Trending

আমদানি ব্যয়ে আসছে আরও কঠোর লাগাম, লক্ষ্য রিজার্ভে চাপ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছর ও পরবর্তী দুবছর আমদানি ব্যয়ে কঠোর লাগাম টানা হবে। সংকটের মুখে ডলার ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর কৌশল হিসাবে প্রথমে আগামী অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে না। ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে পরবর্তী দুই অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পর্যায়ক্রমে আরও কমিয়ে আনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। অর্থ বিভাগ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি মূলত আমদানিনির্ভর পণ্যের জন্য বেশি হচ্ছে। আমদানি খাতে ব্যয় কমলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়নের নিচে। আমদানি খরচ কমলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমে আসবে। মূলত এই দুই বিষয়কে মাথায় রেখেই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে এই কৃচ্ছ সাধনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ। যা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা করা হবে।

তবে আমদানি ব্যয়ে কঠোরতা অবলম্বনে শিল্পের উৎপাদন ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে এ প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এছাড়া আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতের ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি না বাড়িয়ে ১০ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪-২০২৭ অর্থবছরে আমদানি খাতে ব্যয়ে এক ধরনের লাগাম টেনে দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আমদানিতে কঠোরতা প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু বলেছেন, রপ্তানি যেহেতু আমদানিনির্ভর, তাই মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেন রপ্তানিতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে সেখানে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঋণ আমদানি প্রবৃদ্ধিসহ আরও কয়েকটি কারণে আগামীতে রিজার্ভ আরও বাড়বে। তার মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

আগামী ৬ জুন বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ইতোমধ্যে এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। একই সময়ে রিজার্ভ বাড়ানোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

রিজার্ভ নিয়ে বড় ধরনের চাপে আছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে মোট রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন দাবি করলেও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ আছে ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন দুটি পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে থাকে। আর ব্যবহারযোগ্য (নিট) রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৩শ কোটি (১৩ বিলিয়ন) ডলারের নিচে নেমেছে। আগামী অর্থবছরে রিজার্ভকে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ বিভাগ। এজন্য রিজার্ভের অর্থ ব্যয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হিসাবে ‘রাশিয়া থেকে গৃহীত ঋণ এবং মেগা প্রকল্পের বৃহৎ ঋণ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত থাকায় ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের অঙ্ক বৃদ্ধি পাবে। সেই বছরে ৫৩ কোটি ১০ লাখ ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার শোধ করার হিসাব করা হয়েছে। যে কারণে আগামী তিন অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাশ্রয়ের একটি প্রধান রাস্তা হচ্ছে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধিকে সংকুচিত করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী বলেন, আমদানি ব্যয়ে নানা ধরনের বিধিনিষেধ দিয়ে গত এক বছরে রিজার্ভ খুব বেশি বাড়াতে সক্ষম হয়নি। ২০-২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করেছে। বেশি মাত্রায় আমদানি ব্যয়ে লাগাম টানলে এটি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধা সৃষ্টি হবে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

এদিকে আমদানি ব্যয়ের ওপর চলতি অর্থবছরে নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপের ফলে দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে শিল্পোৎপাদনের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে যা গত বছর ছিল ৮.৩৭ শতাংশ। এর আগের দুই অর্থবছরে শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৯.৮৬ শতাংশ ও ১০.২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ এই নয় মাসে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ৮২৭ কোটি ডলার। এ সময় আমদানি ব্যয় কমেছে ১৫.৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার চাপ রয়েছে। রয়েছে বকেয়া পরিশোধের চাপও। যার ফলে আমদানি কমেছে। এতে উৎপাদনও কমেছে।

এ বিষয়ে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানি পণ্যের বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। আমদানি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি না বাড়লে ব্যাংকগুলো থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে না ঠিকমতো। এখনই ডলার সংকট বিদ্যমান। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে রপ্তানি খাতে গিয়ে পড়বে। ফলে রিজার্ভ বাড়াতে আমদানি ব্যয়ে কঠোরতা করতে গিয়ে যেন রপ্তানি আয়ে আঘাত না পড়ে সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।

আমদানি ব্যয় কমানোর আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানিসহ অন্যান্য পণ্য বেশি মূল্যে আমদানি হচ্ছে। যার প্রভাবে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানিতে লাগাম টানা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা রূপরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটি দেখতে হবে। আমাদের মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে আংশিক আন্তর্জাতিক মূল্য ও আংশিক অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর। গত দুবছরে বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, ওই সময় দেশেও বেড়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক কমলেও আমাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেই দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যস্ফীতি কমবে সেটি ধরে নেওয়া যায় না। এখন কতটা পণ্য আমদানি করতে পারছি, ডলারের মজুত কেমন, ঘাটতি বাজেটের জন্য কত টাকা ছাপানো হচ্ছে, মুদ্রানীতি সংকোচন না সম্প্রসারণ দেওয়া হচ্ছে, রাজস্বনীতি এসবের ওপর নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d