।

গত ডিসেম্বরে বিমানের কাছে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারের নতুন ভার্সন ৭৮৭-১০ বিক্রির বিষয়ে প্রস্তাব দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ নিয়ে বেবিচক ও বিমানের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।

এর আগে গত বছর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরের সময় এয়ারবাস কেনার বিষয়টি সামনে আসে। এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনায়ও আছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে দ্রুত সময়ে ওই রুটের ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে। বোয়িং না এয়ারবাস ক্রয় করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

বিমান বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘতম আকাশপথ ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুট। এ রুটের দূরত্ব ১২ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার। ফ্লাইটটি চালু হলে বিমান লাভবান হবে। কারণ এ রুটে যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। নিজস্ব দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালানোর আবেদন করা হয়েছে। সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করা হয়েছে। বোয়িং কেনা হবে নাকি হবে না, তা নির্ভর করছে সরকারের ওপর।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুট ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হিউস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সিতে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে বিমানের। এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের দিল্লি এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিমানবন্দরের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে।

মার্কিন সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন-বাংলাদেশ বিমান পরিবহন চুক্তি সরাসরি ফ্লাইটের জন্য আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে। সরাসরি ফ্লাইট চালু করার জন্য বাংলাদেশকে ইউএস ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্টে (আইএএসএ) ‘ক্যাটাগরি ১’ নিরাপত্তা রেটিং অর্জন করতে হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনা করছেন। বিমান যাতে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট দ্রুত সময়ে চালু করতে পারে সেই জন্য তারা সব ধরনের সহায়তা করবেন। তাছাড়া তারা চান বাংলাদেশ সরকার যেন বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রিতে সহায়তা করে। বিমানকে তারা সব ধরনের সহায়তা করে আসছেন। ভবিষ্যতে আরও সহায়তা করা হবে।

এর আগে ২০০৭ সালে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস। সে সময় বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারসহ ১০টি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ কেনে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বিউটেনিস জোরালো ভূমিকা পালন করেছিলেন। তখনো ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার কথা বলা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে পারেনি বিমান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। দ্রুত সময়ে ফ্লাইটটি চালু হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। বোয়িং না এয়ারবাস কেনা হবে সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

১০টি এয়ারবাস বিক্রি করার চেষ্টা ফ্রান্সের : বিমানের কাছে এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ বিক্রি করার চেষ্টা করছে ফ্রান্স। গত বছর ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এয়ারবাস বিক্রি করার বিষয়ে কথা বলেছেন। এয়ারবাসের উড়োজাহাজ এর আগে কেনা হয়নি।

এ বিষয়ে বেবিচকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় আমরা হয়তো দুটি এয়ারবাস কিনতে পারি। ফ্রান্স চাচ্ছে ১০টিই বিক্রি করতে। পরবর্তীকালে আমরা বোয়িংয়েরও উড়োজাহাজ কিনতে পারি। সবকিছু নির্ভর করছে আমেরিকা, ফ্রান্স ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর।’

‘ক্যাটাগরি ১’-এ উন্নতির টার্গেট : বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কয়েক বছর আগেও ক্যাটাগরি ৩-এ ছিল। কিন্তু অল্প সময়ে তা ২-এ নিয়ে আসা হয়। ফায়ার ভেহিকেল, ডুয়েল ভিউ হোল্ড ব্যাগেজ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হোল্ড ব্যাগেজ এক্সপ্লোসিভ ডিটেক্টর (ইটিডি), অ্যান্টি এক্সপ্লোসিভ কনটেইনার, কেবিন লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, এক্সসেস কন্ট্রোল সিস্টেম, এটিসি সিমুলেটর, পারফরম্যান্স বেসড নেভিগেশন (পিবিএন) ফ্লাইট প্রসিডিউর ডিজাইন সিস্টেম ইত্যাদি সংস্থাপন করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা আনা হয়েছে। এখন বেবিচকের টার্গেট বিমানবন্দরকে ক্যাটাগরি ১-এ উন্নতি করা। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের উড়োজাহাজের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার তাই করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমান চলাচল সুবিধা, স্থাপনাসমূহ এবং এটিএম সেন্টার পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন, রেডিও ন্যাভ এইডস, সিএনএস যন্ত্রাবলি সংস্থাপন এবং নতুন বিমানবন্দর ও এটিএম সেন্টার নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে। সামনের দিনগুলোতে প্যাসেঞ্জার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ৮ থেকে ২০ মিলিয়নে এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ২ লাখ টন থেকে ৮ লাখ টনে উন্নীত হবে। রানওয়ের পিসিএন ৭০ থেকে বেড়ে ১১৬-তে উন্নীত করা হচ্ছে। রানওয়েতে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ টাইপের সুপরিসর উড়োজাহাজ নিরাপদে অবতরণ করার উপযোগী হয়েছে। শাহজালালের ১,৩৫,৭৩৫.০০ বর্গমিটার ট্যাক্সিওয়ের পিসিএন ৪০ থেকে ১৫০-এ উন্নতির চেষ্টা চলছে। উড়োজাহাজের পার্কিং সুবিধা বাড়ানো, সিমুলেটর, পারফরম্যান্স বেসড নেভিগেশন (পিবিএন) ফ্লাইট প্রসিডিউর ডিজাইন সিস্টেম ইত্যাদি সংস্থাপন করা হয়েছে। বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বছরে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ টন বাড়ানো হচ্ছে।

জানা গেছে, ক্যাটাগরি উন্নীতের জন্য ফার্স্ট অডিটের রেজাল্ট অনুকূলে আছে। ফার্স্ট অডিটের পর এফএএ আরও কিছু শর্ত ও কাজ করতে বলেছে। ওই কাজগুলোও শেষ। ইতিমধ্যে আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন) অডিটে বেবিচক শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। আগামী মার্চে সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে এফএএ টিম অডিট করবে। আশা করা যাচ্ছে, ওই অডিটে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সুসংবাদ পাওয়া যাবে।

মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞায় রোম ফ্লাইটে বাড়বে খরচ : স্বাধীনতা দিবসের রাতে (২৭ মার্চ রাত সাড়ে ৩টা) ঢাকা-রোম রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চালু করা হচ্ছে। এই নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিমান। তবে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সংস্থাটিকে। রোম যেতে হলে ইরানের ওপর দিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটিই কমে আসে। কিন্তু ইরানের রুট ব্যবহার করতে না পারলে সময় ও খরচ বেড়ে যাবে। ইরানের ওপর দিয়ে যাতে রোমের ফ্লাইট চলাচল করতে পারে, সেজন্য মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিমান। বিষয়টি সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে রোম যেতে সময় লাগবে ৯-১০ ঘণ্টার মতো। আর যদি ইরানের ওপর দিয়ে যেতে না পারে তাহলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় বেশি লাগবে। এ বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে।

এই প্রসঙ্গে বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্লাইটটি মূলত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া ও বসনিয়ার আকাশ অতিক্রম করে রোম পৌঁছবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের পরিবর্তে অন্য তিনটি দেশের আকাশ ব্যবহার করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। জ্বালানি ও খরচ বেড়ে যাবে। তাছাড়া তিনটি দেশকে ওভারফ্লাই চার্জ দিতে হবে।

ওভারফ্লাইয়ের জন্য কিছু অর্থ ইরানকে দিয়ে রেখেছেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন নিষেধাজ্ঞার কারণে ওভারফ্লাইং চার্জ দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’

বিমানের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২৬ থেকে ৩১ মার্চ বিজি-৩৫৫ ফ্লাইটটি প্রতি সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রাত ২টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রোমের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় পৌঁছাবে। একইদিন রোম থেকে ছাড়বে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। ঢাকা পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। তাছাড়া ১ এপ্রিল থেকে সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রোমের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে। আবার রোম থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে। ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১২টায়। ভাড়া ধরা হয়েছে ওয়ানওয়ে ৬৪ হাজার ৩৬৫ টাকা, বিজনেস ক্লাস সর্বনিম্ন ভাড়া ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৫, রাউন্ড ট্রিপ ১ লাখ ৪ হাজার ৫৬৮ টাকা। আবার ইকোনমি ক্লাসে ভাড়া ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৮৮ টাকা।

বিমানের এমডি বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিক দিকটি যাচাই করেছি। ২০০৯ সালে রোমে যে পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী ছিলেন, এখন তা সাতগুণ বেড়েছে। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়ছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button