Trending

‘আমরা নিজের দেশেই অদৃশ্য’: মোদির ভারতে মুসলিম অভিজ্ঞতা

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে, ভারতের ২০ কোটি মুসলমানদের জীবনযাপন অশান্ত হয়ে পড়েছে। সন্দেহভাজন গরু ব্যবসায়ীদের গণধোলাই দিয়ে মেরেছে কিছু উগ্র হিন্দু গোষ্ঠী এবং মুসলমান মালিকানাধীন ছোট ব্যবসাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তারা।

মসজিদের বিরুদ্ধে পিটিশন ফাইল করা হয়েছে। মুসলিম নারীদের অনলাইন ‘নিলাম’ করা নিয়ে ইন্টারনেটে ট্রল করা হয়েছে। ডানপন্থী গোষ্ঠী এবং মূলধারার কিছু গণমাধ্যম ‘জিহাদ’ – ‘লাভ জিহাদ’ এর অভিযোগ দিয়ে ইসলামোফোবিয়াকে উস্কে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম পুরুষদেরকে বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবং মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়েছে- তার তিন চতুর্থাংশ বিজেপি শাসিত অঞ্চলগুলোতে ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

‘ভারতের মুসলমান জনগোষ্ঠী যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে পড়েছেন, তারা নিজের দেশেই অদৃশ্য সংখ্যালঘু,’ এ কথা বলেছেন জিয়া উস সালাম, যিনি ‘বিয়িং মুসলিম ইন হিন্দু ইন্ডিয়া’ বইয়ের লেখক। কিন্তু বিজেপি এবং মোদি ভারতে সংখ্যালঘুদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিউজউইক ম্যাগাজিনকে বলেছেন, ‘এগুলি কিছু লোকের বক্রোক্তি যারা তাদের বিভ্রমে বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে মেশার প্রয়োজন বোধ করে না। এমনকি ভারতের সংখ্যালঘুদের কাছেও ‌এসব ব্যাখ্যা অচল।’

মিসেস আহমেদের পরিবার কয়েক দশক ধরে আগ্রায় বসবাস করছে। তিনি ওই শহরের অলিগলি এবং জনাকীর্ণ বাড়ির মধ্যে থাকা অনেক হিন্দু বন্ধুদের মধ্যে- পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। ২০১৯ সালে, মিসেস আহমেদ একটি স্কুল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের হয়ে যান, যেখানে মাত্র দুজন মুসলমানদের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারত বিমান হামলা শুরু করার পর ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি ম্যাসেজ পোস্ট করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।

গ্রুপের ওই ম্যাসেজে লেখা ছিল ‘যদি তারা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করে, আমরা তাদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করব’। সন্ত্রাসী ও ভারতের শত্রুদের তাদের বাড়ির ভেতরে হত্যা করার বিষয়ে মোদী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার সাথে গ্রুপের ওই বার্তার মিল পাওয়া যায়। ‘আমি আর শান্ত থাকতে পারিনি। আমি আমার বন্ধুদের বলেছি তোমাদের সমস্যা কী? তোমরা কি বেসামরিক মানুষ ও শিশুদের হত্যাকে প্রশ্রয় দাও?’ মিসেস আহমেদ স্মৃতিচারণ করছিলেন। তিনি শান্তির পক্ষে প্রচারণায় বিশ্বাসী ছিলেন।

প্রতিক্রিয়াও আসে সাথে সাথেই। ‘একজন জিজ্ঞেস করে, তুমি কি শুধু মুসলিম বলেই পাকিস্তানপন্থী? তারা আমাকে দেশবিরোধী বলেও অভিযুক্ত করে,’ তিনি বলেন, ‘অহিংসার পক্ষে কথা বলাকে দেশবিরোধিতা বলে গণ্য করা হয়। আমি তাদের বলেছিলাম দেশকে সমর্থন করার জন্য আমাকে সহিংস হতে হবে না। আমি এই গ্রুপ থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।’

পরিবেশে যে বদলে গিয়েছে সেটা অন্যভাবেও অনুভব করতে পেরেছেন মিসেস আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে, তার বিশাল বাড়িটি লিঙ্গ বা ধর্ম নির্বিশেষে তার ছেলের সহপাঠীদের জন্য একটি আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন ‘লাভ জিহাদ’ এর উৎপাতে হিন্দু মেয়েদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলে যেতে বলেন তিনি যেন তারা ছেলের ঘরে বেশি সময় না কাটায়।

আগ্রার পঞ্চম প্রজন্মের বাসিন্দা পরিবেশবাদী কর্মী ইরামও স্থানীয় স্কুলে কাজ করার সময় শহরের শিশুদের মধ্যে কথোপকথনে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। ‘আমার সাথে কথা বলবে না, আমার মা বারণ করেছে,’ তিনি এই কথাটি একটি শিশুকে তার একজন মুসলিম সহপাঠীর উদ্দেশে বলতে শুনেছেন। ‘আমি ভাবলাম, সত্যিই?! এটি তাদের গভীরে জমে থাকা ফোবিয়ার (মুসলিমদের নিয়ে) প্রতিফলন। এটি বাড়তে বাড়তে এমন রূপ নেবে যা আমরা সহজে নিরাময় করতে পারব না,’ ইরাম বলেন। তার নিজেরও অনেক হিন্দু বন্ধু ছিল, এবং একজন মুসলিম নারী হিসেবে তিনি কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেননি।

শুধু বাচ্চাদের মধ্যেই এই বিষয়গুলো সীমাবদ্ধ নেই। আগ্রার একটি ব্যস্ত রাস্তার পাশে নিজের ছোট অফিসে বসে স্থানীয় সাংবাদিক এবং আন্তঃধর্ম সংগঠক সিরাজ কোরেশি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে পুরনো বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে বিলাপ করেন। তিনি সাম্প্রতিক এক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, শহরে ছাগলের মাংস সরবরাহকারী এক ব্যক্তির পথ আটকে হিন্দু ডানপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছিল এবং জেলে নিক্ষেপ করেছিল। ‘তার যথাযথ লাইসেন্স ছিল, কিন্তু পুলিশ তারপরও তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়,’ কুরেশি বলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button