Hot

আমদানিতে রেকর্ড, তবুও মিলছে না সয়াবিন তেল

দেশে প্রতি মাসে সয়াবিনের চাহিদা থাকে গড়ে ৮৭ হাজার টন। রমজানে এই চাহিদা সামান্য বাড়লেও শুধু জানুয়ারিতে সয়াবিন তেল আমদানি হয় এক লাখ ১৭ হাজার টন। একই মাসে সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি হয় তিন লাখ টন, যা থেকে পাওয়া গেছে আরও ৪৫ হাজার টন সয়াবিন তেল।

গত ছয় বছরে দেশে মাসওয়ারি যে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, এটি তার মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ১০ দিনে সয়াবিন বোঝাই বেশ কয়েকটি ট্যাঙ্কার এসেছে বন্দরে। এসব ট্যাঙ্কারে এসেছে এক লাখ টনেরও বেশি সয়াবিন। চলতি সপ্তাহে তেল নিয়ে আসবে আরও অন্তত তিনটি ট্যাঙ্কার। আমদানিতে এমন রেকর্ড করার পরও ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে। চাহিদার অর্ধেক সয়াবিনও মিলছে না বাজারে। একেবারে উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল।

গত মঙ্গলবার আমদানিকারক, মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এতে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা সয়াবিন পাইকারি পর্যায়ে ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দর মানছে না কেউই।

জানতে চাইলে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে খোলা ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এটি মানা হবে বলে ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রতিটি বাজারে এখন আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে। যদি কেউ এই নির্ধারিত দামের বেশি বিক্রি ও মজুতদারি করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তারা বেশি দামে তেল কিনেছেন, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে চান। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।

তিন ট্যাঙ্কারে ৪৩ হাজার টন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, দেশে জানুয়ারিতে এক লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম ২৬ দিনে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫৭ হাজার টন। কিন্তু শেষ সপ্তাহে আবার আসতে থাকে একের পর এক ট্যাঙ্কার। এসব ট্যাঙ্কারে গত ১০ দিনে এক লাখ টনেরও বেশি সয়াবিন এসেছে। বন্দরের বহির্নোঙরে এমটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাভোনি ট্যাঙ্কার থেকে খালাস হয়েছে টি কে গ্রুপের আমদানি করা সয়াবিন তেল। এই ট্যাঙ্কারটিতে ছিল ১৩ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল। এই ট্যাঙ্কারের তেল খালাস শেষ হওয়ার পর পরই বন্দরে আসে এমটি মায়ের্সক বেফোর্ট। এটিতেও টি কে গ্রুপের সয়াবিন তেল রয়েছে, যার পরিমাণ ১৫ হাজার টন। টি কে গ্রুপের আরও ১৫ হাজার টন সয়াবিন তেল নিয়ে এর পর বন্দরে ভিড়ে অ্যাভেক্স নামের ট্যাঙ্কার। এই তিনটি ট্যাঙ্কারে টি কে গ্রুপ একাই এনেছে ৪৩ হাজার টন সয়াবিন তেল।

ভোজ্যতেল আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, আমদানি করা অপরিশোধিত তেল নিয়ে একের পর এক ট্যাঙ্কার আসছে। এগুলো খালাস করে দ্রুত পরিশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। এই তেল বাজারজাত করা গেলে বাজার স্থিতিশীল হবে, কেটে যাবে সংকট।

জাহাজ এসেছে মেঘনা, সিটি গ্রুপেরও
মেঘনা গ্রুপের পাঁচ হাজার টন সয়াবিন তেল নিয়ে বন্দরে আসে এমটিএম আমস্টারডাম নামের একটি ট্যাঙ্কার। ২৫ হাজার টন সয়াবিন তেল নিয়ে এসেছে সি ওয়েজ গ্যালে ট্যাঙ্কার। এতে সিটি গ্রুপের ১৪ হাজার টন তেল রয়েছে অন্য কোম্পানির আছে ১১ হাজার টন সয়াবিন। রোজা শুরুর পর এমজিআইয়ের পণ্য নিয়ে আসছে আরও ট্যাঙ্কার। এসব ট্যাঙ্কারে আছে ৪৫ হাজার টন সয়াবিন তেল। সব মিলিয়ে এমজিআইয়ের ৫০ হাজার টন এবং সিটি গ্রুপের ২৬ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হচ্ছে। 

আসছে সয়াবিন বীজও
সয়াবিন বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে সেটিও বাজারজাত করছে পাঁচটি শিল্প গ্রুপ। জানুয়ারিতে  সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি হয় তিন লাখ টন, যা থেকে পাওয়া গেছে ৪৫ হাজার টন সয়াবিন তেল। রোজার আগে সয়াবিন বীজ নিয়ে তিনটি জাহাজ বন্দরে নোঙর করেছে। এই তিন জাহাজে রয়েছে ৫৯ হাজার ৪৩৮ টন সয়াবিন বীজ, যা নিয়ে আসছে এমভি ইয়োগা নামের একটি জাহাজ। এর আগে তিন জাহাজে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টন সয়াবিন। টি কে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডই এবারে বেশি এনেছে সয়াবিন ও সয়াবিন বীজ।

প্রশাসনের দর মানছেন না কেউ
খাতুনগঞ্জে মেসার্স মায়ের দোয়া স্টোরে তেল কিনতে আসা আবদুর রহমান বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখেছি চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন। সেই আশায় পাইকারি এ মোকামে এসেছি। তিন দোকানে কোনো বোতলজাত তেল পাইনি। যেখানে পেয়েছি, সেখানে প্রশাসন যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার থেকে ৩০ টাকা বেশি চাচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।

হালিশহর ফইল্লাতলী বাজারে কথা হয় চাকরিজীবী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুনলাম খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। অথচ বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৯২ টাকা চাইছে। তারা তো কাউকেই মানছে না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না প্রশাসন।

দেশে গত নভেম্বর থেকে সয়াবিনের সংকট চলছে। বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম বাড়তি। আবার বোতলজাত সয়াবিন প্রায় নেই বলা চলে। অথচ গত ৯ ডিসেম্বর সরকার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৭ ও বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে এ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d