Bangladesh

আমলাদের পদোন্নতির জন্য মন্ত্রীদের ‘তদবিরের’ হিড়িক

দশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে নয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যের আধা সরকারি পত্র (ডিও)

সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য মন্ত্রীদের আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেওয়া বন্ধ হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে ১০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডিও দিয়েছেন।

কোনো মন্ত্রী ডিও দিয়েছেন কোনো কর্মকর্তাকে সচিব করতে। কেউ ডিও দিয়েছেন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির অনুরোধ জানিয়ে। ডিওগুলো পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে।

ডিও দেওয়া মন্ত্রীরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারও এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ডিও দিয়েছেন।

এর বাইরে গত জুন ও জুলাই মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাজাহান খান দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ডিও দিয়েছিলেন, যা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘সচিব করতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন’।

আমি বুঝতে পারি যে আমি ছোট হচ্ছি এবং বিব্রত হচ্ছি। কিন্তু অনুরোধ ফেলতে পারি না।

জাহিদ আহসান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিএটিসি) সাবেক রেক্টর আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেছেন, মন্ত্রীদের এভাবে ডিও দেওয়া এবং ডিও নিতে মন্ত্রীদের কাছে যাওয়া—দুটিই বিধিসম্মত নয়।

মন্ত্রীরা শপথ নেন এই বলে যে তাঁরা অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। কোনো কর্মকর্তার পক্ষে ডিও দেওয়া কোনো কর্মকর্তার প্রতি অনুরাগ দেখানো, যেটা শপথের বিপরীতমুখী কাজ।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী তাঁর পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।

কিন্তু ডিও দেওয়া কিংবা ডিও পেতে মন্ত্রীদের কাছে যাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। বরং তা বেড়েছে। কারণ হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছুদিনের মধ্যে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি আসছে। আবার সচিব পদমর্যাদার কিছু কর্মকর্তার অবসরের সময় হয়ে এসেছে। সেখানেও সরকার আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবে। এরই মধ্যে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে ডিও দিচ্ছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আধা সরকারি পত্র হচ্ছে যোগাযোগের একটি মাধ্যম। মন্ত্রীরা এই মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। তবে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনের নিয়ম মেনে চলা হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ডিও দেওয়া মন্ত্রীরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ।

তাঁরা ‘সৎ ও যোগ্য’

মন্ত্রীদের দেওয়া আটটি ডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাঁরা যাঁদের পদোন্নতির জন্য অনুরোধ করেছেন, তাঁদের সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজের জায়গায় সুনামের কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারের সদস্য ও সরকারের বিশ্বস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখানেও প্রশ্ন উঠেছে যে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য ডিও লাগবে কেন। দলের কোনো সংগঠনের কর্মীর পরিচয় কেন মন্ত্রী তুলে ধরে পদোন্নতির অনুরোধ করবেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীরা যে ডিও দিচ্ছেন, সেটা তদবির। তিনি ২৭ জুলাই প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যকেই নতুন বক্তব্য বলে উল্লেখ করেন। আগের বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, যে কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পত্র দেন, সেই কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, তিনিই পত্র পাঠানোর জন্য তদবির করেন। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এভাবে ডিও দিতে নিষেধ করা উচিত। এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

যেসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে ডিও দেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার। তাঁকে সরকারি কর্মচারীদের বেতনকাঠামোর শীর্ষ ধাপে (গ্রেড-১) পদোন্নতি দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ডিও দেন গত ৬ জুন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একটি প্রকল্পের পরিচালক (উপসচিব) মো. নুরুল আমিনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে ডিও দেন গত ১৩ জুলাই। এ ছাড়া গত ৬ জুন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহাবুবুর রহমানকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডিও দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।

বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক (গত ২৭ জুলাই) প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিনি (মাহাবুবুর) সেখানে ভালো কাজ করেছেন। সে জন্য তাঁর নামে সুপারিশ করেছি। তবে পদোন্নতি হতেই হবে, তা-ও নয়।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলামকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গত ৯ জুলাই ডিও দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি উল্লেখ করেছেন, সাইফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

যে কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পত্র দেন, সেই কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, তিনিই পত্র পাঠানোর জন্য তদবির করেন।

আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

কৃষিমন্ত্রী ভারত সফরে রয়েছেন। সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মন্ত্রীদের ডিওতে পদোন্নতি হয় কি না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কতটা কাজে আসে, তা তাঁর জানা নেই।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোমিনুর রশীদকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গত ৪ জুলাই ডিও দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। মোমিনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ডিও দেওয়ার বিষয়টি জানেন। মন্ত্রীদের ডিও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কতটা কাজে লাগে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

তদবিরের কারণে জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা নষ্ট হয় কি না, জানতে চাইলে মোমিনুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল আখেরকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গত ২ জুন ডিও দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে গ্রেড-১-এ পদোন্নতি দিতে গত ৭ জুন ডিও দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার দাসকে গ্রেড-১-এ পদোন্নতি দিতে গত ২৯ মে ডিও দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামানকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ জানিয়ে গত ১২ জুন ডিও দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার।

দেখা যাচ্ছে, এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার দক্ষতা ও যোগ্যতার বর্ণনা দিয়ে ডিও দিচ্ছেন আরেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মতে, কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবহার করে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে মন্ত্রীদের কাছ থেকে ডিও জোগাড় করেন। এ কারণেই এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে নিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের ডিও দিতে দেখা যায়।

মন্ত্রীরা কেন ডিও দিয়েছেন, তা জানতে কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সাড়া পাওয়া যায় শুধু প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল আখেরের অনুরোধ ফেলতে পারেননি। তবে তিনি মনে করেন, ডিও পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। কারণ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি যে আমি ছোট হচ্ছি এবং বিব্রত হচ্ছি। কিন্তু অনুরোধ ফেলতে পারি না।’

‘এখন দেখা হয় কে কার লোক’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর), গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, রাজনৈতিক মতাদর্শ, চাকরিজীবনের সুনাম, দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। যুগ্ম সচিব পদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত পূরণের পর পদোন্নতি পাওয়ার কথা কর্মকর্তাদের।

পিএটিসির সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে তদবির বেড়ে গেছে। এখন দেখা হয় কে কার লোক। সে বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রীর কাছে যান বলেই তাঁর নামে ডিও লেটার পাঠানো হয়। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। শতভাগ নিয়ম মেনে পদোন্নতি দিলে কেউ কারও কাছে যাবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor