আমরা নিজেদের মুক্ত করেছি; এখন বিশ্ব জানুক আমরা ঐক্যবদ্ধ: রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ৪টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকটি শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক নেতাদের নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “এখন আমাদের পুরো বিশ্বকে বলতে হবে যে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা যা পেয়েছি, তা একসঙ্গে অর্জন করেছি… যারা আমাদের বুক চেপে ধরেছিল, তাদের আমরা জোর করে বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেদের মুক্ত করেছি। আমাদের একসঙ্গে বিশ্বের সামনে এটি দেখাতে হবে।’
চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় করতে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ৪টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘অনেকেই আমাদের স্বাধীনতা পছন্দ করে না। গণ-অভ্যুত্থানকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। তারা দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে। আমরা যে বাংলাদেশ গড়তে চাইছি সেটাকে ছাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, “তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। তারা গণঅভ্যুত্থান পছন্দ করে না এবং এটিকে মুছে ফেলতে চায়। তারা এতটাই শক্তিশালী যে তারা মানুষকেও প্রভাবিত করতে পারে। এসব ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখন আমাদের বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।”
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসতে শুরু করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাতে একদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এ দ্বিতীয় দফা বৈঠকের ডাক দেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে আমার দেশ পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জানান, বৈঠকে ড. ইউনূস উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কাছে ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচার, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ- এ তিনটি বিষয়ে মতামত চান।
ফুয়াদ বলেন, সব রাজনৈতিক দল এসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এজেন্ডা ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মকর্তারা এখনও বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে কর্মরত থাকায় এ নিয়ে নেতৃবৃন্দ হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে জানান ফুয়াদ। এসব কর্মকর্তাকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় প্রধান উপদেষ্টাকে।
এর আগে গতকাল তিনি তার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একটি এন্টি প্রোপাগান্ডা সেল গঠনের পরামর্শ দেন।
আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “আমরা সাম্প্রতিক উত্তেজনা, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, সাম্প্রদায়িক সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, স্থল বাস্তবতা, জনমত এবং শিক্ষা সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের কাছ থেকে নোট নিয়েছেন।”
এসময় প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা [শিক্ষার্থীরা] দেশের অভিভাবক। এই ভূমিকাটি ভুলে যাবেন না। নিজের ভূমিকা ভুলে যাবেন না। এখানে অনেকেই আছেন এবং অনেকে নেই। কিন্তু যারা এখানে নেই তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক।”
ইউনূস আগামীকাল (৫ ডিসেম্বর) তার সঙ্গে মত বিনিময়ের জন্য ধর্মীয় দলগুলোর নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানান।