আমাদের যারা ভোট চোর বলে, তারা ভোট ডাকাত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে কাতার ও সুইজারল্যান্ড সফর–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেনছবি: বাসস
যারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন পছন্দ করছে না, তারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। মানুষের যদি পছন্দ হয় ভোট দেবে, না দিলে থাকবেন না।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা ভোট চোর বলে, তারা হলো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থান হচ্ছে ডাকাতি করে, খুন করে, হত্যা করে।’
প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনটি টেলিভিশনগুলো সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দুই দেশ সফরের বিষয়বস্তু লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশি–বিদেশি মহলের আগ্রহের সীমা নেই। আমরাও একধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রচার করছি। নির্বাচন কি ডিসেম্বরের পরে হবে, নাকি তার আগে—কবে; এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কী এমন পরিস্থিতি যে নির্বাচন আগে দিয়ে আপনাদের মুক্তি দিতে হবে? সংবিধান অনুযায়ী যখন সুনির্দিষ্ট সময় আছে, ঠিক সেই সময়ে নির্বাচন হবে। অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আপনারা কি চান না এই গণতান্ত্রিক ধারাটি অব্যাহত থাকুক?’
নির্বাচনীকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এ দেশে ‘ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি’, ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় যে রকম নির্বাচন হয়, ঠিক সেইভাবে এখানে নির্বাচন হবে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সমালোচনা করে বলেন, উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।
এটা জানার পরও সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি কেন করা হচ্ছে, এই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মানে গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। গত সাড়ে ১৪ বছর বাংলাদেশ সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থসামাজিক উন্নতি করছে, সেটিকে নষ্ট করা। দেশবাসী এটিকে কীভাবে নেবেন, সেটাই প্রশ্ন। তাঁরা কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান; নাকি আবার সেই ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, ধরপাকড় চান—সেটা দেশের মানুষকেই বিবেচনা করতে হবে।
বিএনপি কি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়
বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? তিনি বলেন, ‘আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত থেকে এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমি কাউকে খেলতে দেব না, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে অ্যাটাক (আক্রমণ) করবে বা এই ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।’
ভারত কী করবে না করবে, তাদের ব্যাপার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, সাধারণ প্রচারণা হলো, ভারত বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে সেখানে কিছু করবে কি না। এ–সংক্রান্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও হিন্দুস্তান টাইমস–এর প্রতিবেদন ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে বোধ হয় একটা বিষয়ে একটু ভুলভাবে আপনারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন ‘‘ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, যথেষ্ট দক্ষ, তাদের কী বলতে হবে, সেটা তারা ভালো করে জানে। কাজেই ভারতের কাছে আমাদের ওকালতি করার কিছু নেই।’’ কথা এটি বলেছেন, কিন্তু আপনারা লিখেছেন, ভারত ওখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) যেয়ে আমাদের জন্য ওকালতি করবে। উনি যেটি বলছেন আর লেখার সময় শিরোনামে যেটা লেখা হয়েছে; তার মধ্যে বিরাট ফাঁক আছে। কথা যদি এভাবে টুইস্ট করা হয়, তাহলে তো কিছু করার নেই।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সদ্ভাব রয়েছে, কিন্তু ভারত সম্পূর্ণ সার্বভৌম দেশ। কাজেই তারা কী করবে না করবে, সেটি তাদের ব্যাপার। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে, এটুকু শুধু বলতে পারি। ভারত তাদের নীতিতে চলবে।’
ব্রিকসে যোগ দেব
পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার আবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্রিকসে যোগ দেব, এ কারণে যে ব্রিকস যখন প্রথম প্রস্তুতি নেয়, তখন থেকে এর সঙ্গে ছিলাম ও আছি। তবে একদম সদস্য হতে পারিনি।
প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন সহজেই কেনা যায় ও দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি, সেসব বিষয় বিবেচনা করেই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেই চলছে। একধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে। নির্বাচন যত সামনে আসবে, এ রকম প্রচারণা আরও বেশি হবে। এসব অপপ্রচারে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।